জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরাঃ- আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা যাইহোক না কেন, সাধারণ মানুষের চোখে শহর হলো ঘিঞ্জি এলাকা। জনসংখ্যার চাপে সেখানে নাই কোনো ফাঁকা জায়গা। সবাই ব্যস্ত। সব ধরনের দূষণ নিত্য সঙ্গী হয়ে ওঠে। ব্যতিক্রম নয় গুসকরা পুরসভা।
১৯৮৮ সালে ১ লা মার্চ গড়ে ওঠে গুসকরা পুরসভা। শহরের পরিবর্তে বর্ধিষ্ণু গ্রাম বলাই ভাল। গ্রামের সমস্ত বৈশিষ্ট্য তখনও বজায় ছিল। ধীরে ধীরে শহরের পরিধি বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোকসংখ্যা, প্রায় চল্লিশ হাজার। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আশায় গ্রাম থেকে এসে অনেকেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে গুসকরায়।
দীর্ঘদিন ধরেই গুসকরা শহরে আছে স্কুল, কলেজ, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সব্জী ও পশুর হাট ইত্যাদি। মানুষের প্রয়োজনে গুসকরার একাধিক জায়গায় গড়ে উঠেছে বাজার। দীর্ঘদিন ধরেই আউসগ্রাম, মঙ্গলকোট ও ভাতার ব্লকের একটা বড় অংশ বাসিন্দার কার্যত ‘ভাতঘর’ হলো গুসকরা। আবার গুসকরা শহরের বুক চিড়ে চলে গ্যাছে সাহেবগঞ্জ লুপলাইন। জীবিকার সন্ধানে বহু মানুষ ছুটে আসে শহরে। ফলে শহরের বুকে নিত্য চাপ লেগেই থাকে এবং সঙ্গী হিসাবে আবির্ভাব ঘটে দূষণের।
দূষণ রোধে পুরসভার ভূমিকা প্রশংসনীয়। সাফাই কর্মীরা নিয়মিত দু’বেলা রাস্তাঘাট পরিষ্কার করে চলেছে। আকৃতিগত অবস্থানের জন্য নিকাশী সমস্যা থাকলেও ড্রেনগুলো প্রায়শই পরিস্কার করা হয়। সেই কাজ সরেজমিনে তদন্ত করতে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সহ অন্য কাউন্সিলাররা মাঝে মাঝে মাঠে নামে। ‘সুডা’-র কর্মীরাও সচেতন। সকাল হতে না হতেই আবর্জনা সংগ্রহকারী পুরসভার গাড়ি হাজির হয়ে যায় মানুষের দরজায়। বসত ভিটের জৈব ও অজৈব বর্জ্য পদার্থ তারা সংগ্রহ করে। সমস্যা শুরু হয় এখান থেকেই। এই একটা জায়গাতেই বড় অসহায় দ্যাখা যায় পুর কর্তৃপক্ষকে। শহরের চারপাশে গড়ে ওঠা সবুজ ক্যানভাসের উপর ফুটে ওঠে একটুকরো বিবর্ণ ছবি।
ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যাকে সঙ্গী করেই পথচলা শুরু হয় গুসকরা পুরসভার। ছত্রিশ বছর পরেও হয়নি সমস্যার সমাধান। শুধুই প্রতিশ্রুতি। লোকসংখ্যা কম থাকায় প্রথমদিকে সেভাবে সমস্যা বোঝা না গেলেও বর্তমানে সেটা বেড়েই চলেছে।
ওয়ার্ড হিসাবে অনেকেই হয়তো বলতে পারবেনা, কিন্তু গুসকরা রটন্তীতলা জেলার বাইরেও বহু মানুষের কাছে পরিচিত। তার পাশেই গড়ে উঠেছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড। পূর্ব ও উত্তর দিকে জনবসতি, দক্ষিণে কলেজ ও একটি সরকারি দপ্তর। সমস্ত শহরের আবর্জনা সেখানে জমা হয়। ফাঁকা জায়গায় পড়ে থাকে। চারদিকে নাই কোনো বেড়া। অনেক সময় সেখানে কুকুর বা শুয়োর বিচরণ করতে দ্যাখা যায়। শুধু দুর্গন্ধ নয়, দৃশ্য দূষণও ঘটে। যার জন্য কাছাকাছি থাকা বাসিন্দাদের এমনকি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বিশেষ বিশেষ তিথিতে রটন্তীতলায় ভিড় লেগেই থাকে। এখন চলছে রটন্তী পুজো এবং বসেছে মেলা। ফলে ভিড়ের চাপ বেশি। দৃশ্য দূষণ ও পরিবেশ দূষণের সাক্ষী থাকতে হয় সবাইকে। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে মেলা উপভোগ করতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য – ট্যাক্স দেব অথচ দুর্গন্ধের জন্য টিঁকতে পারবনা এ কেমন পুরসভা? দীর্ঘদিন ধরেই শুনে আসছি এবার সমস্যার সমাধান হবে, কিন্তু হচ্ছেনা। ক্ষোভ ঝরে পড়ে তাদের কণ্ঠে। এমনকি মেলায় আসা মানুষদেরও ক্ষুব্ধ হতে দ্যাখা যায়।
কথা হচ্ছিল পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জীর সঙ্গে। তিনি বললেন – সমস্যা এবং মানুষের ক্ষোভ সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। পাকাপোক্ত কোনো ব্যবস্থার গ্রহণের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন পুরসভার তহবিলে সেই পরিমাণ ফাণ্ড নাই। সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের বিধায়কের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত স্থায়ী সমাধান করার চেষ্টা চলছে।