সংবাদদাতা, বাঁকুড়া: বাঁকুড়া শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপাড়া, লালবাজার। একসময় এই দুই জায়গায় বাস ছিল ২০০ কাঁসা শিল্পী পরিবারের। সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০’এ। তবে কাঁসা দ্রব্য বানাতে সিদ্ধ হস্ত এই কর্মকার পরিবার গুলির আদী বাসস্থান মল্লভূম বিষ্ণুপুর। কথিত আছে, মা মৃন্ময়ীর পুজোর অষ্টমীর দিন প্রথা অনুযায়ী রাজ পরিবারের তোপ দেগে পুজো শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে কর্মকারদের তোপ দেগে যায় রাজার আগে। ক্ষুব্ধ রাজার কবল থেকে বাঁচতে বিষ্ণুপুর ছেড়ে প্রথমে অযোধ্যা গ্রাম হয়ে বাঁকুড়ায় আসেন কর্মকার পরিবার। তারপর থেকেই বাঁকুড়া শহরের অন্যতম প্রাচীন পল্লী কামারপাড়ায় তৈরি হয়ে আসছে কাঁসার ঘটি,বাটি এবং থালা।
তবে কাঁসার বাসন কেনার ক্ষমতা কমেছে মানুষের। আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, স্টাইল এবং চাহিদা পরিবর্তন হয়েছে। সেই কারণে সাধারণ মানুষ ঝুঁকছে প্লাস্টিক এবং অ্যালুমিনিয়ামের দিকে। কারণ কাঁসার বাসন বানানো একটি সময়সাপেক্ষ এবং খরচ সাপেক্ষ ব্যাবসা। প্রথমে মাটির ছাঁচ তৈরি করে রোদে শুকিয়ে, মেরামত করা হয় যাতে অনভিপ্রেত ছিদ্র না থাকে। এরপর ছাঁচের তলায় গর্ত তৈরি করা হয়। এবার সেই গর্তের মধ্যে কাঁসা দিয়ে সেটাকে শুকিয়ে পালিশ করে তৈরি করা হয়। কয়লা, পাঁচ থেকে ছয়জন কারিগর, এবং বিনিয়োগ মিলিয়ে প্রতি কেজি কাঁসার বাসন কিংবা ঘটি বানাতে খরচ হয় ১৩০-১৪০ টাকা। বাজারে বানীতে ১৯০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হয় এই বাসনগুলি। এদিকে কাঁসার বাসন একটি ভাল বিনিয়োগ হতে পারে বলেই মনে করছেন শিল্পী ব্যবসায়ীরা। তবে এই শিল্প বেশিরভাগটাই নির্ভর করছে সৌখিন উচ্চ মধ্যবিত্তের উপরে। কাঁসার চাহিদা এখন অতীত। সেই কারণেই বাঁকুড়ার কামারপাড়া এখন অনেকটা শান্ত।