মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- পশ্চিমবঙ্গে সাংবাদিক নিগৃহ ও আক্রান্তর ঘটনা এখন রোজনামচা হয়ে গিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের কোনো না কোনো জায়গায় একের পর এক সাংবাদিক হেনস্থা ও আক্রান্তের খবর আসছে শিরোনামে। শিল্পাঞ্চল আসানসোল দুর্গাপুরও একের পর এক সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিক হেনস্তা ও আক্রমণের প্রায় সবকটি ঘটনাতেই শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের নাম করে একশ্রেণীর দুষ্কৃতীরা এই আক্রমণের পেছনে বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগেই দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টারের মহকুমা আদালতের সামনে বাংলা বৈদ্যুতিক সংবাদ মাধ্যমের এক বরিষ্ঠ সাংবাদিককে চূড়ান্ত হেনস্তা করে দুর্গাপুরেই তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থক বলে নিজেকে পরিচয় দেওয়া এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ডিপিএল কলোনি এলাকায় আক্রান্ত হলেন আরেক বাংলা বৈদ্যুতিক মাধ্যমের সাংবাদিক তথা দুর্গাপুর প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সম্পাদক সঞ্জীব সুই বলে জানা গেছে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে, একজন এলাকারই মৃত ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যুর পর তার মরদেহ রেখে যখন এলাকাবাসীরা ক্ষতিপূরণের দাবি করছিলেন, ঠিক সেই সময় ওই এলাকারই বাসিন্দা সাংবাদিক সঞ্জীব সুই ঘটনাস্থলে গিয়ে খবর সংক্রান্ত ছবি ও তথ্য নেওয়ার সময় ডিপিএল এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস দলের নাম করে তোলাবাজি করা এক ঠিকাদারের দালাল সর্বেশ্বর ও তার দলবলের হাতে আক্রান্ত হন দুর্গাপুরের ওই বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই ঘটনার পরেই সঞ্জীব বাবুকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে তার আপাতকালীন চিকিৎসা শুরু করা হয়। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী তিনি অনেকটাই সুস্থ এখন, তবে তার বুকে এখনো ব্যথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত রাত্রের এই নিন্দনীয় আক্রমণের ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক সঞ্জীব সুই বলেন, “আমার বাড়ির পাশে থাকা একজন অসহায় আমার ভাতৃ সম মৃত ঠিকা শ্রমিকের খবর করতে গিয়ে আমি আক্রান্ত হলাম একজন দুষ্কৃতির কাছে। এলাকার মানুষজনদের অনুরোধ ছিল ছোট ভাই বাবলু’র ক্ষতিপূরণের সময় লেখা যখন হবে তখন যেন আমি থাকি। বাবলু যেদিন উইদাউট সেফটি মেজারস ছাড়া দুর্গাপুরের সগড় ভাঙ্গায় পোলে উঠে কাজ করতে গিয়ে যখন পোল থেকে পড়ে যায় কেউ ওর পাশে ছিল না। অবশেষে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে মৃত্যু হয় বাবলুর। বারবার ঠিকাদারকে ফোন করা সত্ত্বেও তিনি আসছিলেন না। অবশেষে তিনি এসে কোর্ট পেপারে কি লেখা হবে, কতটাই ক্ষতিপূরণ পাবে ,তার পরিবার চাকরি পাবেন কি না, এইসব একগুচ্ছ প্রশ্ন ঠিকাদার ও তার লোকজনদের সামনে রাখি। কিন্তু ঠিকাদারের সাথে থাকা একজন যিনি বারবার আমাকে বুকে ধাক্কা দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন যাতে আমি ছবি না তুলতে পারি। লোকমুখে শুনলাম তার নাম ‘সর্বেশ্বর’ তিনি একসময় এলাকার সিপিএমের নেতা ছিলেন। কালচক্রে এখন তৃণমূলের ঢুকে ডব্লুবিএসইডিসিএল এর ওই ঠিকাদার যিনি এই অন্যায়টা করেছেন দীপ বাবু বলে কোন একজন, তার পা চাটা একজন দালাল। তবুও আমি কর্মে অবিচল ছিলাম পরে বাড়িতে এসে বুকে ব্যথা শুরু হয় আমার বৃদ্ধা মাকে না জানিয়ে রাতেই আমি ভর্তি হই আমার বন্ধু বাপ্পার নার্সিংহোমে এবং আমি একটু সুস্থ হবার পর সমস্ত টেস্ট হবার পর আমাকে কোক ওভেন থানার পুলিশ বন্ধুরা আমার বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে যায়। কোক ওভেন থানার পুলিশ বন্ধুর মত আমার পাশে থেকে আমায় সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু ছোট ভাই বাবলু’র পরিবার কত টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে সেটা লেখার সময় আমাকে ছবি তুলতে দিল না তার কি আদৌ শাস্তি হবে। আমি জানি এর মধ্যে অনেক রাজনৈতিক টানা পড়েন হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস আছে পুলিশের প্রতি, রাজ্যের ঠিকা ইউনিয়নের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধিদের প্রতি, আমি তাদের উপর আস্থা রেখেছি। কিন্তু যে মানুষটা আমাকে বারবার ধাক্কা দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত চালিয়ে আমাকে ওই রুম থেকে বের করে দিলেন সেই লোকটার সাজা হবে তো ? তার প্রিয় ঠিকাদারকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি যে কাজটি আমার সঙ্গে করলেন তার প্রতিবাদ কেউ কি করবেন ? দেখি। বিশ্বাস রাখলাম সবার প্রতি।”
এদিকে বিশিষ্ট সাংবাদিক সঞ্জীব সুইয়ের প্রতি এই ঘৃণ্য আক্রমণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে দুর্গাপুরের সুশীল সমাজের মানুষজনেরা। তাদের অভিযোগ একশ্রেণীর দুষ্কৃতীরা শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের জামা গায়ে পরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা শিল্পাঞ্চলে। অবিলম্বে এইসব দুষ্কৃতীদের কুকর্ম করতে যে সকল নেতা ও রাজনৈতিক কর্মীরা সাহায্য করছেন তাদেরকে অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিক সঞ্জীব শ্রী বলেন, “হাত চালাতে আমিও পারি বা আমার মত অনেক সাংবাদিকও পারে। কিন্তু সংবিধানে এটা লেখা নেই। সাংবাদিকদের পালটা মার দেওয়ার অভিধান নেই। কারন আমরা চতুর্থ স্তম্ভ। তাই আমাদের সহনশীলতা বেশি। আমরা মার খেলে মার দিতে পারি না। কিন্তু এবার সময় এসেছে এই সংবিধান বদলানোর। মারের বদলা হবে মার। তবেই সাংবাদিকরা সুরক্ষিত থাকবে। আমরা হিংসা চাই না, বদলা চাই না। তার মানে এটাও নয় যে আমরা দুর্বল। সময় এসেছে এবার থেকে আর এসব কিছু ভাববো না। এই রকম সমস্যা যখন সামনে আসবে তখন হিসেব হবে ‘অন দ্যা স্পট’ ।”
এদিকে সাংবাদিক নিগৃহর এই ঘটনার পর নিন্দার ঝড় তুলেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের সব নেতারা। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের নাম করে একশ্রেণীর দুষ্কৃতীরা যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে তা এখন সবারই জানা। অবিলম্বে দুর্গাপুরের সুশীল সমাজের মানুষজনেরা এ বিষয়ে লিখিত রূপে রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে জানাবেন বলেও জানা গেছে ।