জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- ৩ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে যখন কোনো দল ৫২ রান করে তখন যেকোনো লেভেলের সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলায় মনে হয় স্কোরবোর্ডে ২০০ রান ওঠাটা নিছক কয়েকটা ওভারের ব্যাপার। মাঠে তখন চার-ছয়ের বন্যা চলছে। সঙ্গে ক্যাচ মিস ও নিম্নমানের ফ্লিডিংয়ের প্রদর্শন। ২০ ওভারের শেষে কত রান উঠবে সেই হিসেব করতে শুরু করেছে দর্শকরা। ঠিক তখনই চমক। বল হাতে বিপক্ষ দলের বাঁহাতি স্পিনার অভিজিতের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এতক্ষণ যে দু’জন ব্যাটসম্যান ক্রিজে দাপট দ্যাখাচ্ছিল তারা গ্যালো কুঁকড়ে। যাবেই বা না ক্যানো! ৪ ওভার বল করে ৯ রানের বিনিময়ে তিনি দখল করেন ৪ টি উইকেট। এর মধ্যে ২ ওভার মেডেন, তিনি কোনো রানই দেননি। ক্যাচ মিস না হলে হয়তো ৭ টি উইকেট জমা পড়ত তার ঝুলিতে। যদিও নিজ দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার জন্য অভিজিতের দল হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
১২ ই ফেব্রুয়ারি গুসকরা বিষাণ অ্যাথলেটিক ক্লাব পরিচালিত এবং গুসকরা কলেজ মাঠে আয়োজিত স্বর্গীয় নিমাই চন্দ্র দাস ও স্বর্গীয় শিবদাস গুপ্ত স্মৃতি আন্তঃজেলা টি-২০ ডিউজ ক্রিকেট লিগ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চম বর্ষের চূড়ান্ত পর্বের খেলায় মুখোমুখি হয় বর্ধমানেরই দুটি ক্লাব – শিবাজী সংঘ ও বিনোদী মাধব সামন্ত কোচিং ক্লাব। টসে জিতে বিনোদী মাধব ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিপক্ষ দলের নিম্নমানের ফ্লিডিংয়ের সুযোগ নিয়ে শিবাজী সংঘ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পারভেজের ২৮ বলে ৫৮ রান ও আজাহরের ২৭ বলে ৫১ রানের সুবাদে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০০ রান করে। ক্যাচ মিসের জন্য দু’জনেই একাধিক বার ‘জীবন’ ফিরে পায়। যদিও এসব খেলার অঙ্গ। জয়ের জন্য বিনোদী মাধব দলের দরকার ছিল ২০১ রান। কিন্তু বিপক্ষ দলের বোলারদের দাপটে তারা ১৮.৪ ওভারে সব ক’টি উইকেট হারিয়ে তারা মাত্র ১১৮ রান করে। ৮২ রানে শিবাজী সংঘ জয় লাভ করে। বিনোদী দলের মাত্র দু’জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান সংগ্রহ করে। ম্যাচটি পরিচালনা করেন দুই সুপরিচিত আম্পায়ার সুবীর নন্দন ও সুব্রত কুন্ডু।
এর আগে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে উভয় দলের খেলোয়াদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। জাতীয় সঙ্গীত ও নিরবতা পালনের পর ম্যাচ শুরু হয়।
ব্যাট-বলে দাপট দেখিয়ে শিবাজী সংঘের পারভেজ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ব্যাট হাতে তিনি ২৯ বলে ৫৯ রান ও বল হাতে ২ উইকেট দখল করেন। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন শিবাজী সংঘের পরমজিৎ সিং। উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিজয়ী ও বিজিত দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন।
প্রসঙ্গত গত গত ১১ ই ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের আটটি দল নিয়ে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। খেলাধুলার সঙ্গে সঙ্গে আয়োজক ক্লাবটি দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির, বৃক্ষরোপণ, দুস্থদের বস্ত্রদাবিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে চলেছে।
উপস্থিত ছিলেন গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী, ভাইস চেয়ারম্যান বেলি বেগম, প্রাক্তন অধ্যাপক শিশির ঘোষ, বিসিসিআইয়ের আম্পায়ার প্রেমদীপ চট্টোপাধ্যায়, সিএবি অ্যাপেক্স কাউন্সিল সদস্য সুশান্ত ব্যানার্জ্জী সহ শহরের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিষাণ ক্লাবের সদস্যরা।
শুধু ক্রিকেট নয় বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য কুশল বাবু বিষাণ ক্লাব কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আগামী দিনও নিজের সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সহ উপস্থিত প্রত্যেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিষাণ অ্যাথলেটিক ক্লাবের সম্পাদক সৌগত গুপ্ত বলেন – সবার সহযোগিতায় আমরা এত বড় একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পেরেছি। আশাকরি আগামী দিনেও আমি প্রত্যেককে পাশে পাব।
এত সুন্দর একটা ম্যাচে উপস্থিত দর্শকদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। অথচ গুসকরা ও তার আশেপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলার চল ছিল। বিভিন্ন কারণে সেই সব দিন আজ অস্তমিত। এরজন্য উপস্থিত মুষ্টিমেয় দর্শকদের একটা অংশকে আফসোস করতে দ্যাখা যায়।