eaibanglai
Homeএই বাংলায়উৎসব মরশুমে আন্দোলন, নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা। বাঙালি মানবে তো?

উৎসব মরশুমে আন্দোলন, নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা। বাঙালি মানবে তো?

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, মানুষের মতামত -: স্বতঃস্ফূর্ত গণ আন্দোলনে নিজেদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত সেটা নির্ণয় করতে চরম ব্যর্থ হলো সিপিএম নেতৃত্ব। ৩৪ বছরের অন্ধকারময় রাজত্বকালে মানুষের হাতে হাতে ঘুরত না স্মার্টফোন। ফলে নিজেদের আমলে ঘটে যাওয়া একের পর এক কুকীর্তিগুলো সহজেই তারা লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল। এছাড়া প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদকারীর কপালে নেমে আসত চরম দুর্দশা। যতই কিছু রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হোক হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে বাম ও অতিবাম দলগুলোর উস্কানি লুকিয়ে রাখা যাচ্ছেনা। চুলকানির মত বেরিয়ে আসছে।

সমস্যার সমাধানে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের টালবাহানা বা নিত্যনতুন দাবি তোলা সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়। তারা বুঝতে পারছে সমাধানের পরিবর্তে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নির্দেশে আন্দোলনকে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চাওয়া হচ্ছে।

এখন আবার এটাও সামনে আসছে সরকারি হাসপাতালে গরীব মানুষের বিনামূল্যে বা স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালে কম খরচে চিকিৎসা স্বাস্থ্য ব্যবসায়ী কর্পোরেট সংস্থা ও ফার্মা কোম্পানিগুলো মানতে পারছেনা। তারা জুনিয়র ডাক্তারদের ব্যবহার করে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুরোপুরি নষ্ট করার চেষ্টা করছে, অশান্তি জিইয়ে রাখতে চাইছে। যতই আরজি করের ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের শাসকদলকে জড়ানোর চেষ্টা করা হোক গরীব মানুষ শুধু স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের মাধ্যমে কম খরচে চিকিৎসার কথা বোঝে।


বিষয়টি পরিস্কার হতেই জুনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি সিপিএমের উপরও সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন থেকে তারা সরে আসছে। আন্দোলনে ভিড় পাতলা হচ্ছে। ফে.বু বিপ্লবীদের সংখ্যা কমছে। তাদের মনেও ভয় ধরেছে – উৎসবে না’ বলে পোস্ট করছি ঠিকই কিন্তু প্যাণ্ডেলে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার ছবি তুলে কেউ যদি ফে.বু-তে পোস্ট করে দেয় তখন কী হবে! কী লজ্জা!

ইতিমধ্যে একটা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ১৪ ই আগস্ট রাত দখলের রাতে যারা আরজি করে ভাঙচুর করেছিল তারা কারা? সমাজ মাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছিল কেন তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আনা হচ্ছেনা বা শাস্তির দাবি উঠছে না? ভাঙচুরের সঙ্গে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা যুক্ত ছিল এটা প্রমাণ করতে পারলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ত শাসকদল। বিরোধী দলগুলোর নীরবতা অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে!

এদিকে দুয়ারে হাজির দুর্গোৎসব, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। এরসঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির আবেগ, বহু মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্ন। ব্যবসার দিকটা বাদ দিলেও দ্যাখা যায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করছে। এর ব্যাপকতা দেখে ইউনেস্কো পর্যন্ত স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে।

অথচ ‘উৎসবে না’ হিড়িক তুলে পুজোর সময় আন্দোলনের নামে একটা অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এই অশান্তির পেছনে আছে সিপিএম বা অতিবামরা- এটাও স্পষ্ট। ব্যক্তিগত জীবনে সমস্ত ধর্মীয় আচরণ পালন করলেও অপরের ক্ষেত্রে একমাত্র এই দলটি বিরোধিতা করে। যদিও এরাই পুজো প্যাণ্ডেলের পাশে ‘স্টল’ করে দলীয় মুখপত্র নিয়ে বসে পড়ে।

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে এইরাজ্যের পাশাপাশি দেশের অন্য রাজ্যেও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে, সেই রাজ্যের বাসিন্দারা তাতে অংশ নিয়েছে। কিন্তু কোথাও ‘উৎসবে না’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছেনা। হয়তো এই কারণেই বাঙালি শব্দের আগে ‘আত্মঘাতী’ বিশেষণটা ব্যবহার করা হয়।

আরজি করের নৃশংস কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীর শাস্তি দাবি করা হলেও ‘উৎসবে না’ কর্মসূচিতে বাঙালি সামিল হবে বলে মনে হয়না। তারা সিপিএমের অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টাকে মেনে নেবেনা। অপরাধীর শাস্তি সবাই চাইলেও উৎসব মরশুমে অশান্তি কেউই চায়না। অশান্তির মাধ্যমে নিজেদের প্রাসঙ্গিক রাখার চেষ্টা করে সিপিএম শেষপর্যন্ত হয়তো এইরাজ্য তথা দেশ থেকে চিরতরে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে পারে। এই সম্ভাবনা প্রবল।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments