নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: জামাই এমএলএ বলে কথা, তাহলে শ্বশুরের দোতলা প্রাসাদে বিদ্যুতের বিল দিতে হবে কেন? কাস্তে হাতুড়ি আর ঘাসফুল জমানা মিলিয়ে জামাই যে টানা চারবারের বিধায়ক, তাই এটুকু ফাও পাওয়াটা কি বড্ড দোষের?
যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। এমন মহার্ঘ্য জামাইবাবু থাকতে তার গাট্টাগোট্টা শ্যালকেরা আর কালবিলম্ব না করে দোতলা বাড়ির নাকের ডগা দিয়ে ঝুলন্ত সরকারি বিদ্যুতের তারে নির্দ্বিধায় মেরে দিলেন দুটি আঁকশি, ব্যাস, কেল্লা ফতে! ঘরে ফের আলোয় আলো। এনিয়ে শনিবার বিস্তর চাঞ্চল্য পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষে।
খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়িতেই হুকিং করে বিদ্যুত চুরির এই অভিযোগকে ঘিরেই এদিন তোলপাড় বর্ধমান শহরেও। এই ঘটনায় রীতিমত অস্বস্তিতে পড়েছেন খোদ বিধায়ক বাগ নিজেও। যদিও, তিনি জানিয়েছেন আইন আইনের পথেই চলবে। তার কথায়, “যেটা অন্যায়, সেটা চাপা দেওয়ার চেষ্টাও করব না। আমি আগে জানলে এরকম জিনিস চলতে দিতামনা।”
খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ি খণ্ডঘোষের তাঁতিপাড়ায়। নবীনের বাড়ীর ঢিল ছোড়া দূরত্বে। সেখানে তার নিকট আত্মীয়দের একাধিক বাড়িতে চুরি করে জ্বালানো হচ্ছে বিদ্যুত। অথচ, বাগের কাছে নাকি এমন খবর ছিলনা!
বিষয়টি নিয়ে এদিন হৈচৈ হতেই রীতিমত ভুল স্বীকার করেছেন বিধায়কের শাশুড়ি সুমিত্রা রায় ও শ্যালক অভিজিৎ রায়। সুমিত্রা রায়ের দাবী, তার প্রায় ১০ হাজার টাকা ইলেকট্রিক বিল এসেছিল। সেই টাকা দেওয়ার মতো সাধ্য নাকি তাদের নেই, তাই, তার কথা মতো, “আমার বেকার ছেলেরা দুদিনের জন্য হুকিং করেছে। তবে, লোকের যখন এতোই আপত্তি, আমরা খুলে দেব।” এদিকে, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সুর চড়িয়েছে বিজেপি। এলাকার বিজেপি নেতা শান্তরুপ দে কটাক্ষ করে বলেন, “তৃণমূল মানেই কি শুধুই দুর্নীতি? দিনকে দিন বিদ্যুতের মাশুল বাড়ার ফলে সাধারন মানুষ যখন সমস্যায় পড়ছেন, বিধায়কের পরিবারের তখন নির্লজ্জ ভাবে হেলায় হুকিং করে বিদ্যুৎ ভোগ করছে। মানুষ সবই দেখছে। এরকম লোক বিধায়ক হলে এর থেকে আর বেশী কি আশা করা যেতে পারে!” অন্যদিকে জেলাশাসক আয়েষা রাণী এ. জানিয়েছেন,এই বিষয়ে আমরা বিদ্যুৎ দপ্তরকে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলবো। অন্যদিকে, এই ব্যাপারে বিধায়ক নবীন বাগ জানান, “আইন অনুযায়ী বিদ্যুৎ দপ্তর যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে এতে আমার আর কিছু বলার নেই।”