eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুরের কসাইখানার চুক্তিঃ ৫০ এর বদলে দাম নামলো ১০ লাখে

দুর্গাপুরের কসাইখানার চুক্তিঃ ৫০ এর বদলে দাম নামলো ১০ লাখে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- ফেঁসে গিয়ে গোড়ায় মৃত শিশুর জীবনের দাম নির্ধারণ করে মুচলেকা, তারপর পুলিশের কাছে দরবার করে ‘হুমকি দিয়ে ওটা লিখিয়েছে’ বলে বাঁচার ন্যাকামি, ফের ধরাধরি করে সোম রুইদাসের জীবনের দাম এক পঞ্চাংশ কমিয়ে ১০ লাখের রফার মরিয়া প্রয়াস – এই হলো নাকি রোগীর জীবনের কেয়ার নেওয়ার লাইফ কেয়ার হাসপাতাল! সম্প্রতি যেটি দুর্গাপুরের অন্যতম ‘কসাইখানা’ বলে চিহ্নিত।

নাকের ভেতরে গজানো খুদে একটি মাংসপিণ্ড কাটাতে এসে জবাই হয়ে যাওয়া মৃত সোম ২৯ শে জুনের সেই বুধবারে যে আগুন সিটি সেন্টারের অভিযুক্ত তিন রাবণের সোনার লংকায় জ্বালিয়ে গেছে তার আঁচে মুখ পুড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর, পুলিশ থেকে দুর্গাপুর পৌর নিগমেরও আর পোড়া মুখের আসল তিন রাবণ ওদিকে বারবার চশমার ঘাম মুছে ঘা আর ঘা এর পোকা মারতে ওপরতলায় দরবার করার জবরদস্ত চেষ্টায় নাকি এখন উঠে পড়ে লেগেছে!

“কুঁজো তো চিৎ হয়ে শুতে চাইবেই। এখন দেখতে হবে তাদের এই শোয়ার জন্য শয্যা বাড়িয়ে দিচ্ছেন ঠিক কারা কারা?” বক্তব্য মৃত শিশুর পরিজনদের।

বিতর্ক, বিতন্ডার বাইরে চড়া দাগের যে প্রশ্নটা আইন আদালতে, পুলিশ মহলে জোর চর্চায় উঠে এসেছে সোমের প্রায় খুন হয়ে যাওয়াকে ঘিরে, সেটা হল মরা হাতি লাখ টাকা সেই ব্রিটিশ জামানা থেকে কথিত আছে বটে, তবে মরা মানুষের দাম কি আইনত আদৌ নির্ধারণ করা যায় ? আবার দাম নির্ধারণ করে হাসপাতালের অফিসিয়াল কাগজে সেটির লিখিত মুচলেখা দেওয়া যায় ? দেখা যাক ওই কসাইখানার মোড়ল শতদল কি বলছেন ? সোমের হত্যাকে ‘স্বর্গ লাভ’ বলে সাফাই দিয়ে ‘নরকের পাহারাদার’ শতদল বললেন, “জনরোষ আর জনগণের দাবি মেনে নিয়ে আমরা ওই শিশুর মৃত্যুর দরুন ক্ষতিপূরণে রাজি হলাম।” অর্থাৎ, ওই শিশুর মৃত্যুর দরুন জনরোষ না হলে কি ওরা আর দাম ধরতেন না ? দুই জল্লাদকে নিয়ে কি তাহলে সেই দিনই ১৩ বছরের সোমের শোকে সেলিব্রেশানের কেক কাটতেন কসাইখানায় ?

লাইফ কেয়ার হাসপাতালের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শতদল দত্তর কথায় যেন চালভাজা আর মুড়ি একই বস্তু মনে হল। তিনি বললেন, “মৃত বালকের পরিবার দুই চিকিৎসকের নামে অভিযোগ দায়েরের করে মোকদ্দমা করতে চাইছিলেন। এতে তারা হাসপাতালের সাহায্য চেয়েছিলেন। আমাদের মেডিকেল বোর্ড নিজেরাই যেটুকু বুঝেছে, তাতে আমাদের আপাতভাবে মনে হয়েছে কিছু ত্রুটি ছিল। তাইতো আমরা ক্ষতিপূরণে সম্মত হই ” মানে হাসপাতালের দোষেই যে বালক সোমের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে লাইফ কেয়ার নিজেই নিশ্চিত। মৃত সোমর জীবনের মূল্য নির্ধারণও তাহলে ঠিক সেই জন্যেই। এদিকে ওই হাসপাতালের চক্ষু নাসিকা বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল মুখার্জি আর এনাস্থেটিক রাজদীপ সরকারের গাফিলতিতেই নাক অপারেশন করতে আসা সোমের মৃত্যু হয়েছে বলে তার পরিবারের দাবি।

দেখুন ও শুনুন লাইফ কেয়ার হাসপাতালের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শতদল দত্তর সেই বক্তব্যঃ-

১৩ বছরের সোমের বাবা বিশ্বনাথ বৃহস্পতিবার বলেন, “আজ ১৩ দিন হলো আমার ছেলেটা আর দুনিয়াতেই নেই। আজই তার পারলৌকিক ক্রিয়া-কর্ম সম্পূর্ণ করলাম।” পরিবার এখনো যন্ত্রণায় গুমড়ে মরছে। শতদল দত্ত বললেন, “ঐ দুই চিকিৎসকের ত্রুটি আমাদের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে।” তাহলে এরপরও লাইফ কেয়ার নিজে থেকে কেন তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিল না ? কেন সবকিছু ধামাচাপা দিতে নগদ টাকায় রফা করতে মুছলেখা দিল ? পুলিশি বা কেন মুখে কুলুপ এঁটে বসে পড়ল ? মৃত সোমের পরিবারের লোকদের কথায়, “গরিবের জীবনের দাম ধরা তো খুবই সহজ স্যার! বড়লোকদের সাথে লড়াই করে আমাদের মতো চুনোপুটিরা কখনো কি জেতে ?” সন্তানের ক্রিয়া কর্মের দিনে সব হারানো এক পিতার এই বুকভাঙ্গা কান্না কি শতদলের লাইফ কেয়ারের চৌকাঠ ডিঙ্গিয়ে ঠান্ডা ঘরে পৌঁছয় ? নাকি কসাইখানার জল্লাদের কানে পাথর গোঁজা?

আর আদালতের ?

“দেশের আইন মোতাবেক মানুষের জীবনের দাম ধার্য্য করা যায়না। ভারতীয় দণ্ডবিধি বলুন, বা নতুন ন্যায় সংহিতার ধারা – সর্বত্রই প্রমাণ পেলে কঠোর সাজার বিধান রয়েছে,” বললেন কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী সাহেব বন্দোপাধ্যায়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments