মনোজ সিংহ ,আসানসোলঃ- গত ৩ মে ছিল আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে বা মুক্ত সাংবাদিকতা দিবস। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা শুধুই কি প্রহসন ?
অবিভক্ত বর্ধমান জেলা তথা এখনকার পশ্চিম বর্ধমানে এযাবৎকাল অবধি সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট অনুষ্ঠান করে এই দিনটিকে উদযাপন করে আসছেন বহু বছর ধরেই। কিন্তু, এ বছরই সম্ভবত দুই পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান জেলায় এই প্রথম পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদের উদ্যোগে সরকারিভাবে উদযাপিত হল আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা দিবস তথা ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফিডাম ডে ।
পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদের আমন্ত্রণে ওদিন সন্ধ্যায় পশ্চিম বর্ধমান জেলা সদর আসানসোলের সরকারি সার্কিট হাউসের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক দিবসটি। এদিন সন্ধ্যায় প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া , ডিজিটাল মিডিয়া সহ জেলায় কর্মরত শতাধিক সংবাদ কর্মীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ ।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সংবাদ কর্মী হিসেবে কাজ করা সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমবার আন্তর্জাতিক সংবাদ দিবসে আমন্ত্রিত হয়ে যারপরনাই আপ্লুত । এদিন সন্ধ্যায় পশ্চিম বর্ধমান জেলায় কর্মরত ও উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলাশাসককে পুষ্পস্তবক দিয়ে সম্মানিত করা হয় । পরে, আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা দিবস উপলক্ষে একটি কেক কেটে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
উদ্বোধনী ভাষণে জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল আগত সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান । আগামী দিনে জেলা প্রশাসনের সাথে জেলায় সকল কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে যাতে সুসম্পর্ক ও তথ্যের আদান-প্রদান হয় সে বিষয়ে সচেষ্ট হবেন বলে জানান । এদিনের এই অনুষ্ঠানে জেলাশাসকের সাথে সাথে উপস্থিত ছিলেন এডিএম হারিশংকর পানিকর, সঞ্জয় পাল , সঞ্জয় টুডু, দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় , জেলা তথ্য আধিকারিক আজিজুর রহমান সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগণ । সৌহার্দ পূর্ণ পরিবেশে ঘন্টা দুয়েক চলে এই অনুষ্ঠান। এদিনের এই অনুষ্ঠানের পরে এক নৈশ ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ।
আসানসোলের বিশিষ্ট সাংবাদিক বিশ্বদেব ভট্টাচার্য এদিন জেলাশাসককে তার এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানান । উত্তরে জেলাশাসক জানান আগামী দিনেও সাংবাদিকদের সাথে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সার্থক রূপায়ণ ও তার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ছোট ছোট অনুষ্ঠান করে মুখোমুখি হবেন সাংবাদিকদের সাথে বলে প্রতিশ্রুতি দেন ।
উল্লেখ্য ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ডে’ আসলে ‘ওয়ার্ল্ড ফ্রি প্রেস ডে’। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে নামিবিয়ার রাজধানী উইনঢোক্ এ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকেরা ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে একটি সম্মেলনে সেসব অনুন্নত দেশগুলিতে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে স্বচ্ছ এবং মুক্ত সাংবাদিকতার দাবি তোলেন। পরে, ১৯৯৩ এ রাষ্ট্রসঙ্ঘ ওই সম্মেলনকে কুর্নিশ জানিয়ে সাধারণ সভায় ৩ মে দিনটিকে বিশ্ব সাংবাদিকতা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। আবার এই স্বীকৃতির ১০ বছর পর রাষ্ট্রসঙ্ঘ নিজেই একটি ঘোষণা পত্রে উল্লেখ করে, ‘প্রেসের স্বাধীনতা একটি ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। কাজের কাজ বিশেষ কিছুই হয়নি। এই স্বাধীনতা নিছক একটি ঘোষণা হয়েই রয়ে গেছে।’
রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বীকৃতির ঠিক ৩০ বছরের মাথায়, ২০২৩এ বিশ্বমঞ্চে ‘প্রেস ডে’র থিম করা হল- ‘ভবিষ্যতের অধিকারকে নিশ্চিত করতে মত প্রকাশের অধিকারকেই চালকের আসনটি দিতে হবে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকতা সময়ে সময়ে আক্রান্ত। বহু প্রকাশনা প্রায় বন্ধের মুখে পড়েছে শাসকের রোষানলে। ভারতের সংবিধান তার ১৯ (১)র ‘ ক ‘ ধারায় মত প্রকাশের অধিকারকে নিশ্চিত করলেও, এদেশের সাংবাদিকতায় স্বাধীনতার করুণতম চিত্রটি ফুটে উঠেছে বিগত কয়েক বছরে। বিশ্বের ১৮০ টি দেশের মধ্যে, ২০১৬ তে ভারতে প্রেসের স্বাধীনতায় র্যাঙ্ক ছিল ১৩৩ আর ২০২৩ তা ১৬১, পাকিস্তানের চেয়েও বিপজ্জনক জায়গায়। পাঁচটি মাপকাঠি ব্যবহার করে প্রেসের স্বাধীনতার এই সূচক তৈরি হয়- রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, আইনি কাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিত এবং দেশে বৈধ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা। ২০১৪ সাল থেকে দেশ জুড়ে লাগাতার সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের ওপর শাসানি, চমক-ধমক, চোখ রাঙানি ও রাজনৈতিক স্বার্থে মিডিয়াকে হয় ব্যবহার করা বা না রাজি হলে মারধর ও প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাগুলি বহুগুণ বেড়েছে, যা নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘ খুব উদ্বিগ্ন। বিশ্বের ৩১ টি দেশে সাংবাদিকদের অবস্থা খুবই খারাপ, যার মধ্যে ভারতও রয়েছে। দিবস বা ইংরেজিতে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফ্রিডম ডে । অবিভক্ত বর্ধমান জেলা তথা এখন বিভক্ত জেলা পশ্চিম বর্ধমানে এযাবৎকাল অবধি সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট অনুষ্ঠান করে এই দিনটিকে উদযাপন করে আসছেন বহু বছর ধরেই। কিন্তু এ বছরই সম্ভবত দুই পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান জেলায় এই প্রথম পশ্চিম বর্ধমানের মাননীয় জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদের উদ্যোগে উদযাপিত হল আন্তর্জাতিক সংবাদ দিবস তথা ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফিডম ডে।