নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর:- কয়লাঞ্চলের ‘বেতাজ বাদশা ‘ রাজু ঝা খুনের সপ্তাহ পার। অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও নাস্তানাবুদ পুলিশ আদতে টিকিটিও পায়নি আততায়ীদের। তাই নিয়ে বিস্তর অসন্তোষ নিহত কয়লা মাফিয়ার পরিবার, পরিজনদের মধ্যে। তাদের এই গোঁসা আরো মাত্রা পেয়েছে শুক্রবার সকালে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং রাজুর বাড়ীতে এসে ‘খুনের নেপথ্যে আছে বড় মাথা’ বলে মন্তব্যের পর। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে-প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে বসে অর্জুন সিং এর মতো দায়িত্বশীল সাংসদ যখন ঠাহর করতে পারলেন- ‘বড় মাথা’র অস্তিত্বের কথা, ঘটনাস্থলে তিন কিলোমিটার দূরে ঠান্ডা ঘরে বসে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কেন ঠান্ডা মাথায় এই খুনের কিনারা করে উঠতে ব্যর্থ? একি পুলিশের অপদার্থতা, নাকি সত্যি করেই জেলা পুলিশ অসহায়!
এরই মাঝে, রানীগঞ্জ কয়লাঞ্চলের মাঝারি থেকে বড় মাপের প্রায় দেড় ডজন কয়লা কারবারি আত্মরক্ষার বিভিন্ন পথ খুঁজে পেতে মরীয়া। তাদের অনেকেই রাজু ঝা খুনের পর এলাকা ছাড়া। প্রশ্ন- গ্রেপ্তারের ভয়েই কি সন্দেহের তালিকায় থাকা কোলমাফিয়াদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা এলাকাছাড়া? রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, ” যারা যারা সন্দেহের তালিকায়, তারা কেউই পুলিশের আওতার বাইরে চলে যাচ্ছেন- এমনটা কিন্তু নয়। আসলে, ঝা খুনের তীব্রতা দেখে তদন্তকারীরাই মনে করছেন- এমন একটি দুর্ঘটনা যে ফের ঘটবেই না, তা নিশ্চয় করে বলা যায় না। তাই, ওই সব কারবারিদের বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই যথাযথ সাবধানতা নিতে বলা হয়েছে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে- সশস্ত্র প্রহরা ছাড়া যত্রতত্র ঘোরাফেরা না করতেও।”
রাজু ঝা খুনের অন্যতম প্রধান সাক্ষী কয়লা কারবারি ব্রততীন মুখোপাধ্যায়ের জবানবন্দী ইতিমধ্যেই নথিকরণ করেছে জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের কাছে তার নিজের সুরক্ষা এবং আততায়ীদের সম্ভাব্য টার্গেট হয়ে যাওয়ার কথা ব্রতীন নিজেও জানিয়েছেন। তাই, ব্রতীনকে অন্ডালের দক্ষিণ খন্ডের পৈত্রিক বাড়ী হোক, বা শহর দুর্গাপুরের বেনাচিতিতে তার ভাড়াবাড়ী অথবা কিছুকাল আগে কেনা নিজস্ব ফ্ল্যাট- কোনটিতেই থাকার অনুমতি দেয়নি জেলা পুলিশ। তাই, রাজু- ব্রতীনেরা গরু পাচার কেসে অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ সেখের যে গাড়ীতে চড়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন, সেই গাড়ির চালক নুর হোসেন সেখ এবং ব্রতীনকে দুর্গাপুরেই পুলিশ প্রহরায় নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পুলিশেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, কয়লা কারবার এর সাথে দীর্ঘদিন জড়িত থাকা রানীগঞ্জ কয়লাঞ্চলের বেশ কিছু ব্যক্তিকে রাজু খুনের দুদিনের মাথায় সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই কলকাতা ও দক্ষিণ ভারতের কিছু শহরে নিজস্ব নিরাপত্তা বেষ্টনীতে চলে গেছেন। এরকমই একজন শনিবার ফোনে বলেন, ” আমরা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মীদের ভাড়া করেছি। এখন কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন, রিটায়ার করা কমান্ডো যদি রাখা যায়।”
একি নিছকই আতঙ্ক- নাকি পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের এই ‘সাবধান বাণী’র নেপথ্যে প্রকৃতই সাড়বস্তু কিছু রয়েছেই- উত্তর দেবে সময়!