জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা -: এইরাজ্যে সংগঠনহীন বিজেপি ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ১৮ টা আসন পায়। এটা যে নিছক ‘ফ্লুক’ ছিল সেটা পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব দায়িত্ব নিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে। নির্বাচনে জিততে হলে যেকোনো রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন শক্তিশালী সংগঠন ও একজন দক্ষ নেতা। এইরাজ্যে বিজেপির কোনোটাই নাই এবং এটাই চরম বাস্তব।
সংগঠনের পরিবর্তে বিজেপির কর্মীরা বড্ড বেশি নির্ভর করে মোদির জনপ্রিয়তার উপর। প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে মোদি সত্যিই কতটা জনপ্রিয় সেটা তারা একবারের জন্যও বিবেচনা করেনি। বিধানসভা ভোটে শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলোর কাছে মোদির তথাকথিত জনপ্রিয়তা বারবার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।
এইরাজ্যে বিজেপির যেসব নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে দলকে প্রাসঙ্গিক রেখেছিল ২০২১ সাল থেকে তাদের অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়ে দল তৃণমূল থেকে আগত শুভেন্দুর উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে দলের পুরনো দিনের কর্মীরা অপাঙক্তেয় হয়ে পড়ে। বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যর্থ শুভেন্দু সংগঠন গড়ার পরিবর্তে আদালতমুখী বেশি হয়। ফল সবার জানা।
আরজি করের নৃশংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সিপিএমের যুব সংগঠনের দলীয় পতাকা দেখে দিশেহারা শুভেন্দু অস্তিত্বহীন ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ এর নামে নবান্ন অভিযানের ডাক দেয়। শত প্ররোচনাতেও পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। সমস্ত দৃশ্য রাজ্যের মানুষ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করে। অভিযান ব্যর্থ হয়। সঙ্গে শুভেন্দুকে আরও দিশেহারা করে দেয়।
নবান্ন অভিযানের সঙ্গে শুভেন্দুর নাম জড়িত থাকায় কারণ ছাড়াই পরেরদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বাংলা বন্ধের ডাক দেন। বনধ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। সংগঠনহীন বিজেপির দৈন্যদশা ফুটে ওঠে। দলের গোষ্ঠী কোন্দল স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এই আন্দোলনের পেছনে অতিবামদের ভূমিকা সামনে আসতেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য ভেসে আসতে থাকে। এতে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়ে ওঠে। একে রাজ্যে দলের সংগঠন বলে কিছু নাই। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আচরণে কর্মীরা দিশেহারা হয়ে দলীয় পতাকা হাতে তুলতে ভুলে যাচ্ছে।
কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও দল হিসাবে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেনি। ফলে এইরাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল হলেও তাদের ভূমিকাটা অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মত হয়ে গ্যাছে। এমনিতেই দু’একজন সাংসদ সম্পর্কে হাল্কা কানাঘুষা ওঠে। তারা জানে এই পরিস্থিতিতে কড়াকড়ি করতে গেলে বিপদ হতে পারে। এছাড়া কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপর কেন্দ্রে বিজেপির শাসনের মেয়াদ নির্ভর করছে।
সবমিলিয়ে এইরাজ্যে বিজেপির পরিস্থিতি ভাল নয়। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলো কাজে লাগিয়ে যেটুকু প্রাসঙ্গিক থাকা যাচ্ছিল তারও ‘ভ্যালিডিটি’ শেষ হতে চলেছে। কংগ্রেসের মত তারাও হয়তো এইরাজ্যে সাইনবোর্ড সর্বস্ব হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে তাদের ফিরে আসা কঠিন। দলে তো কোনো মমতা ব্যানার্জ্জী নাই!