জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ – ৩১ শে ডিসেম্বর রাত। ঘড়ির কাঁটা তখন সবেমাত্র ১২ টার ঘর অতিক্রম করেছে। মাঝরাতেই কোথাও নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য বাজির শব্দ শোনা যাচ্ছে। কোথাও আবার নতুন বছরের প্রথম দিনেই পিকনিক করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। সবমিলিয়ে এক আনন্দ মুখর পরিবেশ।
পাশাপাশি প্রচণ্ড ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য চারদেওয়ালের মাঝে লেপ বা ব্লাঙ্কেটের নীচে আশ্রয় নিয়েছে একদল মানুষ। কারও আবার মাথার উপর ছাদ নাই, নাই শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত লেপ বা ব্লাঙ্কেট। ওরা নেই রাজ্যের বাসিন্দা।স্টেশনের যাত্রী প্রতীক্ষালয় বা গৃহস্থ বাড়ির বাইরের বারান্দা হয়ে ওঠে ওদের রাতের অস্থায়ী আস্তানা। গায়ে জড়ানো থাকে ছেঁড়া বস্তা বা কারও দান করা কম্বল।
ঠিক তখনই অন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে গুসকরা কলেজ মোড়ের বাসিন্দা সদ্য কলেজ অতিক্রম করা যুবক ইজাজ। সবাই যখন ঘুমে আচ্ছন্ন ইজাজ তখন দু’একজন বন্ধুকে সঙ্গী করে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ে। সঙ্গে থাকে কিছু কম্বল। শহরের বুকে শুয়ে থাকা সেইসব অসহায় ঘুমন্ত মানুষের গায়ে জড়িয়ে দেয় কম্বল। ঠান্ডায় তখনও যারা জেগে থাকে তারা নিজের হাতেই কম্বল নেয়। অন্যরা টেরই পায়না। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের গায়ে জড়ানো কম্বল দেখে চমকে ওঠে। হয়তো মনে মনে ভাবে – কে সেই মহামানব যে এইভাবে তাদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিচ্ছে!
এইভাবে গুসকরা স্টেশন বেশ কয়েকজন দুস্থদের গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে কম্বল। তার লক্ষ্য ছিল প্রায় ৮০ জনকে কম্বল দেওয়ার। বিভিন্ন কারণে সবাইকে সে পায়নি। ইজাজের বক্তব্য – এই অসহায় মানুষদের দেখে খুব কষ্ট হয়। যতটুকু পারি তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। ইজাজের কম্বল দেওয়ার ঘটনাটি শুনে গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন – সত্যিই খুব ভাল কাজ। নিজেদের সাধ্যমতো যদি আমরা একজন অসহায় মানুষের পাশে থাকতে পারি তাহলে খুব ভাল হয়।