সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ- সোনামুখী পৌরসভা এলাকায় কয়েকশো পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বনদপ্তরের জায়গায় বসবাস করছেন। কিন্তু তাদের জমির কাগজপত্র সঠিকভাবে না থাকায় সরকারি আবাস যোজনা বাড়ি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা, ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের। পৌরসভার অধীনে বসবাসকারী কয়েকশো পরিবারকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে প্রশাসনিক বৈঠকে নির্দেশ দেন আলোচনার মধ্য দিয়ে সেই সমস্ত পরিবারগুলিকে জমির পাট্টা দিতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশকে কার্যকর করতে পৌরসভার উদ্যোগে বনদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে সেই সমস্ত পরিবারগুলিকে চিহ্নিতকরণ এবং পাট্টা প্রদান এর কর্মসূচি। আর সে মতোই দীর্ঘ কয়েক দশক পর জমির পাট্টা হাতে পাওয়ার আশায় খুশির হাওয়া বনদপ্তর এর জায়গায় বসবাস করে স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবারগুলোর পাশে থেকে তাদের জন্য লড়াই চালিয়ে গেছেন সোনামুখী পৌরসভার পৌরপিতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়। অবশেষে তার উদ্যোগে এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় পুরো ভোটের আগেই তারা হাতে পেতে চলেছে জমির পাট্টা স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া গ্রামের আট থেকে আশি সকলের মধ্যেই। সুনন্দন ব্যানার্জি নামে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলেন, বিগত ৩০-৩৫ বছর ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি, যেহেতু এটা ফরেস্টের জায়গা সে কারণে সমস্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। সুতরাং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উদ্যোগ নিয়েছেন এর আগে কোন সরকার নেননি এই উদ্যোগে আমরা আনন্দিত। যে সমস্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা এতদিন পর্যন্ত বন্ধ ছিল সেগুলো মমতাদির উদ্যোগে সেই সুযোগ সুবিধা গুলো পেতে চলেছি। কাজল কর নামে অপর এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। এর আগে যাদের ভোট দিয়েছি তারা আমাদের জন্য কোন কিছুই করে দেননি, কিন্তু সোনামুখী পৌরসভার পৌরপিতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়কে আমরা ভোট দেবো বলে ঠিক করেছিলাম তখন উনি এখানে কথা দিয়েছিলেন আমাদেরকে জমির পাট্টা করে দেব, তিনি তার কথা রেখেছেন। এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা করে দিচ্ছেন কি বলে য়ে তাকে ধন্যবাদ জানাবো তা বুঝে উঠতে পারছিনা। তবে আগামী দিনে স্থানীয় বাসিন্দারা পৌরপ্রধানের সাথেই আছে বলে জানান তিনি। তবে বিরোধীরা এটিকে রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না। সোনামুখী পৌরসভার প্রাক্তন পৌর প্রধান তথা সিপিএম নেতা কুশল ব্যানার্জি এটিকে রাজনৈতিক চমক ছাড়া আর কাছুই দেখছেন না। তিনি বলে, গত পৌর নির্বাচনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে পৌর প্রধান যখন কনটেস্ট করতে যান তখন বলেছিলেন আমি সব পাট্টা করে দেব। পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি । আবার ভোট লেগেছে আবার পাট্টা উপর নড়াচড়া হচ্ছে, সার্ভে হচ্ছে, আদৌ হবে কিনা বা আদৌ বিশবাঁও জলে বলে মনে হয়। ভোটের সময় কোন কাজ তড়িঘড়ি করা মানে ভোটের ইঙ্গিত বহন করে এতো বাচ্চা ছেলেও বোঝে। অপরদিকে পৌর প্রধানের এই উদ্যোগকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করেছেন সোনামুখীর নগর মন্ডলের বিজেপির সভানেত্রী সম্পা গোস্বামী। তিনি বলেন, সোনামুখী পৌরসভার নির্বাচনকে মাথায় রেখে উনারা কলা-কৌশল করছেন এবং বিভিন্নভাবে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এখনো দিচ্ছেন। জানি না তারা এটাতে কতটা সফল হতে পারবে। এটাকে ভোট আদায়ের কৌশল বলে মনে করেন তিনি। বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সোনামুখী পৌরসভার পৌরপিতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই কাজগুলো বন্ধ ছিল। এবারের প্রশাসনিক বৈঠকে আমি এটা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিতে নিয়ে আসি। উনি তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দেন এবং সে মাফিক কাজ শুরু হয়েছে, জেলা প্রশাসনও তৎপর। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দীর্ঘদিনের যে চাহিদা পূরণ হচ্ছে এতে আমরাও খুশি। কারণ এই সমস্যাগুলি থাকার জন্য সরকারি নানান প্রকল্প থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছিল তাদেরকে সুযোগ সুবিধা গুলো আমরা দিতে পারছিলাম না, এবার থেকে আমরা তাদেরকে সুযোগ-সুবিধা দুহাত ভরে দিতে পারব। যারাই দীর্ঘদিন বনদপ্তর এর জায়গায় বসবাস করছেন তারাই জমির পাট্টা পাবেন এটাই মুখ্যমন্ত্রীর ডাইরেকশন বলে জানান তিনি। তবে বিরোধীরা এটা নিয়ে যাই প্রচার করুক না কেন অবশেষে স্থানীয় বাসিন্দারা তারা জমির পাট্টা পেতে চলেছেন ফলে দীর্ঘদিনের তাদের সমস্যা দূর হচ্ছে উপকৃত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সকল স্থানীয় বাসিন্দারা পৌরপ্রধানের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।