জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- এতদিন বিষয়টি সীমাবদ্ধ ছিল শহর কলকাতায়। দুর্গাপুজোর সময় বিভিন্ন দিক বেছে নিয়ে বিভিন্ন পুজো কমিটিকে পুরস্কৃত করা হয়। পুজো কমিটিগুলো পরের বছর নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে হাজির হওয়ার প্রেরণা পায়- পুরস্কার পেতে কার না ভাল লাগে? ধীরে ধীরে পুজো কমিটিগুলোকে পুরস্কৃত করার ধারাটা শহর কলকাতা ছাড়িয়ে অন্যান্য জেলা শহরে ডানা মেলে ছড়িয়ে পড়ে। কালীপুজো উপলক্ষ্যে এবার সেটা পা-রাখল শহর গুসকরায়। সৌজন্যে ত্রৈমাসিক কাহার সাহিত্য পত্রিকা এবং সহযোগিতায় গুসকরা প্রেস কর্নার। বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলোকে প্রদান করা হয় ‘কাহার’ শ্যামা সম্মাননা। গুসকরা শহরের কালী পুজোগুলিকে কেন্দ্র করে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরেই মূর্তির সাবেকিয়ানা, মণ্ডপ সজ্জায় গুসকরা শহরের কালী পুজো কমিটিগুলো তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। আলোক সজ্জার মাধ্যমে তুলে ধরা হতো বিভিন্ন পৌরাণিক বা সমসাময়িক কাহিনি। স্থানীয় ও পাশ্ববর্তী এলাকার দর্শনার্থীরা ছুটে আসে সেখানে এবং মুগ্ধ হয়।
গত ২৫শে অক্টোবর গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ি থেকে চারজন বিচারক শহরের প্রায় ২০টি পুজো মন্ডপ পরিক্রমা করেন। অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন গুসকরা ফাঁড়ির ওসি নীতু সিংহ। প্রতিমা, মন্ডপ সজ্জা, আলোকসজ্জা, পরিবেশ সচেতনতা, সৃজনশীলতা- এই পাঁচটি বিষয়ের উপর নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। বিচারকরা প্রতিটি মণ্ডপে গিয়ে নির্ধারিত বিষয়গুলি গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেন। কিন্তু গুসকরা ‘ছন্নছাড়া’ ক্লাব তাদের থিমের মধ্যে যেভাবে ফেলে আসা ছেলেবেলার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া শৈশবকে মেলে ধরেছে সেটা শুধু দর্শনার্থীদের নয় বিচারকদেরকেও মুগ্ধ করে। স্বাভাবিকভাবেই তারা ‘সেরার সেরা’ সম্মাননা লাভ করে।
এছাড়া বিবেকানন্দ সঙ্ঘ সেরা সৃজনশীলতা, উষা সঙ্ঘ ও হাটতলা সর্বজনীন সেরা প্রতিমা, জলি ফ্রেন্ডস সেরা আলোক সজ্জা, ফ্রেন্ডস সার্কেল সেরা মন্ডপ সজ্জা এবং ওপার বাংলা সেরা পরিবেশ সচেতনতার শিরোপা পায়। বিশেষ সম্মান পেয়েছে গুসকরা বীট হাউস পরিচালিত গ্রামরক্ষী বাহিনীর পুজো।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন ডিএসপি (ডিএনটি) বীরেন্দ্র কুমার পাঠক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ‘কাহার’ পত্রিকার সম্পাদক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য সাংবাদিকরা। উদ্যোক্তারা সেরার শিরোপা পাওয়া পুজো কমিটিগুলোর মন্ডপে গিয়ে উদ্যোক্তাদের হাতে শংসা পত্র ও ট্রফি তুলে দেন।
‘সেরার সেরা’ সম্মাননা লাভ করার স্বীকৃতি পেয়ে দৃশ্যত খুশি দেখাচ্ছিল ছন্নছাড়া ক্লাবের সম্পাদক কুশল মুখার্জ্জীকে। উদ্যোক্তাদের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন – এতদিন আমরা শুধু দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনের দিকে গুরুত্ব দিতাম। পুরস্কার পাওয়ার পর প্রতিটি পুজো কমিটি সার্বিকভাবে সমস্ত বিষয়ের দিকে নজর দেবে। সমসাময়িক সমস্যা ও তার প্রতিকার নিয়ে হয়তো মণ্ডপসজ্জা করবে। এতে দিনের শেষে লাভ হবে সমাজের।
কাহার পত্রিকার সম্পাদক প্রদীপ বাবু বললেন – শুধু দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনের নয় পুজো যে সমাজসচেতনামূলক বিষয় হয়ে উঠতে পারে সেটা সামনে আনার জন্য প্রথম বারের জন্য আমরা এই উদ্যোগ নিই। গুসকরার সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের এলাকার মানুষও এখানে ঠাকুর দর্শন করতে আসেন। এবার তারাও হয়তো নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সমাজসচেতনার পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তাহলেই আমাদের এই উদ্যোগ সার্থক হবে।