eaibanglai
Homeএই বাংলায়অবশেষে মল্লিকার পুনর্বাসন!!

অবশেষে মল্লিকার পুনর্বাসন!!

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে ঘোষিত হলো পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কমিটি। ১২ ই এপ্রিল বর্ধমান শহরের এন এক্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জেলা তৃণমূল কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। পঁচিশ জন জেলা সহ-সভাপতির অন্যতম হলেন গুসকরার মল্লিকা চোংদার।

কার্যত ২০১৮ সাল থেকে দলের মধ্যে কোণঠাসা ছিলেন গুসকরা পুরসভার টানা চারবারের কাউন্সিলার মল্লিকা চোংদার। বিতর্কিত মন্তব্য করার বিষয়ে কুখ্যাতি ছিল তার। এমনকি দলের নেতারাও তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। পুরসভার অন্দরেও দলের কাউন্সিলারদের সঙ্গে তিনি বারবার বিবাদে জড়িয়েছেন। অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়ার পরই রাজনীতিতে তিনি পিছু হঠতে থাকেন। অনুব্রতের সুরে সুর মিলিয়ে গুসকরায় অনেকেই বলতে শুরু করে – মল্লিকা নাকি দলের কেউ নয়। এমনকি সিপিএম ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতারাও তার সম্পর্কে কু’কথা বলা থেকে বিরত থাকেনি। দল থেকে তাড়িয়েও দেওয়া না হলেও দলের কোনো মিটিং মিছিলে তাকে ডাকা হতোনা। বারবার অপমানিত হয়েও মল্লিকাও দলত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দেয়নি।

এই রকম টানাপোড়েনের মাঝে বিগত পুরভোটে চূড়ান্ত অপমানিত হন মল্লিকা। প্রার্থী তালিকায় তার মত ‘সিনিয়র’ লিডারের নাম থাকলেও সেটা কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। শোনা যায় বোলপুরে দলীয় সভা থেকেও তাকে নাকি বের করে দেওয়া হয়। পুরভোটে প্রচারের জন্য দল তাকে না ডাকলেও দলের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার জন্য তিনি ‘ফেসবুক’ লাইভ করেন। নতুন পুরবোর্ডের শপথ অনুষ্ঠানেও তিনি ডাক পাননি।

এইরকম পরিস্থিতিতে যখন মনে করা হচ্ছিল মল্লিকার বর্ণময় রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পুরোপুরি শেষ ঠিক তখনই গত ১৩ ই নভেম্বর বর্ধমানের দলীয় সভায় দ্যাখা গ্যালো তাকে। অনেকেই তাকে দেখে চমকে গেলেও তার পাশে তখন পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি সহ প্রথম সারির নেতারা। কেউ কেউ পুরনো সহকর্মীকে দেখে স্বাগত জানান, অতীতের স্মৃতিচারণ করেন। এমনকি, আপাতত প্রকাশ্যে না হলেও, তার রাজনীতির মূল ক্ষেত্র গুসকরা তথা আউসগ্রামেও অনেক তৃণমূল কর্মীকে খুশি দ্যাখা যায়।

তখন থেকেই কানাঘুষা চলছিল মল্লিকা হয়তো দলের মধ্যে বড় কোনো দায়িত্ব পাচ্ছে। এদিকে ঘটনার পর দীর্ঘ পাঁচ মাস কেটে গেলেও দল তাকে কোনো পদ দেয়নি। অনেকের মত মল্লিকাও যখন হতাশ হয়ে পড়ে ঠিক তখনই ঘটে পদপ্রাপ্তি।

তার পরই দ্রুত পট পরিবর্তন ঘটে। শোনা যাচ্ছে এতদিন যারা তাকে অপমান করছিল তারাই নাকি সবার আগে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। অনেকেই আবার তার পদপ্রাপ্তিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

মল্লিকার সম্পর্কে জেলা নেতৃত্বের বক্তব্য – উনি সিনিয়র লিডার এবং দলের দুর্দিনের কর্মী। মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হলেও সেসব এখন অতীত। অতীতের মতই উনি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে নিজের দায়িত্ব পালন করবেন।

অন্যদিকে মল্লিকার বক্তব্য – আজ আর কোনো বিতর্ক নয়। অতীতকে নিয়ে টানাটানিও নয়। আমি শুধু দলের হয়ে কাজ করতে চাই। দলের জেলা নেতৃত্ব সেই সুযোগ করে দেওয়ায় সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। খুব শীঘ্রই আমি জেলা সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করব এবং তার পরামর্শ মত দলের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ব। গুসকরায় দলীয় নেতৃত্ব আমাকে যেভাবে চাইবে আমি সেভাবেই তাদের পাশে থাকব। বিবাদ বা বিতর্ক নয়, আমাদের লক্ষ্য আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের সাফল্যকে বজায় রাখা।

এখন দ্যাখার অতীতের মত মল্লিকা আবার কোনো বিতর্কিত মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন কিনা। একইসঙ্গে এটাও দ্যাখার তাকে কেন্দ্র করে কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেয় কিনা। অথবা যারা তাকে ভুল পথে পরিচালনা করত তারা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে কিনা। যদিও এইসব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে মল্লিকা নারাজ। অতীতের ভুল করতে তিনি রাজী নন। তার একটাই লক্ষ্য – সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments