জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কাঁকসাঃ- একটা সময় ছিল যখন মনীষীদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে আমাদের দেশ তথা রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করত শিক্ষার্থীরা। আস্তে আস্তে সব কিছু পাল্টে যায়। মনীষীদের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালনের রেওয়াজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় উঠে যায়। তার মধ্যেও ব্যতিক্রম থেকে যায় পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা-২ নং ব্লকের আড়রা কালীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়।
যে কয়েকজন ক্ষণজন্মা মনীষীর জন্ম ও মৃত্যু দিনের তারিখ একই তাদের অন্যতম হলেন বিধানচন্দ্র রায়, রাজ্যের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৪৮ সাল থেকে আমৃত্যু অর্থাৎ ১৯৬২ সালের ১ লা জুলাই পর্যন্ত তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। চিকিৎসা জগতে তিনি ‘ধন্বন্তরী’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তাইতো তার জন্ম দিনটি ভারতে ‘চিকিৎসক দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। ভারত সরকার ১৯৬১ সালে তাকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘ভারত রত্ন’ প্রদান করে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেও তিনি এই রাজ্যের অনেক উন্নয়ন করেছেন। দুর্গাপুর, কল্যাণী, বিধাননগর, অশোকনগর এবং হাবড়া -এই পাঁচটি নতুন শহর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ হিসাবে পরিচিত।
দুর্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতাকে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য দুর্গাপুরের কাঁকসার আড়রা কালীনগর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় গত ১ লা জুলাই একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অঙ্কন ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, বৃক্ষ রোপণ, পুরস্কার বিতরণী প্রভৃতির মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় এই মহান ব্যক্তিকে। শুধু ছাত্রছাত্রীরা নয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকারাও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বেশ কয়েকজন অভিভাবকও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সমবেত ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। উপস্থিত অভিভাবক সহ অন্যান্যরা বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। বিদ্যালয়ের কচিকাচাদের পরিবেশিত আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্য উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা
বিধানচন্দ্র রায়ের জীবন ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরেন। প্রিয় শহর দুর্গাপুরকে দূষণ মুক্ত করার জন্য কচিকাচাদের নিজ নিজ বাড়িতে একটি করে গাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিক্ষিকা অন্তরা সিংহরায় ও মৌসুমী প্রধান।
প্রসঙ্গত বিদ্যালয়টিতে এখন প্রায় ২০০ জন ছাত্রছাত্রী আছে। পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের গান, আবৃত্তি পাঠ, নৃত্য, ব্যায়াম, খেলাধুলা প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। শান্তনু পাল, অন্তরা সিংহরায়, মৌসুমী প্রধান, পায়েল মন্ডল, সোনালিসা দাস, মনিদীপা রায়দের ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা অন্তরা সিংহরায় বললেন – আমাদের সবার মিলিত প্রয়াসে এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও ছাত্রছাত্রীরা যাতে তাদের মানসিক বিকাশ করতে পারে তার জন্য আমরা চেষ্টা করি। শিশুদের দেওয়ার জন্য আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অর্চনা সিংহরায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে পুরস্কারগুলি তুলে দেন। এরজন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অন্তরা দেবী তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে তিনি অন্যান্যদেরও নিজেদের সাধ্যমত এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।