নীহারিকা মুখার্জ্জী চ্যাটার্জ্জী, হুগলি ও হাওড়া-: আদালতের বাইরে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের সম্মতিতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ, দাম্পত্য কলহ সহ বেশ কিছু দেওয়ানি মামলার বিচার কম খরচে ও দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ১৯৮৭ সালে ভারতে লোক আদালত চালু হয়। বিচারপতির সঙ্গে ‘বেঞ্চ জাজ’ হিসাবে আইনজীবী, সাংবাদিক, সমাজসেবী, শিক্ষক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা লোক আদালতের ‘বেঞ্চ জাজ’ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই লোক-আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জমে থাকা মামলার পাহাড় কমাতে গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর সারাদেশ জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় লোক আদালত।
দেশের বিভিন্ন নিম্ন আদালতের সঙ্গে হাওড়া জেলা ও দায়রা বিচারক তথা জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান শ্রীমতী সোনিয়া মজুমদারের নেতৃত্বে এবং জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের সচিব সুপর্ণা সরকারের পরিচালনায় হাওড়া জেলায় ২৬ টি বেঞ্চ বসে। এদের মধ্যে জেলার সদর আদালতে ২৩ টি এবং উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে ৩ টি বেঞ্চ হয়।
হাওড়া জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের অফিস মাস্টার প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য জানান, এদিন জাতীয় লোক আদালতে নথিভুক্ত মামলা ছিল ৪,২৫১ টি। নিষ্পত্তি ঘটেছে ৩,৮৪১ টি মামলা। এইসব মামলায় অর্থের পরিমাণ ৮ কোটি ৭ লক্ষ টাকার বেশি ।
হাওড়া জেলার সদর আদালতে জাতীয় লোক আদালতের ১৯ নং বেঞ্চে বিচারক অসীম কুমার দেবনাথের নেতৃত্বে দুই সদস্যর বেঞ্চ ছিল। এই বেঞ্চে সমাজকর্মী হিসাবে ‘মেম্বার জাজ’ হয়েছিলেন ‘হাইকোর্ট সংবাদদাতা’ মোল্লা জসিমউদ্দিন।
এই বেঞ্চে এক্সিস ব্যাঙ্কের পক্ষে সরজিৎ বাগ, কৌশিক ভট্টাচার্য প্রমুখ ছিলেন । এই বেঞ্চে এক্সিস ব্যাঙ্কের ঋণখেলাপীদের নিয়ে শুনানি চলে ও বেশিরভাগ মামলার নিষ্পত্তি ঘটে।
এছাড়া হাওড়া জেলা আদালতের অন্যান্য বেঞ্চে ট্রাফিক আইন, মানি স্যুট, টাইটেল স্যুট, বন্ধন ব্যাংক, এনজিআর, বিদ্যুৎ, প্রভৃতি বিষয়ক মামলার নিস্পত্তি ঘটে। জানা গেছে উভয় পক্ষের সম্মতিতে এদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ মামলার মীমাংসা হয়।
পাশাপাশি এইদিন হুগলি জেলা ও দায়রা বিচারক (জেলার জাতীয় লোক আদালতের চেয়ারম্যান) শান্তনু ঝার নেতৃত্বে ও জেলা জাতীয় লোক আদালতের সচিব ( বিচারক) শ্রীমতী মানালি সামন্ত এর পরিচালনায় শ্রীরামপুরে জাতীয় লোক আদালতের ৯ টি বেঞ্চ বসে। এছাড়া চুঁচড়ায় ৯ টি, আরামবাগে ৬ টি ও চন্দননগরে ৩ টি – সবমিলিয়ে হুগলি জেলায় ২৭ টি বেঞ্চ বসেছিল বলে জানান হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ এর অফিস মাস্টার সাহানা খাতুন।
প্রয়াত বিচারপতির পুত্র তথা ‘হাইকোর্ট সংবাদদাতা’ মোল্লা জসিমউদ্দিন, যিনি এর আগেও দক্ষতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন, বলেন- সাংবাদিকতার বাইরে সত্যিই এটা এক আলাদা অভিজ্ঞতা। এই বেঞ্চে তাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।