eaibanglai
Homeএই বাংলায়অথ জামাইষষ্ঠী কথা

অথ জামাইষষ্ঠী কথা

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- হিন্দু বাঙালিদের ঘরে সাজো সাজো রব। ইতিমধ্যে অনেক জামাই পৌঁছে গেছেন, কেউ কেউ বা শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। দেবেনাই বা কেন! মাঝে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি, সময়মতো পৌঁছাতে হবে তো! তারপরই হিন্দু বাঙালির বাড়িতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জামাইষষ্ঠী।

মূলত জামাইয়ের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা করে শাশুড়ি মায়েরা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ব্রত পালন করে থাকেন। শাশুড়ি মায়েদের পাশাপাশি জামাইরা সারা বছর ধরে দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। নতুন জামাইদের উৎসাহ বেশি হলেও প্রবীণ জামাইরা এক্ষেত্রে খুব একটা পেছিয়ে থাকেননা। শাশুড়ি মায়েদের কাছে জামাই ছোটোই থাকেন!

প্রসঙ্গত একদিন যেটি ‘অরণ্যষষ্ঠী’ নামে পরিচিত ছিল কালের বিবর্তনে সেটাই হয়ে উঠেছে ‘জামাইষষ্ঠী’।

প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে কন্যার সুখের জন্য জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় জামাইষষ্ঠী ব্রত পালন করেন মেয়ের মা। তিনবার ‘ষাট’ শব্দ উচ্চারণ করে জামাইয়ের হাতে হলুদ মাখানো ষষ্ঠীর ডোর বেঁধে, কপালে তেল-হলুদের ফোঁটা ও মাথায় ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন শাশুড়ি। সঙ্গে থাকে তালপাতার পাখা দিয়ে হাওয়া করা। জামাইয়ের খাওয়ার জন্য থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় পাঁচ রকমের গোটা ফল। দুপুরে ভুড়িভোজ তো আছেই। একইসঙ্গে জামাইয়ের হাতে শাশুড়ি তুলে দেন উপহার।

  প্রাচীন বৈদিক আমল থেকেই জামাইষষ্ঠীর প্রথা প্রচলিত আছে। এর পেছনে আছে নানান সংস্কার ও লৌকিক কাহিনী।

একটা সময় আমাদের দেশের প্রচলিত সংস্কার অনুযায়ী বিবাহিতা কন্যা যতদিন না সন্তানের জন্ম দেবে ততদিন তার বাবা-মা মেয়ের ঘরে পা রাখবেন না। ফলে মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বাবা- মাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হত৷ বাঙালিদের বিশ্বাস লোকায়ত দেবী মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদে নব দম্পতির কোল আলো করে সন্তান আসবে। তাই বিবাহিতা কন্যার সন্তান লাভ ও তাদের মঙ্গল কামনায় মা ষষ্ঠীর পুজো করে থাকেন বাংলার মায়েরা। বিবাহিতা মেয়ের মুখ দর্শনের জন্য জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীকে বেছে নেওয়া হয় জামাইষষ্ঠী হিসাবে৷

শুধু সংস্কার নয় জামাইষষ্ঠীর পেছনে লৌকিক কাহিনীও প্রচলিত আছে।

কথিত আছে, কোনও এক সময়ে কোনও এক পরিবারে একটি বাড়ির বউ ভাল কিছু রান্না হলেই নিজেই সব খেয়েমা ষষ্ঠীর বাহন একটি কালো বিড়ালের উপর দোষ চাপাত। নিজের সম্পর্কে এই মিথ্যে অভিযোগ শুনে বিড়ালটির খুব কষ্ট হয় এবং মা ষষ্ঠীর কাছে গিয়ে অভিযোগ করলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। মা ষষ্ঠীর অভিশাপে বউটির সাত পুত্র ও এক কন্যা জন্মের পরেই মারা যায়। শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা বউটিকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে সে মনের দুঃখে বনে চলে যায়।

একদিন জঙ্গলে বউটিকে একা একা কাঁদতে দেখে বৃদ্ধার ছদ্মবেশ ধারণ করে মা ষষ্ঠী তাকে দেখা দেন এবং কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। বউটি তখন মা ষষ্ঠী রূপী বৃদ্ধার কাছে সব সত্যিটা বলে দেয় এবং ক্ষমা চায়। নিজের পরিচয় দিয়ে মা ষষ্ঠী তাকে ক্ষমা করে দেন এবং ঘরে ফিরে ভক্তিভরে তাঁর পুজো করার পরামর্শ দেন। বাড়ি ফিরে এসে মা ষষ্ঠীর পুজো করে বউটি মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদে নিজের সব সন্তানদের ফিরে পায়। তারপর থেকেই ষষ্ঠী পুজোর মাহাত্ম্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে শুরু হয় জামাইষষ্ঠী।

তবে সংস্কার বা লৌকিক কাহিনী যাইহোক না কেন জামাইষষ্ঠী কালক্রমে যে হিন্দু বাঙালিদের কাছে অন্যতম পার্বণ হয়ে উঠেছে সেটা কিছুতেই অস্বীকার করা যাবেনা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments