সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া বারণ। কিন্তু কেন এই নিষেধ? তা আমরা অনেকেই জানি না। কুল না খাওয়ার পিছনে একটি পৌরাণিক গল্প রয়েছে, তা অন্য কোনদিন বলব। আজ বরং বলি বাস্তবিক বা মানবিক দিক। কেন শিশুদের ছোট থেকেই সরস্বতী পূজার আগে কুল খেতে মানা করা হয়? কেন তাদেরকে শেখানো হয় যে পুজোর আগে যদি কেউ ভুল করে কুল খেয়ে নেয় তাহলে তাদের ওপর মা সরস্বতী রেগে যাবেন আর যার ফলে তাদের পরীক্ষায় ফল খারাপ হবে? কেন গুরুজনরা এই শিক্ষা দেন? এই ভয় মূলক শিক্ষা দেওয়ার কি আদৌও কোনও উদ্দেশ্য আছে?
আসলে ছাত্রদের ক্ষেত্রে বলা হয় যে তাদের জন্য অধ্যয়ন বা অধ্যাবসায় হল তপস্যাস্বরূপ আর এই তপস্যার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে ত্যাগ, সংযম, ধৈর্য্য- এইসবের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয় কুল ফল। কারণ কুল অত্যন্ত লোভনীয় সুস্বাদু একটি ফল। গাছে কুল দেখলে সেটা অপক্ব অবস্থাতেই খেতে চায় শিশুরা আর পাকা কুল হলে তো কথাই নেই, লোভ সামলানো দায় হয় সকলের পক্ষেই। যে কোনো বয়সের মানুষই পাকাকুল খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত করতে পারে না, সে ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফলের ভয় দেখিয়ে শিশুদের কুল খাওয়া নিষেধ করা হয় । আসলে কিন্তু পরোক্ষভাবে তাদের লোভ সংবরণ করতে শেখানো হয়। তারা এর মাধ্যমে ধৈর্য্য ধরতে শেখে আর শেখে সংযম। এই সংযম ধৈর্য আর লোভ ত্যাগের মধ্য দিয়েই মা সরস্বতী অর্থাৎ জ্ঞানের আরাধনা পূর্ণ হয়।
অন্যদিকে লোভ হলো নরকের দ্বার। এইভাবে নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে ভয়ের মধ্য দিয়ে লোভ প্রশমিত করার শিক্ষা দেওয়া হয় সনাতন শাস্ত্রে, ছোট থেকেই শিশুদের দেওয়া হয় সংযম আর ধৈর্যধারণের শিক্ষা। এছাড়া পৌরাণিক গল্প তো আছেই। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোণ টুকু ব্যাখ্যা করে আজকে আমি এটুকু বোঝাতে চাইলাম যে সনাতন ধর্মে প্রচলিত যে কোনও প্রথাকে কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেওয়ার আগে জানুন আসল সত্য, নিজে বিচার করুন, যাচাই করুন।