সঙ্গীতা মুখার্জ্জী মণ্ডল, গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান-: ওরা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনা। ওদের কেউ মূক, বধির অথবা দৃষ্টিহীন। কেউ ঠিকমত হাঁটতে পারেনা বা স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেনা। ওরা মূলত চারদেওয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে। খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত প্রকৃতির রূপ, রঙ, রস, গন্ধ উপভোগ করার সুযোগ ওরা পায়না। প্রতি মুহূর্তে ওদের দিকে নজর রাখতে হয়, অভিভাবকরা চিন্তিত। ওরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। ওদেরও যে মন আছে, ওরাও যে নিজেদের মত করেই আনন্দ উপভোগ করতে চায় সেই খবর কেউ রাখেনা। ওদের দরকার একটু উৎসাহ।
সেইদিকে নজর রেখে তাদের প্রতি সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ৩ রা ডিসেম্বর দিনটি ‘বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। প্রতিবার আলাদা আলাদা বিষয়বস্তুর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এবছরের বিষয়বস্তু হলো ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেতৃত্বের পরিবর্ধন করা’। গোটা রাজ্যের সঙ্গে গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের আইকিউএসি ও ক্রীড়া বিভাগের যৌথ উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদা সহকারে দিনটি পালন করা হয়। এটি ছিল দ্বিতীয় বর্ষ।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য লজেন্স দৌড়, বল ছোড়া, পায়ে করে বল মারা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রায় ২০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। তাদের সঙ্গে ছিল তাদের অভিভাবকরা ছিলেন। প্রত্যেকের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ দ্যাখা যায়। এছাড়াও এইসব শিশুরা মহাবিদ্যালয়ের খেলার মাঠের একপাশে ৫০ টির বেশি সুপারি গাছ রোপন করে। যদিও লক্ষ্য ৯০ টি গাছ রোপন করা। সরবরাহের ঘাটতি থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। সফল ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. সুদীপ চ্যাটার্জ্জী। উপস্থিত ছিলেন আইকিউএসির কো-অর্ডিনেটর ড. সাবিনা বেগম, স্পেশাল এডুকেটর বিজয় গড়াই, ঝুমা দাস সহ ক্রীড়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মণীষা মণ্ডল সহ অন্যান্যরা। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে মর্যাদা সহকারে অতিথিদের বরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী চন্দ্রানী দত্ত। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন গৌরী, রুমকি, দিশা, তৃষা সহ অন্যান্যরা।
এইধরনের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য সুদীপ বাবু উদ্যোক্তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আশা করেন আগামীদিনেও তারা এই উদ্যোগ বজায় রাখবেন।