সৌভিক সিকদার, গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান-: এমনিতেই চাহিদার তুলনায় যোগান কম। তার উপর বিভিন্ন কারণে কিছুদিন যাবৎ সেভাবে রক্তদান শিবির হয়নি। ফলে রাজ্যের ব্লাড ব্যাংকগুলিতে দ্যাখা যাচ্ছে রক্তের ঘাটতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতীতের মত এবারও এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি।
ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ও গুসকরা মুসলিম পাড়ার যৌথ উদ্যোগে গত ১৫ ই ডিসেম্বর গুসকরা পৌরসভা প্রাঙ্গনে আয়োজিত হয় এক স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক শাখার সহযোগিতায় শিবির থেকে মোট ৩১ ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হয়। রক্তদাতাদের মধ্যে ছ’জন ছিলেন মহিলা। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে রক্তদাতাদের হাতে একটি করে শংসাপত্র ও মেডেল তুলে দেওয়া হয়। ইচ্ছে থাকলেও বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকজন রক্তদান করতে পারেননি। এতে তাদের যথেষ্ট বিষণ্ন লাগছিল। রক্তদান শিবিরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ দ্যাখা যায়।
শিবিরটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সেখ মুন্না আজিজ, উজ্জ্বল, রণি, মোবারক, রকি, মফিজুল, আনসুর, আলি আমির প্রমুখ।
রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিবিরে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা মুখ্য সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজ উসমানী, জাতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. ইসরাইল, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক রাজু খান,
পূর্ব বর্ধমান জেলা যুগ্ম সম্পাদক মুন্না আজিজ, বীরভূম জেলা মহিলা বোর্ডের কার্যনির্বাহী সভাপতি জিয়ারুন্নিসা খাতুন সহ গুসকরা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বেলী বেগম, কাউন্সিলার মাধব সাহা, চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী সহ আরও অনেকেই।
প্রসঙ্গত সংস্থাটি গত ১৪ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাজসেবামূলক কাজ করে চলেছে। তাদের কাছে উপকৃত হয়েছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ত্রিশ সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী। নিজের দুই বছরের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রক্ত দিতে এসেছিলেন তরুণী মেহেরুন্নিসা। তিনি বললেন, এই নিয়ে আমি দু’বার রক্ত দান করলাম। আমার রক্তে যদি একজন মুমূর্ষু রুগীর প্রাণ রক্ষা পায় তাহলে আমি আমার মানবজনম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। তিনি নিকটবর্তী রক্তদান শিবিরে গিয়ে অন্যান্যদেরও রক্ত দান করার জন্য আহ্বান জানান। অ্যাডভোকেট উসমানী বললেন, বিজ্ঞান অনেক কিছু আবিষ্কার করলেও আজও রক্তের বিকল্প কিছু আবিষ্কার করতে পারেনি। একজন মানুষের রক্তই কেবলমাত্র মুমূর্ষু রুগীর প্রাণ রক্ষা করতে পারে। তাই আমি প্রত্যেককে অনুরোধ করব আপনারা এগিয়ে এসে রক্ত দান করুন এবং একটি মহামূল্যবান প্রাণ রক্ষা করুন। রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে কুশল বাবু বললেন, সত্যিই এটা এক মহতী কাজ। এরজন্য কোনো প্রশংসায় যথেষ্ট নয়। আমি চাই স্থানীয় অন্যান্য সংস্থাগুলো রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে এগিয়ে আসুক। আমাদের পক্ষ থেকে সমস্ত রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।