মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ গত ৫ই ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে তৃতীয় বর্ষের জন্য দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫। চলবে আগামী ১৫ই ডিসেম্বর অবধি। এখন দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ চরম পর্যায়। বিগত আট দিন ধরে টলিউড ও বলিউডের বিখ্যাত চিত্র তারকা ও সংগীত শিল্পীরা তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছেন দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ এর মূল মঞ্চে। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের সহ আশেপাশে জেলার কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন ও হচ্ছেন এই দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ এর মেলা প্রাঙ্গণে।
দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে এ বছর একটি আন্তর্জাতিক মানের হ্যাঙ্গার তৈরি করা হয়েছে মূল মঞ্চ ও আগত দর্শকদের বসার ব্যবস্থার জন্য। কিন্তু দুর্গাপুর উৎসব আয়োজক কমিটির উদ্যোক্তারা ওই হেঙ্গারে বসার তিন হাজার মানুষের ব্যবস্থা করেছিলেন। শুধুমাত্র দুর্গাপুর উৎসব আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে যাদেরকে ভিভিআইপি বা ভিআইপি পাস দেওয়া হয়েছিল তারাই শুধুমাত্র ওই আন্তর্জাতিক মানের হ্যাঙ্গারে ভেতরে থাকা চেয়ারে বসে শিল্পীদের অনুষ্ঠান আনন্দে উপভোগ করতে পারবেন। ওই হ্যাঙ্গার এনক্লোজারের নাকি সর্বোচ্চ ৩০০০ মানুষের বসার সুব্যবস্থা ছিল। তারপরেও দুর্গাপুর তথা তার আশেপাশের এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ প্রায় প্রতিদিনই দুর্গাপুর উৎসব প্রাঙ্গনে হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন শিল্পীর মন মাতানো অনুষ্ঠান দেখতে। ডিসেম্বর মাসের ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে কয়েক হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠানটি গুলি উপভোগ করছেন।
এই নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অল্প বিস্তর ক্ষোভ প্রকাশ হয়েছে। কেন সাধারণ মানুষকে দাঁড়িয়ে প্রোগ্রাম দেখতে হবে? কেন দুর্গাপুর উৎসব আয়োজক কমিটি সাধারণ মানুষের জন্য বসার সুব্যবস্থা করেনি? যদিও দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল অনেক আগেই, যে সকল মানুষ দুর্গাপুর উৎসবকে সফল করতে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ, পরিষেবা ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র তাদের পরিবারের কথা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক মানের ওই হ্যাঙ্গার এর ভেতরে বসার সুব্যবস্থা করা হয়েছিল।
প্রায় প্রতিদিনই দুর্গাপুর উৎসব মূল মঞ্চের আশেপাশে সাধারণ মানুষের অতিরিক্ত ভিড় হওয়ার ফলে এবার একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে এগোচ্ছে দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ এর উদ্যোক্তারা। একটি সূত্র মারফত জানা গেছে কাল ‘নন্দী সিস্টারের’ মন মাতানো নাচে গানে ভরপুর অনুষ্ঠান দেখতে প্রায় সাত হাজার সাধারণ মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে। এক প্রকার জনতার চাপে বাধ্য হয়ে পেছন দিকের একটি ভিআইপিদের এর বসার জন্য সুরক্ষিত এলাকা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য। শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে সমাপ্ত হয় নন্দী সিস্টারের পরিবেশিত অনুষ্ঠান। এ দিন মূল মঞ্চের সামনে কয়েকশ খুদে সহ মহিলাদের গানের তালে তালে আত্মহারা হয়ে নৃত্য ও আনন্দ করতে দেখা গিয়েছে।
একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, গতকাল মানুষের এই ভিড় দেখে গভীর রাত্রে দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ আয়োজক সংস্থার মূল কর্মকর্তারা এক গোপন বৈঠকে বসেন। কারণ উৎসবের আর মাত্র তিন দিন বাকি। এরমধ্যে রয়েছে দুজন বড় শিল্পীর অনুষ্ঠান। দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় জমবে দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ চিত্রালায় মেলা ময়দানে। সেই কথা মাথায় রেখে উদ্যোক্তারা ইতিমধ্যেই প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন দুর্গাপুর উৎসবের মূল মঞ্চের সামনে থাকা হ্যাঙ্গার ও তার আশেপাশের ফাঁকা জায়গায় অতিরিক্ত ৫ হাজার চেয়ার পাতা হবে। সাধারণ মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে জাবেদ আলীর অনুষ্ঠান দেখতে পান। ইতিমধ্যেই উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের বসার জন্য অতিরিক্ত ৫০০০ চেয়ার জোগাড়ের ব্যবস্থা শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ এর শেষ লগ্নে এই অতিরিক্ত মানুষের জমায়েতকে সামাল দিতে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে ট্রাফিক বিভাগ ও দুর্গাপুর থানার পুলিশকর্মীরা তাদের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুর্গাপুর উৎসব আয়োজক সংস্থার অন্যতম এক কর্তা জানান, “মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত ভিড় দেখে আমরা অভিভূত। দুর্গাপুরের একশ্রেণীর নিম্ন মানসিকতার মানুষ কয়েক দিন ধরে দুর্গাপুর উৎসব সংক্রান্ত বেশ কিছু কুকথা সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন দুর্গাপুর উৎসব প্রাঙ্গণে হাজির হয়ে উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে বাড়ি ফিরছেন।” তিনি আরো জানান, “দুর্গাপুর উৎসবে এত মানুষ আসবেন ও তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন একথা আগে ভাবা যায়নি। তাই ব্যবস্থাতে কিছু খামতি রয়ে গিয়েছে। এ বছরের দুর্গাপুর উৎসবের শেষ দিনে আমরা সমগ্র দুর্গাপুরবাসীর জন্য অতিরিক্ত আরো পাঁচ হাজার চেয়ার মূল মঞ্চের চারিদিকে বসাব, যাতে সাধারণ দুর্গাপুরের মানুষ আনন্দের সাথে দুর্গাপুর উৎসবের শেষ লগ্নের অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে দেখতে পারেন।”
অন্যদিকে গত সোমবারের বলিউডের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী পালাক মুচ্ছালের সঙ্গীতা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার প্রায় ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর গত বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎই দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকটি তথাকথিত ফেসবুক পেজ গুলিতে দুর্গাপুর উৎসব সংক্রান্ত বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর, কুরুচিপূর্ণ, উদ্দেশ্য প্রণীত মন্তব্যে পাওয়া যায়। কিছু পোস্টে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ডিজিটাল মিডিয়া কর্মী বলে নিজেদেরকে পরিচয় দিচ্ছেন বা সংবাদ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। সারা রাজ্যজুড়ে কর্মকাণ্ড প্রসারিত বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে সাধারণ দুর্গাপুর বাসী তথা রাজ্যবাসীর কাছে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ সংক্রান্ত যে সব বিভ্রান্তিকর, কুরুচিপূর্ণ, উদ্দেশ্য প্রণীত মন্তব্যে করা হচ্ছে তারা কেউ তাদের সদস্য বা কর্মী নন। ওইসব কুরুচিপূর্ণ, উদ্দেশ্য প্রণীত ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের তীব্র ভাষাই নিন্দা করেন বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশন এর সভাপতি । তিনি আশা করেন, দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষ ও দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ আয়োজক কর্মকর্তারা, দুর্গাপুরের গৌরবময় দুর্গাপুর উৎসবের বিরুদ্ধে যারা কুরুচিপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা ফেসবুক পোস্ট করছেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল কেন এমন বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা প্রচার চলল ফেসবুকে। ঘটনার অন্তর তদন্ত করে জানা যায় দুর্গাপুরের অলিতে গলিতে, দোকান, বিয়ে বাড়ি, হোটেল, রেস্তোরা ও বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের বাণিজ্যিক প্রচার এর জন্য শিল্পাঞ্চলের বেশ কিছু ফেসবুক পেজ ও তাদের কর্মকর্তারা ব্যবসার সাথে যুক্ত। বাণিজ্যিক প্রচার ও প্রসার করে নিজেদের জীবিকা অর্জন করেন। তাদের মধ্যেই বেশ কয়েকজন নাকি বলপূর্বক দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ আয়োজক কমিটির সুরক্ষিত মূল মঞ্চ এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। সেখানে থাকা স্বেচ্ছাসেবকেরা তাদেরকে মূল মঞ্চের আশেপাশে যেতে বাধা দেন। এর পরেই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেন। এখানে উল্লেখ করা ভালো যে দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত রয়েছে দুর্গাপুর প্রেসক্লাব ও ‘বেঙ্গল ডিজিটাল মিডিয়া ফাউন্ডেশন এর প্রায় শতাধিক সংবাদ কর্মী। তারা যখন সবাই দুর্গাপুরের সম্মান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ আয়োজক সংস্থার সকল বাধা নিষেধ মেনে নিয়েছিলেন। তাহলে কেন ওইসব বাণিজ্যিক ফেসবুক পেজের কর্মকর্তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন ও বিভ্রান্তিকর,কুরুচিপূর্ণ, উদ্দেশ্য প্রণীত মন্তব্যে করলেন? কারা সেই সব নিম্ন মানসিকতার মানুষের ? কার অঙ্গুলি হিলনে উক্ত ওই ফেসবুক পেজ গুলি দুর্গাপুর উৎসবের গৌরবময় ইতিহাসকে কালিমা লিপ্ত করবার অপপ্রচেষ্টা চালায়?
দুর্গাপুরের এক বাসিন্দা সোমনাথ চৌধুরী এদিন পরিবার নিয়ে এসেছিলেন ‘নন্দী সিস্টার্সের’ অনুষ্ঠান দেখতে। তিনি আক্ষেপের সাথে বললেন, “যদি এই আন্তর্জাতিক মানের হ্যাঙ্গার এর ভেতরে সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা জায়গা ছেড়ে দেওয়া হতো তাহলে আর ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে নিয়ে ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠানের আনন্দ নিতে হতো না। আশা করব দুর্গাপুর উৎসব আয়োজক সংস্থার কর্মকর্তারা এ বছরে তাদের অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা মাথায় রেখে আগামী বছরে যেন আরো বড় আন্তর্জাতিক মানের হ্যাঙ্গার এর ব্যবস্থা করেবেন। সাধারণ মানুষ যাতে বসে অনুষ্ঠান দেখতে পারে। তবে তিনি এ কথাও বলেন, “যারা নিজেদের সময়, অর্থ ও পরিষেবা দিয়ে দুর্গাপুর উৎসবের মতন একটি আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান শহরকে উপহার দিয়েছে তারা নিঃসন্দেহে সাধুবাদের যোগ্য। যে যতই বলুক নিন্দা করুক দুর্গাপুর শব্দটা আমাদের পরিচয়। পিতৃ পরিচয় এর মতন সম্মান দিই আমরা দুর্গাপুরকে। তাই যে বা যারা দুর্গাপুরের নাম কে বদনাম করার চেষ্টা বা প্রচার করছেন তাদেরকে ধিক্কার জানাই। তারা নিজের পিতৃ পরিচয় এর সমান সম্মানিত দুর্গাপুর শহরের নামকে কালিমা লিপ্ত করার চেষ্টা করেছে, তারা নিজেরাই নিজেদের অজান্তে নিজেদের পিতৃপরিচয়ের অসম্মান করছেন। সেইসব নিম্নমানের মানসিকতার মানুষকে দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষ কখনো ক্ষমা করেনি, করবে না। দুর্গাপুর আমাদের প্রাণের শহর, দুর্গাপুর আমাদের রক্তে আছে, দুর্গাপুর আমাদের অভিমান। দুর্গাপুর উৎসবের জয় জয় কার হোক। এটাই হোক আমাদের সকল দুর্গাপুরবাসীর একান্ত কাম্য।”




















