জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- ‘ওরা’ গুসকরা স্টেশন সংলগ্ন এলাকার একদল অসহায় শিশু। দু’বেলা পেট ভরে খাবার জোটেনা, পরিধানে ছেঁড়া পোশাক।
আশেপাশে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ওরা কেবল ভিড় বাড়াতে যেত, মঞ্চে ওঠার স্বপ্ন দেখতনা। সমবয়সীদের বিদ্যালয়ে যেতে দেখলেও ওরা লেখাপড়ার কথা ভাবতনা। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা যখন ওদের কুঁড়ে কুঁড়ে খেত, ওদের অবচেতন মনের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে এগিয়ে আসে ‘নতুন দিশা’।
২০১৯ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। সকাল থেকেই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’তে পরস্পরকে দেওয়ার জন্য লাল গোলাপ হাতে নিয়ে অপেক্ষারত প্রেমিক-প্রেমিকা। হঠাৎ ভেসে এলো সেই হৃদয় বিদারক খবর। জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলার শিকার হয়ে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় চল্লিশ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহীদ হয়েছেন। গোলাপের পাপড়ির বদলে শহীদের রক্তে লাল হয়ে উঠল দেশের মাটি। মুহূর্তের মধ্যে হরিষে বিষাদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল গোটা দেশ। পরস্পরকে গোলাপ দিতে ভুলে গেল প্রেমিক- প্রেমিকারা। পরিবর্তে শত্রুদের প্রতি ঘৃণা ঝরে পড়ল তাদের কণ্ঠে। সেই করুণ দৃশ্য মুখাভিনয়ের মাধ্যমে ফুটে উঠল মঞ্চে। সৌজন্যে ‘নতুন দিশা’।
গুসকরা নাট্যম পরিবেশিত সুবীর রানার ‘বিপ্লব আমাদের হাতিয়ার’ নাটকটিতে ফুটে ওঠে সমাজের পরিচিত দৃশ্য। সাময়িকভাবে অসৎ ব্যক্তিরা সমাজে দাপট দেখালেও তাদের শেষ পরিণতি হয় ভয়ংকর। সুবীর রানা সহ প্রতিটি শিল্পীর অসাধারণ অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা আদায় করে নেয়।
সংশ্লিষ্ট সংস্হার উদ্যোগে ২৫ শে জুন গুসকরা বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল হলে বহু বিশিষ্ট মানুষের উপস্থিতিতে বার্ষিক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী শুভ্রা লাহা সহ সঙ্গীতা, সিক্তা, মধুরিমা ও অন্যান্যরা। সায়ন্তন দে ও বনানী সামন্তর একক সঙ্গীত উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। বাচ্চা মেয়ে মৌলিকার একক নৃত্য এবং তার পরিচালনায় শিখা, শ্রাবন্তী, অনিন্দিতা, অয়ন্তিকাদের নৃত্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী কৌশিকির আবৃত্তি পাঠ উপস্থিত বৃদ্ধাদের একাংশের চোখে জল এনে দেয়। নৃত্যে মধুরিমা ও তার শিশুকন্যা ছিল অনন্যা। সব মিলিয়ে এক সুন্দর সন্ধ্যার সাক্ষী থাকার সুযোগ পায় গুসকরাবাসী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেসমিন সুলতানা ও মৌসম দাস।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তম কুমারের সহশিল্পী তথা বর্ধমান নাট্য কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ললিত কোনার, বিষ্ণুপদ সিনহা, অপূর্ব মুখার্জ্জী, কল্পনা হাজরা, সবিতাব্রত লাহা, সংস্হার স্হায়ী সভাপতি মণিমালা মৈত্র দাস, ডাঃ সুব্রত ঘোষ, ডাঃ শ্যামল দাস সহ বহু সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়। শুধু তাই নয় যাদের সৌজন্যে ‘নতুন দিশা’-র পাঠশালা চলছে সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের সম্মানিত করা হয়। হাতে তুলে দেওয়া হয় ছোট্ট উপহার।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলিত করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন বিশিষ্ট শিল্পী ললিত কোনার। তাকে সহযোগিতা করেন মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্যরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রতিষ্ঠালগ্ন ২০১৭ সাল থেকে সংস্থার বিভিন্ন কার্যাবলী প্রজেক্টরের মাধ্যমে পর্দায় তুলে ধরা হয়।কিভাবে সীমিত সামর্থ্যের মধ্য দিয়ে সংস্থাটি শহরের দু:স্থ ও অসহায় শিশুদের পড়াশোনায় সাহায্য করে চলেছে, তাদের মুখে খাবার খাবার ও পরনের পোশাক তুলে দিচ্ছে এবং তাদের সেলাই, অঙ্কন, নৃত্য প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী করে তোলার চেষ্টা করছে সেই সম্পর্কে উপস্থিত দর্শকরা সহজেই একটা সম্যক ধারণা লাভ করার সুযোগ পায়।
সুবীর বাবু বললেন – আমাদের লক্ষ্য সবার সহযোগিতায় ‘নতুন দিশা’ যাতে আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন কিছু দিশা দেখাতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া। আশাকরি সবার সহযোগিতায় সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। ‘মানুষ বড় অসহায় মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দায়িত্ব দাঁড়াই’ – এই বৃহত্তর স্বপ্ন সফল হবে।