সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- একবার একজন স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজকে প্রশ্ন করেছিলেন,“আপনি লিখেছেন যে স্কুলের প্রথম পরীক্ষায় শুন্য পেয়েছিলেন। আর জীবনের 85% ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন। এ সত্ত্বেও আপনি এতো আনন্দে থাকেন কীভাবে?” স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ বলছেন যে, পৃথিবীতে সবচেয়ে আনন্দে কারা রয়েছে? এক বছরের শিশু আর ব্রহ্মজ্ঞানী মানুষ। অর্থাৎ যাদের সম্পদ সবচেয়ে কম তারাই সবচেয়ে সুখী। জীবনের এই রহস্যটা লক্ষ্য করেছেন? আর যাদের সব রয়েছে, যেমন ধনী শিল্পপতি পলিটিসিয়ান, তাদের টেনশন সবচেয়ে বেশি।”
স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ আরও বলেছেন,“এবার আপনার আসল প্রশ্নে আসি। সিসিফাসের গল্পটা শুনেছেন? পাথর ঠেলে-ঠেলে পাহাড়ে ওঠার চেষ্টা করতো। কিন্তু শীর্ষে ওঠার কিছু আগেই পাথরটা নীচে গড়িয়ে পড়ে যেতো। হতাশ হয়ে সিসিফাস নীচে নেমে আবার পাথরটা ঠেলে-ঠেলে উপরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করতো। সিসিফাসের জায়গায় আমি হলে হতাশ হতাম না। কেন? পথের মাঝে-মাঝে আমি দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতাম, fresh air নিতাম, রাস্তার পাশে ফুলগাছে হাত দিতাম, নীচে তাকিয়ে দেখতাম যে অনেক পথ আসতে পেরেছি। চারদিকে এতো সৌন্দর্য, আনন্দের এতো পশরা, অতীতের সাফল্য, প্রাণভরে অনুভব করতাম। হতাশ হবো কেন? আর পাথর? ওটা তো ততক্ষণই ভারী যতক্ষণ আমি একে গুরুত্ব দিচ্ছি। 2-1 বার চেষ্টা করে পাথরকে বলে দিতাম, তোমার ইচ্ছে হয় থাকো না হয় যাও, আমি এখন গান গাইবো কিংবা চকলেট খাবো। এই দেখুন না, গতকাল রাতে ঘুম আসছিল না কিছুতেই। মনে-মনে চলে গেলাম নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে। প্রচুর লোক সেখানে, হাউসফুল, বাইরেও হাজার হাজার শ্রোতা। “সোমেশ্বরানন্দ নাইট” প্রোগ্রাম। আমি সোজা স্টেজে উঠেই গান শুরু করলাম — এতো আলো আর এতো হাসি-গান রয়েছে ভুবন জুড়ে । এই হলো আমার পলিসি।”
মহারাজ সবশেষে বলেন“ জীবনে দুঃখ থাকেই, একটা যায় তো অন্যটা আসে। যেমন আপনার পাশের ফ্ল্যাটের মাসিমা। যখন তখন এসে বলবেন : কাজ করছিস? আপনি ব্যস্ত কিন্তু তিনি বসে গল্প শুরু করে দিলেন। এখন থেকে দুঃখ পেলে ভাবুন যে মাসিমা কি পিসী এসেছে। আমার আরেকটা টেকনিক সব পরিস্থিতিতেই আনন্দ খোঁজা। মন আনন্দে রাখার মানে দুঃখের দরজা বন্ধ। এই যে এখন ফেসবুকের জন্য পোস্ট লিখছি, লেখার মাঝে-মাঝেই চেয়ারে হেলান দিয়ে নিজেকে প্রশংসা করে বলছি “সোমেশ্বরানন্দ তুই এক জিনিয়াস, এতসব idea তোর মাথায় আসে কি করে?” এভাবে নিজেকে নিজেই উৎসাহ দিচ্ছি। একটা বিষয় লক্ষ্য করুন। দুঃখের সময় আপনি হতাশ হন সাধারণত। কিন্তু অন্য angle থেকে দেখলে হয়তো নতুন কোনো সুযোগ চোখে পড়তে পারে। এভাবে একটু চেষ্টা করুন না। মজার খেলা এটা। করে দেখুন। সাধারণ মানুষের কাছে অসাধারণ ব্যবহার আশা করেই আমরা দুঃখ পাই।”





