eaibanglai
Homeএই বাংলায়"টাইপকাস্ট হতে চাই না,নানা শেডের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই"--সুমন কুন্ডু

“টাইপকাস্ট হতে চাই না,নানা শেডের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই”–সুমন কুন্ডু

সঙ্গীতা চৌধুরীঃ– জগৎজননী মা সারদা থেকে যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ এই দুই ধারাবাহিকে রামকৃষ্ণ চরিত্রে অভিনয় করে আইকনিক হয়ে উঠেছেন অভিনেতা সুমন কুন্ডু। দর্শকের চোখে আজ তিনিই ঠাকুর, তার জীবন্ত অভিনয় কাঁদিয়েছে লক্ষ লক্ষ দর্শককে! কিন্তু কীভাবে শুরু হয়েছিল তার অভিনয়ের পথ চলা?

২০০৩ সাল থেকে সুমন থিয়েটার করছেন, সে সময় তিনি ভেবে ছিলেন চাকরি করার পাশাপাশি থিয়েটার করবেন, কিন্তু একটা সময় পরে তিনি থিয়েটারের মধ্যে এতটাই ইনভল্ভ হয়ে গেলেন যে, থিয়েটার ছেড়ে অন্য কিছু করা তার পক্ষে পসিবল ছিলো না। তখন থিয়েটারে অভিনয় করাটাকেই নিজের পেশা বানিয়ে নিলেন। এমনকি এই থিয়েটারে অভিনয় করবার জন্য তার বাবার সাথে তার মনোমালিন্য পর্যন্ত শুরু হলো! কিন্তু অভিনয় যে তার প্রাণ, তাই সেটা তিনি ছাড়তে পারলেন না। অনেকেই হয়তো জানেন না ছোটপর্দায় অভিনেতার প্রথম অভিনীত চরিত্রটি ছিলো নেগেটিভ শেডের। ‘খুঁজে বেড়াই কাছের মানুষ’ ধারাবাহিকে চাঁদু চরিত্র করেছিলেন তিনি, জি বাংলার এই ধারাবাহিকে সেই সময় চরিত্রটি মারাত্মক রকমের হিট হয়েছিলো, তারপর সেই চাঁদু চরিত্রের বেড়াজাল ভেঙে তিনি হয়ে উঠলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব! খুব কি সহজ ছিলো সে পথ? জানবো অভিনেতার মুখ থেকেই।

১। অভিনয় করতে গিয়ে বাবার সাথে মতবিরোধ হয়েছিলো ?

সুমন কুন্ডু:- হ্যাঁ ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাবা আমার সাথে একপ্রকার কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ডিরেক্টলি কোন কথা বলতেন না, ২০০৭ সালের পরেও খুব সামান্যভাবেই তিনি কথা বলতেন।

২। এতকিছুর পরেও থিয়েটারকেই বেছে নিলেন কেন ?

সুমন কুন্ডু:- থিয়েটারকে বেছে নিলাম কারণ অন্য কোন পেশায় আমার আর ইন্টারেস্ট থাকছিলো না। একরকম অদম্য জেদ ইচ্ছা থেকেই আমি এই পেশাকে গ্রহণ করলাম,ভেবে দেখলাম আমি থিয়েটারটুকুই পারি সেটা আগেও করেছি এখনও করে যাচ্ছি, জানি না ভবিষ্যতে ঈশ্বর কোন জায়গায় নিয়ে যাবেন! অভিনয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছি এই অভিনয়ের তো কোন পারফেকশন থাকে না। ঠাকুর বলেছেন যতদিন বাঁচি ততদিন শিখি আর আমি বলি ‘জিনা ইহা মরনা ইহা ইস্কে সিভা জানা কাহা’ সো এরকমই একটা ব্যাপার আর এই ভাবেই আমি চালিয়ে যাচ্ছি।

৩। আপনার প্রথম কাজ তো ওয়েব সিরিজে ?

সুমন কুন্ডু:- হ্যাঁ , ২০০৫ সালে কঙ্কনা সেন শর্মা একটি ওয়েব সিরিজ করেছিলেন কর্কট রাশি, সেখানেই আমার প্রথম কাজ, ছবিটির ডিরেক্টর ছিলেন সোহাগ সেন, তিনিই ছিলেন আমার মেন্টর, তাই প্রথমবারে চান্স পেতে খুব একটা অসুবিধা হয় নি, যদিও কাজটা বিশাল কিছু নয়। প্রোটাগনিস্ট ক্যারেক্টর আমি করি নি,খুব নমিনাল চরিত্র। কিন্তু তাও ওই সাত দিনের হইচই সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে একটা দারুন ব্যাপার ছিল।

৪। জগৎ জননী মা সারদায় রামকৃষ্ণ চরিত্রটির অফার কীভাবে পেলেন ?

সুমন কুন্ডু:- জগৎ জননী মা সারদার চরিত্রটির জন্য আমাকে কোনরকম তদবির করতে হয় নি, আমাদের ফাঁকা থাকলে অনেক সময় হয়তো তদবির করতে হয়, বলতে হয় যে, এখন আমি ফ্রি আছি, যেটা হয়তো এখন আমাকে করতে হয়। কিন্তু জগজ্জননী মা সারদার জন্য সেই তদবির আমাকে করতে হয়নি। বাই লাকিলি যিনি এই প্রজেক্টের ডিরেক্টর সুশান্ত বসু তার আগের প্রজেক্ট ওম সাই রাম এ আমি কাজ করতাম,তবে ওম সাঁই রাম এও রাজাদা আমাকে ডাকে নি একটা ইপির মাধ্যমে আমি কাজটা পেয়ে ছিলাম। ওম সাই রামে একটা ট্রাকেই আমি কাজ করেছিলাম তারপর আস্তে আস্তে ট্র্যাকটাও বন্ধ হয় আর মেগাটিও বন্ধ হয়ে যায়। তো সেই সময় আমি শুনতে পাই যে রাজা দা এরকম একটা প্রজেক্ট নিয়ে ভাবছে তো তখন আমার সাথে আরো একজন আর্টিস্ট ছিল যার সাথে আমার‌ও লুক সেট হয় ও আমাদের সেই ছবি সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং তিনি আমাকে সিলেক্ট করেছিলেন। তারপর রাজা দা আমাকে চরিত্রের জন্য সিলেক্ট করেছিলেন। এখনো আমি ধন্যবাদ জানাই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় কে। আমি এটা ভেবেই প্রাউড ফিল করি যে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় আমাকে সিলেক্ট করেছিলেন উনি আমার মধ্যে কিছু তো একটা দেখেছিলেন, কারণ কেউ যখন আপনার মধ্যে কিছু দেখে না এবং সেই সময় যখন কোন বিখ্যাত মানুষ আপনার মধ্যে কিছু একটা দেখে তখন মনে হয়,না, আমার মধ্যে কিছু একটা আছে-এই ভেবে এখন ও আমি রাত্রে বেলায় ঘুমায় যে আমাকে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বেছে ছিলেন আমাকে তার মান রাখতে হবে, তার জন্য আমি চেষ্টা করেছিলাম,এখনো চেষ্টা করি কিন্তু সবসময় তো সবকিছু সম্ভব হয় না। কারণ পরিস্থিতি সবসময় একইরকম জিনিস ঠিক করে দেয় না। সো এভাবেই আমার সিলেকশন হয়েছিল যাই হোক যারা বেছে ছিলেন আমি তাদের সবার প্রতি আমি থ্যাঙ্কফুল। কারণ আগে তোমাকে চান্স পেতে হবে তারপর তো আমি সেই কাজটার প্রতি নিজে ডেডিকেশন দেখাবো আর এটা তো সত্যি এই প্রফেশনটা একদমই লাক বাই চান্স।

৫। দ্বিতীয়বার রামকৃষ্ণ চরিত্র করলেন যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দে! এই নিয়ে কী বলবেন ?

সুমন কুন্ডু:- যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দের জন্য যখন আমাকে অফার দেওয়া হয়েছিল তখন আমি অনেক এক্সপেক্টেশন করেছিলাম যে অনেক কিছু হবে এবং আমাকে বলাও হয়েছিল যে অনেক কিছু দেখানো হবে কিন্তু আমি দেখলাম যে জগৎ জননী মা সারদা যাও বা হয়েছিল তার ১% ও এখানে হলো না। আমি ভেবেছিলাম যেহেতু সেম ডিরেক্টর, সেম ফ্লোর তাই ভেবেছিলাম আগের বারের ত্রুটিগুলো এবার ঠিক করে নেবো কিন্তু হলো না। আমি দ্বিতীয়বার সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলাম আমি ভেবেছিলাম দারুন কিছু একটা হবে কিন্তু আমার ভুলটা ভাঙলো ৬/৭ মাস পর। বলতে পারেন, দ্বিতীয়বার রামকৃষ্ণ চরিত্রটা করে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। তবে আমি চেষ্টা করেছিলাম।

৬। আপনার অভিনয় দেখে দর্শক পর্যন্ত কাঁদছে! এত জীবন্ত অভিনয়! এই নিয়ে কী বলবেন ?

সুমন কুন্ডু:- কি জানি কেঁদেছে কেন? হয়তো আমি কেঁদেছি তার জন্য কেঁদেছে! আসলে আমাদের তো ট্রুথ এন্ড বিলিভ বলে একটা ব্যাপার থাকে এটা বলতে পারেন এই চরিত্রটা করার সময় আমার মধ্যে এই চরিত্রটার প্রতি কোন অবিশ্বাস ছিল না। ১০০ শতাংশ নয় আমি ২০০ শতাংশ বা হাজার শতাংশ বিশ্বাস করি ঠাকুর সত্যি মাকে দেখেছিলেন, সেই বিশ্বাস থেকেই হয়তো আমার এই চরিত্রটা করা এবং সেই কারণেই হয়তো কোথাও একটা একাত্মতা বোধ ফিল করেছি, সেই কারণেই হয়তো লোকে সেটা কানেক্ট করতে পেরেছে নিজেদের সাথে আর এটা তো একটা কানেকশন যে কোন ক্রিয়েটিভ ক্ষেত্র গান হোক, নাচ হোক, অভিনয় হোক, আপনি যদি ঈশ্বরের সাথে নিজেকে কানেক্ট করতে পারেন তাহলে দেখবেন মানুষ আপনা আপনি আপনার সাথে কানেক্ট ফিল করবে।

৭। রামকৃষ্ণ চরিত্র করবার সময় আপনাকে ঘিরে দর্শকের উন্মাদনার প্রকাশ ঘটেছে অসংখ্যবার! এরকম কোনো একটা ঘটনা যদি বলেন ?

সুমন কুন্ডু:- বর্ধমানের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহতে একটা permission এর প্রবলেম হওয়ার জন্য আমাদের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিলো না। পুরুলিয়াতে আমি আইডি কার্ড নিয়ে যায়নি সেই কারণে হোটেলে আমাকে ঢুকতে দিচ্ছিলো না, দুটো জায়গাতেই শো হওয়ার পর মানুষজন পুরো চেঞ্জ মানে সৃজনী প্রেক্ষাগৃহের মানুষজনশীল হওয়ার পর আমাদের পেয়ে পুরো পাগল আর মানে কি করবে আমাদের পেয়ে সেটা বুঝে পাচ্ছে না সব জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে আমাদেরকে দেখাচ্ছে! আর দ্বিতীয় জন যিনি আমাদের ঢুকতে দিচ্ছিলেন না তিনি খুব চুপচাপ টাইপের মানুষ খুব বেশি বয়স নয়, স্পেশালি আমাকে , যখন আমি বেরিয়ে যাবো, তখন আমাকে আলাদা করে ডেকে প্রণাম করেছেন। যে লোকটি আমাকে আইডি কার্ডের জন্য ঢুকতে দিচ্ছিল না, সে আমাকে আলাদা করে ডেকে প্রণাম করে কারণ আমার মধ্যে হয়তো তিনি ঠাকুরকে দেখতে পেয়েছেন। যেটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।

৮। আপনি যদি কিরণমালাতে কটকটির মতো কোনো পুরুষ রাক্ষসের চরিত্র পান ও এক‌ই সাথে ভক্তিমূলক কোনো চরিত্র ধরুন বামাক্ষ্যাপা বা লোকনাথের চরিত্র পান ও একটা ওয়েব সিরিজে সাইকো থ্রিলার চরিত্রে মেন সাইকো থ্রিলারের চরিত্র পান-কোনটি বেছে নেবেন ?

সুমন কুন্ডু:- দেখুন আপনি খুব ভালো ভালো ইউনিক প্রশ্ন করছেন, সেটা খুব ভালো জিনিস, কিন্তু এক্ষেত্রে একটা কথা বলি, আমরা তো পরজীবী বলতে গেলে মানে যে গাছ অন্যের উপর ভরসা করে বেঁচে থাকে, আমরা সূর্যমুখী ফুলের মত বলতে পারেন সব সময় সূর্যের আলোর দিকে তাকিয়ে থাকি, কবে সূর্য উঠবে আর আমরা আরো বিকশিত হতে পারবো, আমরা কি করব আমরা নিজেরা জানিনা কোন ডিরেক্টর বা হাউস বা কোন ইপি যদি ভাবে আমাকে দিয়ে এরকম চরিত্র করানো যায় তবে আমি সেই চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাবো। ব্যতিক্রমও আছে একটা সময়ের পর পৃথিবীর ইতিহাস বলে মানুষ বিখ্যাত হয়ে যাওয়ার পর তার নিজের ইচ্ছা মত কাজ করতে পারে কিন্তু সেটা একটা পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর আপনার এই তিনটি অপশন এর মধ্যে আমি বলতে পারি যে অপশনটা আমার কাছে প্রথমে আসবে সেটাই আমি করার চেষ্টা করবো। এবার তিনটে অপশন যদি আমার কাছে একসাথে আসে তাহলে নিশ্চয়ই আমি চেষ্টা করব ওয়েব সিরিজের সাইকো থ্রিলারের কাজ করার, কারণ এরকম চরিত্র আমি করি নি। তবে বাকি দুটো চরিত্র যে করবো না এমনটা নয় কারণ বাকি দুটো আপনি বলছেন মেগা চরিত্র আর মেগা চরিত্র ছাড়া একজন অ্যাক্টর সার্ভাইভ করতে পারে না। ওয়েব সিরিজের ওই চরিত্রটি ম্যাক্সিমাম ১৫ দিন কাজ হবে,তারপর তো আবার নতুন কোন কাজ আমাকে খুঁজতে হবে। কিরণমালা তে কটকটি চরিত্র করা খুব একটা কঠিন নয় তবে একটু টায়ারিং কারণ এই চরিত্রগুলোর তো কোন অস্তিত্ব নেই, ছোটোদের আনন্দ দেওয়ার জন্য এই চরিত্রগুলো, বামাক্ষ্যাপা বা লোকনাথের চরিত্র জানিনা কখনো করতে হবে কিনা, করতে হলে কখনো অবাক হবেন না, কারণ আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিতো ভীষণভাবে টাইপকাস্ট, যারা একবার এই ধরনের চরিত্র করে, তাদের কাছে এই ধরনের চরিত্রের অফার বারবার আসতে থাকে। তাই আমি বড় কথা বলবো না যে, এই চরিত্রে আমি আর করবো না কোনদিন, কারণ এগুলো সবটাই ডেস্টিনি। দেখা যাক কি হয়, তবে ডিফারেন্স চরিত্র পেলে তো সবারই ভালো লাগে। একজন অভিনেতা হিসেবে আমিও নানা শেডের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।

৯। আচ্ছা আপনার গব্বর সিংয়ের চরিত্র করতে ইচ্ছে করে ?

সুমন কুন্ডু:- নাহ গব্বর সিং এর মত এরকম আইকনিক চরিত্র করতে ইচ্ছা করে না কারন যেটা মানুষের মনে একদম সেট হয়ে আছে সেখানে নতুন করে কিছু করার নেই, ওই চরিত্রটা যেন আমজাদ খান‌ই ফিট।

১০। অর্জুন যেমন বৃহন্নলা হয়ে ছিলো সেরকম চরিত্র বা সুস্মিতা সেন তালিতে যেরকম চরিত্র করেছিল সেরকম চরিত্র ?

সুমন কুন্ডু:- হ্যাঁ অর্জুন যেমন বৃহন্নলা হয়েছিলেন,সেরকম অন্য কোনো শেডের চরিত্র করতেই পারি,পেলে বেশ ভালোই লাগবে। তবে আপনি যে চরিত্র গুলির কথা ভাবছেন সেগুলো যদি কোন ডিরেক্টর ভাবতেন তাহলে আমি তাকে অবশ্যই থ্যাংক্স জানাতাম। দেখা যাক।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments