eaibanglai
Homeএই বাংলায়কালো টাকা সাদা করতেই কি টুর্নামেন্ট,জলসার আয়োজন বার বার শিল্পাঞ্চলে ?

কালো টাকা সাদা করতেই কি টুর্নামেন্ট,জলসার আয়োজন বার বার শিল্পাঞ্চলে ?

ক্রীড়া,সংস্কৃতি,সংগীত,সমাজ কল্যাণের নামে কি ‘ব্যবসা’ চলছে শিল্পাঞ্চলে ?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ– আবারও দুর্গাপুরে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী লোপামুদ্রা’র গান শুনতে পাবেন শিল্পাঞ্চলবাশী । আগামী ১৪ই জুলাই সন্ধ্যাই সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে ঠিক ৬:৩০ টায়। গত ১০ই জুলাই এই বিষয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ নামক এক সংস্থা । এদিন দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সিটি সেন্টারে এক সভাগৃহে শতাধিক সংবাদ কর্মীদের উপস্থিতিতে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র জানান, “দীর্ঘ ৩০ বছরের তার সঙ্গীত সাধনা উদযাপনে ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ ও বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান হতে চলেছে আগামী ১৪ ই জুলাই । ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ নামক এই ক্লাব এ বছরেই ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠান করেছিল এবার তারা একটি সঙ্গীতা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন এবং তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন। ” এদিন তিনি আরো বলেন , “আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সমস্ত কচিকাঁচাদের নিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে অবস্থিত একটি হোটেলে সংগীত বিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত করেছেন এবার তার উদ্যোগ রয়েছে দুর্গাপুর তথা আশেপাশের অঞ্চলের সমস্ত মানুষের মধ্যে গানের প্রতি অনুরাগ তৈরি করার।” শুধু তাই নয় এদিন তিনি আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের একাধিক ব্যক্তিকে ‘দুর্গাপুর সম্মান’ নামক স্মারক দিয়ে সম্মানিত করবেন বলে জানা গেছে। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলবাসী আবার একটি মন্ত্রমুগ্ধ সন্ধ্যা কাটাবে লোপামুদ্রা মিত্রের গানের আনন্দে ,তা বলাই বাহুল্য ।

এদিন এই সভা স্থলে সাংবাদিকদের এক রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তরে লোপামুদ্রা মিত্র সরাসরি রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করবেন না বলে পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন । কিন্তু তিনি কথার ফাঁকে এমন কয়েকটি কথা বলে বসেছেন তাতে ক্ষুব্ধ শিল্পাঞ্চলের বাম মনস্ক মানুষজনেরা । বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই বাম কর্মী সমর্থকরা শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রর ওই মন্তব্য ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বাম শ্রমিক সংগঠনের নেতা সৌরভ দত্ত এদিন গর্জে উঠেছেন সামাজিক মাধ্যমে । রইল সেই মেসেজের প্রতিলিপি।

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের তথাকথিত ‘এলিট ‘ক্লাসের একাধিক মানুষজন রয়েছেন এই ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ সংস্থার মাননীয় সদস্য । জানলে অবাক হবেন কে নেই সেই মাননীয় সদস্যরে তালিকায় দুর্গাপুরের এক বিখ্যাত হোটেল ব্যবসায়ী , নামকরা কয়লা উত্তোলন ও পরিবহন সংস্থার কর্ণধার , বিখ্যাত ব্রান্ডের স্বর্ণ অলংকার শোরুমের মালিক ,নামকরা প্রোমোটার, ছোট গাড়ির শোরুম এর মালিক, প্রাক্তন কাউন্সিলর ,নামকরা বালি ব্যবসায়ী , একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের বিশিষ্ট কয়েকজন,ও রয়েছেন সরকারি অতিথি নিবাস লিজে নিয়ে চালানো এক ব্যবসায়ী ,সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগণ এই ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ নামক সংস্থার সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে। অন্যদিকে এই সংস্থারই এক মাননীয় সদস্য নাকি সরাসরি সামাজিক মাধ্যমে এই সংস্থার কার্যপ্রণালী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন “গুটি কয়েক মানুষ এই সংস্থার নাম করে টাকা কামানোর খেলায় নেমেছেন।” খোদ ওই সংস্থার অন্দরেই রয়েছে প্রশ্ন । অভিযোগ এ বছরেই ফেব্রুয়ারি মাসে যে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠান হয়েছিল তার হিসেব-নিকেশ নাকি এখনো পর্যন্ত সমস্ত সদস্যদের কাছে পৌঁছায়নি বা দেখানো হয়নি। রইল সেই মেসেজের প্রতিলিপি ।

উল্লেখ্য এ বছরেই ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে এই ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয় ‘ কমিটির উদ্যোগে কয়েক কোটি টাকা খরচা করে এক আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে অবস্থিত শহীদ ভগত সিং স্টেডিয়াম মাঠে । ওই ক্রিকেট টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলার দিন উপস্থিত ছিলেন ভারতের পড়শী দেশ শ্রীলংকার এক আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট খেলোয়াড় । গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উদ্দেশ্যে যখন এই ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ সংস্থার একাধিক কর্মকর্তারা সাংবাদিক সম্মেলনে গলা ফাটিয়ে বলে ছিলেন , “দুর্গাপুরে আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া জন্য পরিকাঠামো তৈরি করবেন এবং তাদের সংস্থা আগামীদিনে দুর্গাপুরের ক্রীড়া প্রেমী ছাত্র-ছাত্রী মধ্যে ক্রীড়াকে প্রাধান্য দেওয়ার কাজ করবেন ।” কিন্তু কোথায় কিছু হল। এখন অনেকেই প্রশ্ন করছেন এখনও অব্দি কি এই সংস্থার উদ্যোগে একজনকেও একটি বল বা ব্যাট দিয়ে উপকার করা হয়েছে বা সম্মান জানানো হয়েছে ? তাহলে কি শুধুমাত্র লোক দেখানো কথাবার্তা বলে মনোরঞ্জনের জন্য ওই ক্রিকেট টুর্নামেন্টের নামে কয়েক কোটি টাকা খরচা করা হয়েছিল ? নাকি কালো টাকা সাদা করতেই কি টুর্নামেন্টের আয়োজন ছিল ? নাকি এর পেছনেও ছিল কোন নিখুত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ? কিন্তু এইসব প্রশ্নের উত্তরে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ সংস্থার একাধিক প্রথম সারির কর্মকর্তারা ।

আবার হঠাৎ ঠিক ৫ মাস পর ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ সংস্থা ‘দুর্গাপুর সম্মান’ নাম দিয়ে এই মাসের ১৪ তারিখে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী লৌপমুদ্রার অনুষ্ঠান করার উদ্যোগ নিয়েছে । শিল্পাঞ্চলের এত বড় বড় মাথা যেখানে এক জায়গায় হয়ে পর পর এক বছরে দু’বার এত বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন , তখন তারা কি শুধু সমাজ সেবার জন্যই করছেন নাকি এর পেছনেও কাজ করছে কোন গুপ্ত উদ্দেশ্য, প্রশ্ন দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনের মঞ্চে উপবিষ্ট এক মাননীয় সদস্যকে সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, “তিনি আজকেই এই মাত্র জানতে পেরেছেন এই অনুষ্ঠানের কথা । আগে থেকে তার কিছু বিশেষ জানা ছিল না তাই তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন না।” এখন প্রশ্ন এ বছরেই ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েক কোটি টাকা খরচা করে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট করতে যে অর্থ খরচ হয়েছিল তার উৎস কি ছিল ? কতই বা খরচা হয়েছিল ? তার কোন হিসেবী এখনও অব্দি দেখাতে পারিনি সংস্থার কর্মকর্তারা বলে সাধারণ মেম্বারদের একাংশের অভিযোগ রয়েছে। শিল্পাঞ্চলের মানুষের এখন প্রশ্ন প্রতিবছর তাহলে কি একটি করে অনুষ্ঠান করে কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন এই সংস্থা ,নাকি সমাজসেবার নামে কখনো ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, কখনো সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে চলবে রমরমিয়ে ব্যবসা ?

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের এক সমাজসেবী সংগঠনের কর্মকর্তা জানান, “এই অনুষ্ঠানটি যারা করছেন তাদের সাংবাদিক সম্মেলন এ বছরেই ফেব্রুয়ারি মাসে এবং এবারো যে সভাগৃহে হয়েছে, সেই সভাগৃহেটির ওপরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে । তিনি আরো জানান , এ বিষয়ে দুর্গাপুর নগর নিগমকে বহুবার তথ্য জানার আইন অধিকার মোতাবেক চিঠি করা হলেও তার কোন উত্তর এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি ।” তিনি অভিযোগ করেন,”এক সংস্থাকে বছরের পর বছর কি আইন মোতাবেক এই রাজ্য সরকারের সম্পত্তিটি ব্যবসায়িক খাতিরে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে তা বিশদ জানতে খুব শিগ্রি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য চেয়ে আবেদন জানাবেন। প্রয়োজনে দারস্ত হবেন কলকাতা উচ্চ আদালতে । দুর্গাপুরের ওই সমাজসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এ বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের কাছে চিঠি লিখে ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ নামক ওই সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য শহীদ ভগত সিং স্টেডিয়ামটি কি শর্তে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল এবং তার বিদ্যুৎ বাবদ কি টাকা নেওয়া হয়েছিল তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল । শুধু তাই নয় ওই সমাজসেবী সংগঠনের উদ্যোগে পশ্চিম বর্ধমান জেলা শাসকের কাছে ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ নামক ওই সংস্থার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ও তাদের সরকারি ভাবে নথিভুক্ত ঠিকানা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জেলাশাসকের দপ্তর থেকে পরিষ্কার করে লিখিতভাবে জানানো হয় এই সংক্রান্ত কোনো তথ্যই পশ্চিম বর্ধমান জেলাশাসক দপ্তরে নেই বলে এবং আবেদনকারীকে যথাযথ সরকারি সংস্থার কাছে থেকে বিষয়টি জেনে নিতে আবেদন করা হয়। রইল সেই চিঠির প্রতিলিপি।

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ওই সমাজসেবী সংগঠনের পক্ষে এক আধিকারিক বলেন, “এবারে ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয় ‘নামক এই সংস্থা ‘দুর্গাপুর সম্মান’ নাম দিয়ে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আগামী ১৪ই জুলাই সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে , সেখানে দুর্গাপুর আসানসোল এলাকার একাধিক ব্যক্তিবর্গকে স্মারক দিয়ে সম্মান জানানো হবে । এখন দেখার দুর্গাপুর আসানসোলের কোন সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিগণরা যারা এদিন সম্মানিত হতে চলেছেন । কি সম্পর্ক রয়েছে তাদের সাথে এই সংগঠনটির কর্মকর্তাদের ? এই বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ নামক সংস্থার নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে সংস্থার অন্দরে। সেখানে এই সংস্থা ও তার সাথে যুক্ত কর্মকর্তাদের কার্যপ্রণালী নিয়ে তদন্ত করে দেখার অবকাশ রয়েছে।

‘দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়’ নামক এই সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠার সমস্ত অভিযোগ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন ‘এই বাংলায় ‘লেখা হবে এবং দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মানুষের ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সমাজ কল্যাণের নামে যদি কোথাও কোনো ভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করা হয়েছে ,তাহলে তা অবশ্যই প্রমাণসহ আগামী দিনে প্রকাশ করা হবে ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments