সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- তারা মায়েরই একটি রূপ হল নীল সরস্বতী। মায়ের এই উগ্র রূপ কিন্তু ঘরে পূজিত হয় না, এই রূপে মা শ্মশানবাসী। তাই শ্মশানেই এই রূপে মাকে পুজো করা হয়। মায়ের গায়ের বর্ণ নীল, চারটে হাত আর মায়ের মাথায় জটা রয়েছে। এই মায়ের বিগ্রহ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে খুব বেশি জায়গায় নেই। তবে হুগলি জেলার হরিপালের পশ্চিম জয়কৃষ্ণপুরের অন্তর্গত তেলিখানা মহাশ্মশানে মায়ের এই বিগ্রহ রয়েছে।
এই মায়ের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বামাক্ষ্যাপার পরম শিষ্য ভৈরবদাস জ্ঞানানন্দ বাবা বা জ্ঞান বাবা। ওনার আসল নাম হলো গোপিনাথ সিংহ রায়। পশ্চিম জয়কৃষ্ণপুরের অন্তর্গত গবাটি গ্রামে ওনার জন্ম হয়। ওনার সম্পর্কে প্রচুর লোককথন রয়েছে। হরিপালের এক বাসিন্দা বেচারাম চক্রবর্তীর কথায়, উনি বামাক্ষ্যাপার মতোই কুকুরদের খুব ভালবাসতেন এবং তার খাবারের পাতে একদিকে কুকুরের জন্য খাবার থাকতো। জ্ঞান বাবাও খেতেন আর তারসাথে একসাথে কুকুরও খেতো।
রাজু সিংহ রায় নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কথা থেকে জানতে পারি,তেলি খানার মহা শ্মশানে অবস্থিত এই নীল সরস্বতীর মন্দিরে ৩০ শে চৈত্র মায়ের পুজো হয় আর শিবরাত্রির দিনে হোমযজ্ঞ হয়। এছাড়া একুশে মাঘ জ্ঞান বাবার জন্মতিথি উপলক্ষে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে এই নীল সরস্বতী মন্দিরে বিশাল বড় পুজোর আয়োজন করা হয়। জ্ঞান বাবার জন্মতিথি উপলক্ষে এই মন্দিরে যে পুজো হয় সেই সময় পঞ্চাশ হাজারের মতো মানুষ মায়ের ভোগ পায়, সেই সময় এই মন্দিরে নরনারায়ণ সেবা হয়।
তেলিখানার মহাশ্মশানে গেলে নীল সরস্বতী ছাড়াও দেখতে পাবেন জ্ঞান বাবার পুষ্প সমাধি। সাধন ক্ষেত্র, গর্ভগৃহ, ত্রিশুল ঘর,পাগলা গারদ, কুকুরের আশ্রয়স্থল, জ্ঞান বাবার আবক্ষ মূর্তি, জ্ঞান বাবার মায়ের সমাধি এবং ত্রিশূল ঘরের মধ্যে গেলে দেখতে পাবেন জ্ঞান বাবার ব্যবহারকৃত পঞ্চ মুন্ডির মালা।