নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ অতীতের ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গারন নদী। অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন এই নদীর নাম। দুর্গাপুর শিল্পশহরের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা হামুড়িয়া শিল্পাঞ্চলের মাঝ বরাবর এককালে কুল কুল রবে বয়ে যেত ঐতিহ্যবাহী এই সিঙ্গারন নদী। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে ততই এই নদী হারিয়েছে তার গতি। জামুড়িয়া শিল্পতালুক ঠিক যেমন যেমন ভাবে একটু একটু করে বেড়ে উঠেছে ঠিক সেইভাবেই তিল তিল করে নষ্ট হয়েছে সিঙ্গারন নদীর স্বাভাবিক গতিপথ। কলকারখানার দূষিত জল, আবর্জনা, রাসায়নিক দ্রব্য দিনের পর দিন এই নদীগর্ভে লীন হতে হতে বর্তমানে এই নদী এখন জামুড়িয়াবাসীর কাছে যেমন বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি জীবন সংশয়ের প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে নদী মিষ্ট জলে বছরের পর বছর ধরে জীবন অতিবাহিত করা জলজ প্রানীকূল। সম্প্রতি, এই সিঙ্গারন নদীর দূষণের মাত্রা এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে প্রায় প্রত্যেক দিন নদীতে থাকা কয়েক টন মাছ মরে নদীর জলে ভেসে উঠছে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে জামুড়িয়ার এই সিঙ্গারন নদীর তীরে বসবাসরত ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের কয়েকশো পরিবার। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, গত কয়েকদিন ধরেই এক নাগাড়ে নদীতে বিপুল পরিমাণ মাছের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় দিন মরা মাছে ভরে যাচ্ছে নদীর জল, ফলে আতঙ্কে গ্রামবাসীরা। কারণ এই নদীর ওপরেই নির্ভর করে তাদের দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত হয়। নদীর জল যেমন তারা পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করতেন তেমনি দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জলের জোগানই এই নদী থেকে হত বলে জানাচ্ছেন তারা। তাদের অভিযোগ, বর্তমান সিঙ্গারন নদীর এহেন দূষণে জর্জরিত হওয়ার প্রধান কারণ জামুরিয়াব শিল্পাঞ্চলে গড়ে ওঠা একের পর এক কারখানা। অভিযোগ, একসময় যে নদীর জলের স্বচ্ছতা ও মিষ্টতা বহু মানুষকে আকৃষ্ট করত, বর্তমানে সেই নদীর জলে নিয়মিত কারখানার বর্জ্য পদার্থ ও রাসায়নিক মিশ্রিত জল দিনের পর দিন ফেলার ফলে নদীর সেই অমৃতসম জল আজ গরলে পরিণত হয়েছে। আর এইকারণেই সম্প্রতি নদীর সমস্ত মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রানীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যার ফলে ব্যাপক আতঙ্কে রয়েছেন মামুদপুর, মহিষাবুড়ি হোম, হুডডুবি, কিডাঙ্গা, তপসি জানবাজার, রেলপাড়সহ অন্ডাল এলাকার বহু গ্রামের মানুষ। কারণ বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় এই নদীর জলের ওপরেই সারাবছর নির্ভর করে থাকতে হয় তাদের, কিন্তু এভাবে ঐতিহ্যবাহী নদীর জল দূষিত হতে থাকায় অদূর ভবিষ্যতে তাদের ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন। দূষিত হওয়া সত্ত্বেও দিনের পর দিন সেই জল ব্যবহারের ফলে তাদের শরীরেও ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন তারা। মঙ্গলবারই এই নদীর জল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এলাকার বেশকয়েকজন বাসিন্দা ও বেশ কয়েকটি গবাদি পশু। এরকম পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীরা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের বক্তব্য, একেই সিঙ্গারন নদীর ঐতিহ্য জামুড়িয়াবাসীর কাছে এক আলাদা মাত্রা বয়ে আনে তার ওপর বিভিন্ন কলকারখানাগুলি যেভাবে এই নদীকে ধ্বংস করে চলেছে তাতে শীঘ্র এই কারখানাগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।