সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- লোক শিক্ষার জন্য সারদা দেবী ব্রত উপোস করতেন। শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের শেষ সময়ে তার যখন কঠিন অসুখ, ডাক্তাররা আর কোনও আশার আলো দেখাতে পারছেন না, তখন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের রোগ নিরাময়ের জন্য শৈব তীর্থ তারকেশ্বরে গিয়ে তিনি দুইদিন হত্যা দিয়ে পড়েছিলেন। দুইদিন উপবাস করে মন্দিরের চাতালে পড়ে থাকার পর পরেরদিন রাতে তাঁর মনে একটা অদ্ভুত বৈরাগ্য ভাবের উদয় হল। তাঁর মনে হল, ‘এ জগতে কে কার স্বামী ? এ সংসারে কে কার? কার জন্য আমি এখানে প্রাণহত্যা করতে বসেছি?’ সব মায়া কাটিয়ে তিনি সেই রাতেই উঠে এক গণ্ডূষ জল মুখে দিয়ে উপোস ভাঙলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের তিরোধান হয়ে গেলে এক সাধুর নির্দেশ অনুযায়ী তিনি পঞ্চতপা ব্রত করেন। চারদিকে চারটি অগ্নিকুণ্ড ছিল ও মাথার উপরে ছিল সূর্যের প্রখর তেজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঐ চারটি অগ্নিকুণ্ডের মাঝখানে বসে নিরন্তর ভগবানের নাম জপ করতেন তিনি। সাতদিন এইভাবে করার পর তাঁর ব্রত সমাপ্ত হল। সেইসময় আগুনে তার শরীর ঝলসে গেল, গায়ের রং পুড়ে কালো ছাই হল। কিন্তু তিনি কখনও তপস্যার অহঙ্কার করেন নি, তপস্যার অহঙ্কার ত্যাগ করাও একপ্রকার তপস্যা আর সেই তপস্যাতেও সিদ্ধা ছিলেন সারদা দেবী।
পরবর্তীতে কখনও কেউ সারদাদেবীর কাছে তাঁর পঞ্চতপা ব্রত-অনুষ্ঠানের কথা প্রসঙ্গ তুললে সারদা দেবী সেই নিদারুণ কৃচ্ছসাধনকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে সহজভাবেই বলতেন : ‘পঞ্চতপা-টপা, এসব মেয়েলী, যেমন ব্রত সব করে না ?’ এই কঠোর ব্রত পালন বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘তপস্যা দরকার… পার্বতীও শিবের জন্য করেছিলেন…তবে এসব করা লোকের জন্য। নইলে লোকে বলবে, ‘কই সাধারণের মতো খায় দায় আছে।’ আজন্ম তপস্বিনী হলেও সারদা দেবী শ্রী রামকৃষ্ণের মত কোন কিছু ভাঙেন নি, বরং সবকিছুকে মিলিয়ে মিশিয়ে সবকিছুর মধ্যে সামঞ্জস স্থাপন করেছেন।





