সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ- দোল পূর্ণিমায় নয়, প্রাচীণ প্রথানুযায়ী ঠিক তার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ তিথিতে শ্রী শ্রী শ্যামসুন্দরের দোলযাত্রা পালিত হয় বাঁকুড়ার ইন্দপুরের ব্রজরাজপুরে। বাংলা ১০৫২ সালে এই গ্রামে শ্যামসুন্দর মন্দির প্রতিষ্ঠা ও তারপরে দোল উৎসব শুরু থেকে এই নিয়মই চলে আসছে। গ্রামবাসীদের সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, চৈতন্য পার্ষদ শ্রী দাসগদাধর পৌত্র মথুরানন্দ গোস্বামী, সুদূর বৃন্দাবন থেকে শ্যামসুন্দর ও রাধিকার বিগ্রহ নিয়ে এসে তৎকালীন খাতড়ার তথা ধলভূমের রাজা জগন্নাথ ঢোলের সহায়তায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রজরাজপুরে প্রভু শ্যামসুন্দরের দোলযাত্রা হল মধ্যম দোল, অর্থাৎ দোলপূর্ণিমার দিন না হয়ে ব্রজরাজপুরে দোল হয় প্রতিপদ তিথিতে বা বৃন্দাবন বা নবদ্বীপের দোলের পর দিন। প্রাচীণ রীতি মেনে এবছরও দোল উৎসবের দিন অপরাহ্নে প্রভু শ্রী শ্রী শ্যামসুন্দর, শ্রীমতী রাধিকা ও সখী ললিতার বিগ্রহ হরিনাম সংকীর্তনের মাধ্যমে মহা সমারোহে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত দোল মন্দিরে। প্রাচীন ধারাকে অক্ষুন্ন রেখেই গোস্বামীরা আজও পার্শ্বস্থ গ্রাম তেঁতুলিয়ার তন্তুবায় সম্প্রদায়ের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানান প্রভুর পালকি বহন করার জন্য, তদানীন্তন খাতড়ার রাজা তেঁতুলিয়ার লায়েকদেরই সম্প্রদান করেছিলেন প্রভুর পালকি বহন করার দ্বায়িত্ব। এমনকি প্রাচীন রীতি অনুসারে তাঁরাই দোলের দিন গোস্বামীদের বাড়ি বাড়ি জানিয়ে আসেন যে প্রভুর দোলযাত্রার সময় উপস্থিত, আপনারা আগমন করুন। সুসজ্জিত পালকি কাঁধে করে, শ্রী শ্রী শ্যামসুন্দর, শ্রী রাধিকা ও ললিতার বিগ্রহ নিয়ে যাওয়া হয় দোল মদিরে, প্রথা অনুসারে পালকির সামনে লাঠিহাতে যায় তেঁতুলিয়ার যায় লায়েকরা। দোল মন্দিরে বিগ্রহ রাখার পর সুসজ্জিত মন্ডপে প্রভুর চরণে আবির দিয়ে শুরু হয় দোল উৎসব। প্রভু শ্যামসুন্দর, রাধারানী ও সখী ললিতার বিগ্রহ শোভিত হয় নানাবিধ অলংকার ও উজ্জ্বল পোশাকে। বহু দূরদূরান্ত থেকে কাতারে কাতারে মানুষজন ভিড় জমান এই দোল উৎসব দেখার জন্য। নর-নারীরা আবির খেলায় মেতে, নানা বর্ণে শোভিত হয়ে, হরিনাম সংকীর্তনের ভক্তিরসে নিমজ্জিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রভুর উদযাপন করেন দোলযাত্রা। দোল উপলক্ষে বিরাট এক মেলা বসে এই গ্রামে। গ্রাম-ষোলআনা ও শ্যামসুন্দর সেবা কমিটির পক্ষ থেকে যাত্রা, বালিকা সঙ্গীত, পালাকীর্তন, বাউল গান প্রভৃতির আয়োজন করা হয়। গ্রামবাসী পার্থ সারথী গোস্বামী বলেন, ৩৭৫ বছরের প্রাচীণ ধারাকে অক্ষুন্ন রেখে এখানে দোল উৎসব পালিত হয়। দোল উপলক্ষ্যে প্রতিবছর নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।