জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,হুগলিঃ- মঞ্চে তখন কয়েকজন অতিথি এবং দর্শকাসনে পঞ্চাশাধিক কবি-সাহিত্যিক। তাদের সামনে সাহিত্যপ্রেমী ‘বাসনা’ দেবীর সুযোগ্য সন্তান আশীষ করের কণ্ঠে ঝরে পড়ছে বাল্মীকির সেই শ্লোক-
“মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
যৎ ক্ৰৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্॥”
যেটি আদিশ্লোক হিসাবে যুগ যুগ ধরে গণ্য হয়ে আসছে। এই শ্লোকের হাত ধরে এক ভাবগম্ভীর অথচ অনাড়ম্বর পরিবেশে গত ৯ ই এপ্রিল হুগলির ভদ্রকালী এসোসিয়েশন প্রাইমারি ইউনিট লাইব্রেরীতে প্রথমবারের জন্য দিনের আলোর মুখ দেখে ‘বাসনা সাহিত্য’ পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাসনা দেবীর মনের বাসনা পূরণ হলো।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সৌরভ দত্ত ও আয়ুশ মহাদানি। তারপর একে একে আবৃত্তি পাঠ করেন বাচিক শিল্পী সুপর্ণা ঘোষ সহ উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকরা। নবীন কবি প্রতিভাদের সামনে প্রবীণ কবিরা তাদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার উজার করে দেন এবং বাংলা কাব্য-সাহিত্যের উন্নতির স্বার্থে তাদের গভীর সাধনায় মগ্ন হওয়ার পরামর্শ দেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশিস মুখোপাধ্যায়।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলিত করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন পত্রিকা গোষ্ঠীর কর্ণধার আশীষ কর ও বিশিষ্ট কবি শিবপ্রসাদ দাস। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে উপস্থিত প্রত্যেক কবি-সাহিত্যিকের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক সম্মাননা ও সাহিত্য পত্রিকা। পত্রিকাটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন বিশিষ্ট শিল্পী সায়ন্তিকা প্রামাণিক।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার তথা কবি শিবপ্রসাদ দাস। উপস্থিত ছিলেন উত্তরপাড়া বলাকা ক্লাব সম্পাদক সমীর ভট্টাচার্য, বাসনা সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠীর সভাপতি অভিজিৎ ব্যানার্জী ও উপদেষ্টা মিতা চ্যাটার্জী। সঙ্গে ছিলেন সাহিত্যিক ড. অলোকানন্দা গোস্বামী ও সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক – বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেশ বৈদ্য, মুনমুন রায়চৌধুরী, স্বপন কুমার চট্টোপাধ্যায়, সৌরভ দত্ত, প্রদীপ সেনগুপ্ত, সত্যজিৎ, সায়ন্তি কর, মধুমিতা ব্যানার্জী, মুনমুন মুখার্জ্জী প্রমুখ।
উপস্থিত কবি, সাহিত্যিক সহ প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ‘বাসনা আবৃত্তি আকাদেমী’-র প্রতিষ্ঠাতা তথা পত্রিকা গোষ্ঠীর কর্ণধার আশীষ কর বললেন – আমার মায়ের স্মৃতিতে আমি এই কবিতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলি। আমার সাহিত্যপ্রেমী মায়ের ইচ্ছে ছিল আমি যেন একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করি। সবার সহযোগিতায় আজ মায়ের বাসনা পূরণ হলেও আজ পাশে ‘মা’ নেই। আবেগে কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে যায় আশীষ বাবুর। গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ে দু’ফোটা জল। মুহূর্তের মধ্যে নেমে আসে নীরবতা।