নীহারিকা মুখার্জ্জী চ্যাটার্জ্জী, হরিপাল, হুগলি -: মানুষের বিনোদনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হলো নাটক। একটা সময় কলকাতার একাধিক ‘হলে’ রমরমিয়ে মঞ্চস্থ হতো নাটক। দিনের শেষে নাট্যপ্রেমী মানুষদের ভিড় সেখানে লেগেই থাকত। কোনো কোনো নাটকের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে দর্শকদের দাবি মেনে একইদিনে কর্তৃপক্ষ একাধিক ‘শো’য়ের আয়োজন করতে বাধ্য হতো। কলকাতা শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন জেলা শহরেও গড়ে ওঠে সৌখিন নাট্যদল। উৎসবের সময় তাদের পরিবেশিত নাটক উপভোগ করার জন্য দর্শক মুখিয়ে থাকত।
কিন্তু সেসব আজ অতীত। বর্তমান ব্যস্ততার যুগে মানুষের রুচির বদল ঘটেছে। সান্ধ্যকালীন টিভি সিরিয়াল নাটকের জায়গা দখল করেছে। আর্থিক ও অন্যান্য কারণে বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক নাটকের দল। একসময় যেসব হলগুলো দর্শকদের ভিড়ে জমজমাট ছিল আজ সেখানে বিরাজ করছে শ্মশানের নীরবতা।
তার মাঝেই স্রোতের বিপরীতে হেঁটে স্থানীয় একদল নাট্য পাগল অভিনেতার সৌজন্যে একগুচ্ছ নাটক পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে সম্প্রতি হগলির হরিপালের মোশাইমোড় ‘কৈলাস চন্দ্র সাধারণ পাঠাগার মঞ্চ’-এ নাট্যপ্রেমী দর্শকদের উপস্থিতিতে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটল ‘আত্মজ’ নামক একটি নাট্য দলের।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সৃজনী দাস। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন উপস্থিত নাট্যব্যক্তিত্ব। ‘ঘুঙুর ডান্স অ্যাকাডেমি’-র শিক্ষিকা মৌমিতা ঘোষালের পরিচালনায় পরিবেশিত নৃত্যনাট্য ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। এরপরই পরিবেশিত হয় তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের নাটক। প্রথম নাটকটি ছিল হরিপাল ‘আত্মজ’ প্রযোজিত ও চিন্ময় চক্রবর্তী নির্দেশিত সোক্রাতেস, দ্বিতীয়টি ছিল রাণীকুঠী ‘জিয়নকাঠি’ প্রযোজিত ও কল্লোল মুখার্জ্জী নির্দেশিত ‘আত্মরতি’ এবং তৃতীয়টি ছিল হরিপাল ‘আত্মজ’ প্রযোজিত ও তরুণ কুমার ঘোষ নির্দেশিত মনোজ মিত্রের ‘মহাবিদ্যা’।
হরিপাল ‘আত্মজ’ দলের পক্ষ থেকে দুটি নাটকে অভিনয় করেছেন শিপ্রা চক্রবর্তী, অহনা ঘোষ, প্রীতিকা সাউ, ঐশীক চক্রবর্তী, স্পন্দিতা দে, অন্বয় দে, পার্থ ঘোষ, নবকুমার সরকার, মনোজ মালাকার, রাজেশ ব্যানার্জ্জী, চিন্ময় চক্রবর্তী, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, চিন্ময় মজুমদার ও রবিশঙ্কর মুখার্জ্জী প্রমুখ। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভূমিকায় অসাধারণ দক্ষতার ছাপ রাখেন।
রূপসজ্জায় সেখ ইব্রাহিম, শব্দ প্রক্ষেপণে রিন্টু চক্রবর্তী ও কার্তিক দাস, আলোক প্রক্ষেপন জয়দেব দাস, আবহ সৃষ্টি ও প্রক্ষেপন শুভঙ্কর সরকার, পোশাক নির্মাণ মোনালিসা বর্মন, মঞ্চ নির্মাণ জয়কালী ডেকোরেটর, মঞ্চ পরিচালনা করেছেন সুভাষ কর্মকার। এছাড়াও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আরও অনেকেই। পাশাপাশি দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে অন্যমাত্রা দেয়।
‘আত্মজ’-র অন্যতম উদ্যোক্তা অন্বয় দে বললেন, নাট্যপ্রেমী দর্শকদের নাট্য পিপাসা মেটানোর লক্ষ্যে আমাদের এই উদ্যোগ। আশাকরি আমরা সফল হব, সবার ইচ্ছে পূরণ করতে পারব।