সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- একবার একজন প্রশ্ন করেছিলেন,“ বইয়ে পড়েছি যে তুরীয়ানন্দ মহারাজ এনেস্থেসিয়া ছাড়াই অপারেশন করিয়েছিলেন নিজের শরীরে। তিনি ঐ সময় মনকে ঈশ্বরে নিয়ে গিয়েছিলেন। সাধনার কোন স্তরে গেলে এটা সম্ভব।
স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ এর উত্তরে বলেন,“এটা জেনে কি করবেন? বরং নিজের সমস্যায় দৃষ্টি দিন। নিজের মনকে ইচ্ছামতো এক অবস্থা বা পরিস্থিতি থেকে অন্যত্র কিভাবে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সেটা নিয়ে ভাবুন। এই শক্তি সবার মধ্যেই আছে। নিজের অজান্তে এর ব্যবহার করেন আপনি কম-বেশি। যেমন শরীরে হঠাৎ খুব ব্যথা হলে আপনি চেঁচান। বেদান্তের ভাষায়, ঐভাবে নিজের চেতনাকে আপনি অন্নময় কোষ (শরীর) থেকে প্রাণময় কোষে নিয়ে যান ব্যথা ভোলার জন্য। কিংবা কোনো গভীর দুঃখে (মনোময়) নিজেকে বোঝান “ঈশ্বরের ইচ্ছা” বলে (বিজ্ঞানময় কোষ) নিজের চেতনাকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে। যতক্ষণ উচ্চ আধ্যাত্মিক স্তরে না উঠছেন, এই কাজ সচেতন ভাবে প্রয়োগ করে নিজেকে কিছুটা রিলিফ দিতে পারেন।”
মহারাজ বলেন,“আপনার চেতনা যখন দেহ (body) এ থাকে – খাওয়া, স্নান, আরাম ইত্যাদি কাজে -তখন আপনি অন্নময় কোষে। উৎসাহ, চনমনে ভাবের সময় প্রাণময় কোষে। যখন গভীরভাবে চিন্তা করছেন বা শিল্পীসুলভ আবেগে, তখন আপনি মনোময় কোষে। আধ্যাত্মিকভাবের সময় আপনি বিজ্ঞানময় কোষে। আর যখন মন আনন্দে অধীর হয়ে সবকিছু ভুলে যায় সেইসময় আপনার স্থিতি আনন্দময় কোষে। এই যে নিজের চেতনাকে একস্তর থেকে অন্যস্তরে নিয়ে যাওয়া, এটা আগে সচেতনভাবে অভ্যাস করুন। কীভাবে? টিভি দেখার সময় হঠাৎ অন্য কিছুর চিন্তা শুরু করুন। কোনও ভাল বা আনন্দের স্মৃতি। অফিসে বসের বা বাড়িতে স্ত্রীর বকুনি খেয়ে মনে দুঃখ? মনে-মনে মন্ত্রজপ শুরু করুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মন অন্যস্তরে চলে যাবে, দুঃখও দূর। কাগজে মারামারির খবর পড়ে মন খারাপ? পড়া বন্ধ করে ইউটিউবে গান শুনতে থাকুন। মন দু’-মিনিটেই অন্যস্তরে চলে যাবে। বাথরুমে মনের আনন্দে স্নান করুন গান গাইতে-গাইতে। এবার বেরিয়ে এসে ঠাকুরঘরে বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন তাঁর সাথে, নিজের মন শান্ত করে। এভাবে আপনি অন্নময় থেকে বিজ্ঞানময়ে চলে গেলেন সচেতনভাবে। অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। অস্বস্তি। কল্পনায় চলে যান দক্ষিণেশ্বরে। ঠাকুরের সাথে কথা বলুন (অন্নময় থেকে বিজ্ঞানময়ে)। কিংবা দুর্গাপুজোয় ধুনুচি নাচ শুরু করুন। (অন্ন থেকে মনোময়ে) এরকম দিনে ২-৩ বার অভ্যাস করুন। নিজেই ঠিক করুন মনকে কোন অবস্থা (ঘটনা) থেকে কি অবস্থায় নিয়ে যেতে চান আপনি। উপরে যেগুলি দেওয়া হয়েছে সেগুলি ছাড়াও অন্য ঘটনা বা অবস্থা বেছে নিন। “
এরপর মহারাজ বলেন, এমনটা করলে কী লাভ হবে!
মহারাজের কথায়,“মনের উপর নিয়ন্ত্রণ, বাড়বে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আনন্দে থাকতে পারবেন আগের চেয়ে। মজার খেলা এটা। খেলতে-খেলতে জীবনের অনেক মানসিক সমস্যা মিটে যাবে। এই অভ্যাস আপনাকে জপ-ধ্যানের সময়ও সাহায্য করবে। জীবন-রহস্যের এক চাবিকাঠি আপনার হাতে এসে যাবে।”





