জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হলো ‘ম্যাগাজিন’। ছাপার অক্ষরে যখন ওরা নিজের লেখা গল্প বা কবিতার সঙ্গে নিজের নাম দ্যাখে তখন তাদের মধ্যে আলাদা এক অনুভূতি কাজ করে। আবার সেই ম্যাগাজিন যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের হয় তাহলে তো সেটা আলাদা মাত্রা পায়। সাধারণত সেই ম্যাগাজিন হয় বাংলা ভাষা বিভাগের এবং তাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ ও ব্যস্ততা চোখে পড়ার মত। ব্যতিক্রম ঘটলনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ’-এর ক্ষেত্রে।
করোনা অতিমারী পত্রিকার চলার পথে সাময়িক বিঘ্ন ঘটালেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের পড়ুয়ারা পত্রিকা প্রকাশের জন্য এই বছর প্রবল উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারই ফলশ্রুতিতে গত ২৩ শে মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী আশাপূর্ণা দেবী কক্ষে প্রকাশিত হয় ‘বাতায়ন’ পত্রিকা। একইসঙ্গে পালিত হয় রবীন্দ্রজয়ন্তী। যদিও গতবছর একই নামে ‘দেওয়াল পত্রিকা’র হাত ধরে নতুন করে পথচলা শুরু হয়। এবছর অবশ্য সবার আগ্রহে ‘ই-পত্রিকা’র সঙ্গে সঙ্গে ছাপার অক্ষরে ‘বাতায়ন’ ঘরের বাতায়ন দিয়ে উঁকি দিয়ে দিনের আলোর মুখ দ্যাখে।
বিদায় নেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’বছরের ফেলে যাওয়া স্মৃতি মুছে যাওয়ার পরিবর্তে নিজেদের হৃদয়ে রঙে রঙে ছবি আঁকার তাগিদে পত্রিকা প্রকাশের ভাবনাটা সংশ্লিষ্ট বিভাগের ছাত্রী রিমা ভট্টাচার্যের মাথায় আসে। মাত্র কয়েদিন পর বিদায় নেওয়ার বিষণ্নতা সবাইকে যখন গ্রাস করেছে, মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে ঠিক তখনই রিমার প্রস্তাব সবার মনে নতুন করে আনন্দের সৃষ্টি করে। পত্রিকা প্রকাশের ভাবনাটা বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সময় লাগেনা। লেখা সংগ্রহ থেকে ছাপা – পথটা দীর্ঘ ও জটিল হলেও নিজ বিভাগের অধ্যাপকদের আশীর্বাদ ও সহযোগিতা চলার পথটা অনেক সহজ করে দেয়। প্রচুর ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেদের প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য তারা বাতায়নের জন্য কলমও ধরেছেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীহারিকা, খোকন, গৈরিক, সৌভিক, তনয়, রিমারা সহপাঠীদের কাছ থেকে কবিতা, অনুগল্প, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ সংগ্রহ ও সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অঙ্কন ও ফটোগ্রাফি নির্বাচনের কাজ যৌথভাবে ভাগ করে নেয় অর্হনা, পূজা, আইমান, তিয়াশা, এমিলি, পৌলমী, মনোময়, দীপা প্রমুখরা। অন্যদিকে সহপাঠীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ কাজটি করে তৃষা, তমাল, প্রত্যুষা, ঋতুজারা। চয়ন, সায়ন, প্রান্তিকা, মৌমিতাদের পাশে নিয়ে দেওয়াল পত্রিকার ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে অনামিকা। পিছন থেকে সমস্ত কাজটি নিখুঁতভাবে পরিচালনা করেছে রুদ্রজিৎ দাস ঠাকুর। অবশেষে বাংলা বিভাগের প্রত্যেকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবের রূপ পায় ‘বাতায়ন’। সৃষ্টির আনন্দে একরাশ খুশি ঝরে পড়ে ওদের চোখেমুখে।
‘বাতায়ন’-এর পক্ষ থেকে প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রুদ্রজিৎ বলল- বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা কঠিন কাজ হলেও সবার আন্তরিকতার জন্য সেটা সহজ হয়ে ওঠে। স্বাভাবিক নিয়মে কয়েকদিন পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু থেকে যাবে আমাদের স্মৃতি। কোন এক মন খারাপ করা অলস বিকেলে ‘বাতায়ন’ ফিরিয়ে দেবে সেদিনের আনন্দ। ওর মধ্যেই খুঁজে পাব বন্ধুদের। কথা বলতে বলতে আবেগে চোখের কোণ ভিজে ওঠে রুদ্রজিতের।