জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- একটাই শব্দ / শুনলেই জব্দ/ মেয়েদের চোখে আসে জল/ কী সেই অক্ষর / মমতার সাক্ষর – ঠিক তাই, আধুনিকা বা প্রাচীনপন্থী, প্রতিটি বিবাহিতা নারীর চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা নিজের গর্ভজাত সন্তানের মুখ থেকে ‘মা’ ডাক শোনা এবং এই একটা শব্দ শোনার জন্য তার আকুল হৃদয় ব্যাকুল হয়ে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত সবার সেই সৌভাগ্য হয়না।
বিয়ের দীর্ঘদিন পরেও সন্তান না হওয়ায় একরাশ কষ্টের মেঘ ঘিরে ফেলে কলকাতার বেলিয়াঘাটার মণ্ডল দম্পতি কাজল-রীতার মনকে। সন্তান কামনায় স্বামীর হাত ধরে রীতা দেবী তীর্থে তীর্থে ঘুরতে থাকেন। ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনি এসে পৌঁছান জগন্নাথ দেবের পুরীধামে। জনৈক সাধুর পরামর্শে সেখান থেকেই ‘গোপাল’ -এর মূর্তি সংগ্রহ করে বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই ঘটা করে নিজের বাড়িতে রীতা দেবী পালন করে চলেছেন হিন্দুদের পবিত্র উৎসব জন্মাষ্টমী- কৃষ্ণ ‘গোপাল’ এর পুজো।
এরপরই ঘটে যায় অলৌকিক ঘটনা। তার কোল আলো করে আসে বহু কাঙ্ক্ষিত সন্তান। রাখালরাজ ‘গোপাল’ এর পুজো করে এবং তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেরিয়ে সন্তান লাভ করেন বলে তিনি আদরের ‘গোপাল’ এর নাম রাখেন তীর্থরাজ।
এসব প্রায় একত্রিশ বছর আগের ঘটনা। হিন্দুদের বিশ্বাস ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথিতে দেশ জুড়ে পালিত হয় জন্মাষ্টমী। গত একত্রিশ বছর ধরে ব্যতিক্রম ঘটেনি রীতা দেবীর গৃহে।
পুজোর আগের দিন অর্থাৎ ৬ ই সেপ্টেম্বর রাত থেকেই সাজো সাজো রব। রীতাদেবী একা হাতে ৫২ টি পদ সহ ‘গোপাল’ এর ভোগ প্রস্তুত করেন। মাঝে মাঝে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় স্বামী ও সন্তান। পুজোর শেষে পাড়ার প্রতিটি বাড়ির ‘গোপাল’ এর হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ভোগ।
প্রশ্ন করতেই আদরের ‘গোপাল’ তীর্থকে আদর করতে করতে রীতা দেবী বললেন- সন্তানের মুখে ‘মা’ ডাক শোনার আকুলতা নিয়ে ব্যাকুল হয়ে ছুটে গেছি বিভিন্ন তীর্থস্থানে। আমার বিশ্বাস গোপাল’ এর আশীর্বাদে কামনার ধন লাভ করেছি। তাইতো আজও ভক্তি সহকারে জন্মাষ্টমী পালন করে চলি। এরমধ্যে কুসংস্কার কিছু নাই, আছে গভীর বিশ্বাস। শত কর্ম ব্যস্ততার মধ্যেও কাজল বাবুও গোপালের পুজোর সময় স্ত্রীর পাশেই থাকেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
অন্য দিকে আধুনিক প্রজন্মের প্রতিনিধি ম্যানেজমেন্টের ছাত্র তীর্থরাজ বললেন – আজকের দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। সত্যি বলতে মায়ের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে আমাদের খুব ভাল লাগে। পুজোর সময় গরদের শাড়ি পড়া মা’কে দেখে মনে হয় ‘গোপাল’-এর মা যশোদা তার সন্তানের জন্য এভাবেই মঙ্গল কামনা করতেন। এ-এক আলাদা অনুভূতি, আলাদা আনন্দ। অন্ধ কুসংস্কার নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সন্তান কামনায় ব্যাকুল এক মায়ের গভীর বিশ্বাস।