eaibanglai
Homeএই বাংলায়কবির হোটেলকে কি সুপ্রীম কোর্টেরও ওপরে ভাবে নিগম?

কবির হোটেলকে কি সুপ্রীম কোর্টেরও ওপরে ভাবে নিগম?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর: দুর্গাপুর নগর নিগম কি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকেও তোয়াক্কা করে না, নাকি বেআইনি নির্মাণকে বৈধ বলে ঢালাও তোয়াজ করতে গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে আসলে ‘তুচ্ছ’ই মনে করেন দুর্গাপুর নগর নিগমের কেষ্ট-বিষ্টুরা?

“উনারা আদৌ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে তোয়াক্কা করেননা এমনটা কিন্তু নয়। ওনারা আসলে ‘ভগবান’ ছাড়া আর কাউকে সে রকম ভয় পান না। হোক না, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বা দেশের আইন সভায় গৃহীত কোন আইন বা ধারার চেয়েও ওনাদের কাছে ওনাদের লোকাল ‘প্রভু’ই হলেন বড় কথা,” দাবি সান্তনু মিশ্রের। এই শান্তনু আসানসোল দুর্গাপুর নগর নিগমের চেয়ারম্যান কবি দপ্তর একটি হোটেলের বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। শান্তনুর কথায়, “তথ্য জানার অধিকার আইনের নির্দিষ্ট ধারা মোতাবেক এই দুর্গাপুর নগর নিগমের কাছে ২০২৪ এর ২২ অক্টোবর কবি দত্তর ওই হোটেলের মোট এরিয়া কত স্কয়ার ফুট, এবং তার দরুন দুর্গাপুর নগর নিগম এতগুলি বছর ধরে কত টাকা মোট হোল্ডিং ট্যাক্স দাবি করেছে এবং কত টাকাই বা আদতে দুর্গাপুর নগর নিগম এ পর্যন্ত আদায় করতে পেরেছে – এসব জানতে বৈধভাবে ওনাদেরকে নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন পাঁচ মাস কেটে গেছে ওনারা কোন জবাবই দেননি বা কোন হিসাব আমাকে এখনো অব্দি দেননি।”

কেন দেননি জানতে চাইলে দুর্গাপুর নগর নিগমের এক আধিকারিক মুখের উপর বলে দিলেন,”যে যখন খুশি যা চাইবে তাকে তাই দিতে হবে নাকি? আমাদের অনেক কাজ থাকে সময় হলে ঠিক দেওয়া হবে।”
কখন সময় হবে? ওই আধিকারিকের এবার কড়া জবাব,”তার কৈফিয়ৎ দিতে হবে নাকি? দরকার হলে উনি কোর্টে যান। কোর্ট খোলা আছে।”
এতটা বিরক্ত বা ঔদ্ধত্য কেন দুর্গাপুর নগর নিগমের ওই আধিকারিকের?
“হবে না? বেশি জোরে জোরে এসব গোপন করে আগলে রাখা তথ্য জানতে চাইলে ভগবানের কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাবে যে!” – বলে হাঁফ ছাড়লেন সেই শান্তনু।

দেশজুড়ে যত বেআইনি নির্মাণ তার বৈধকরণের জন্য স্রেফ ফাইনের টাকা পুরসভায় জমা করলেই কি ওইসব নির্মাণ বৈধ হয়ে গেল? কবি দত্তর ওই হোটেলটিতে আর বেআইনি নির্মাণ কি সত্যই নেই?

দেখা যাক কি বলছে দুর্গাপুর নগর নিগম? এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে দুর্গাপুর নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “উনি তিন তিনবার ফাইন দিয়েছেন। পৌর আইন মোতাবেক আমাদের আর কিছু বলার নেই এ বিষয়ে। আমাদের তরফ থেকে আর কোন অভিযোগও নেই।” উল্লেখ্য, মুখ্য প্রশাসক নিজের মুখে কবুল করছেন কবি দত্তের বিতর্কিত সিটি সেন্টারের ওই হোটেলটির যাবতীয় বেআইনি নির্মাণের কথা। কারণ তিনি স্বীকার করছেন কবি দত্ত তিনবার জরিমানা দিয়েছেন। তাহলে কবি দপ্তর ওই হোটেলে কোন গরমিল নেই?? তা হলে তবে কি সেফ গায়ের জোরে দু-দফায় প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করে নিল দুর্গাপুর নগর নিগম? নিগমের মেয়র পদে থাকার সময় দিলীপ আগস্তি কি তবে বেআইনী জরিমানা আদায় করেছিলেন কবি দত্তর কাছ থেকে? এনিয়ে কবি কি নিগমের বিরুদ্ধে আদালতে মোকদ্দমা করেছিলেন?
না, সূত্র মোতাবেক, কবি এমন কিছু করেননি। এবিষয়ে কি বলছেন দুর্গাপুর নগর নিগমের কমিশনার আবুল কালাম আজাদ? তার কথায়,”আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং, বিল্ডিং প্ল্যান বিভাগ বিষয়টি খোঁজ নিয়েছে। আরো কিছু আইনি সমস্যা রয়েছে কিনা সেটা আমাদের আইন বিভাগ দেখছে।” শান্তনু মিশ্রের সাফ দাবি, “সময়ে সময়ে বিভিন্ন সরকারি পদে বসে বিশেষত এডিডিএ’র চেয়ারম্যানের পদে বসার পর কবি দত্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে পেছনের দরজা দিয়ে এখন সবকিছু রেগুলারাইজ করার খেলায় ব্যস্ত। উনি বা দুর্গাপুর নগর নিগম ভাবছেন ডাকাতির পর জরিমানা দিলেই সব বৈধ হয়, বোধ হয় সাত খুন মাপ হয়ে যায়!”

না। আইন মোতাবেক তা কিন্তু যায় না।

“সুপ্রিম কোর্টের এ বিষয়ে যা নির্দেশ তাতে তো এভাবে টাকা ঢাললেই সবকিছু বৈধ হয়ে যায় না। এখন কেউ যদি দেশের সুপ্রিমকোর্টকেও মানতে না চায় তাহলে আর কি বলার থাকতে পারে?” – মন্তব্য সমাজকর্মী সুব্রত মল্লিকের।

কি বলেছে তবে সুপ্রিম কোর্ট?

সুপ্রিম কোর্টের দুই বরিষ্ঠ বিচারপতি জে. বি. পাদ্রীওয়ালা এবং আর. মহাদেবানের বেঞ্চ একটি মামলার রায়দানে স্পষ্ট উল্লেখ করেন – ‘সেফ টাকা বা জরিমানা দিলেই কোন বেআইনি নির্মাণ বৈধ বলে গ্রাহ্য কর যাবে না।’ দুই বিচারপতির নির্দেশ – ‘যদি আগে কোন বেআইনি নির্মাণ হয়ে গিয়েও থাকে তা দ্রুত সংশোধন করতে হবে। দরকার হলে ওই নির্মাণের বেআইনি অংশ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে হবে।’

বিচারপতিদের আরো কড়া নির্দেশ- ‘ওইসব বেআইনি নির্মাণ বহাল তবিয়তে বজায় রাখার জন্য যে সব সরকারি আধিকারীকের যোগসাজস্ পাওয়া যাবে তাদের কেউ জরিমানা করতে হবে।’ জনৈক্য রাজেন্দার বরজাতিয়ার করা একটি বাণিজ্যিক ভবনের বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের এই দুই বিচারপতির ওই বেঞ্চ ৩৬ পাতার একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন গত ২০২৪ এর ১৭ই ডিসেম্বর।

তাহলে? নগর নিগম বা কবি দপ্তর ওই হোটেল বা কবির এডিডিএ কি দেশের সুপ্রিম কোর্টেরও উর্ধ্বে – প্রশ্ন জনমানসে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments