eaibanglai
Homeএই বাংলায়মহালয়া - পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনার দিন

মহালয়া – পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনার দিন

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- রাত শেষ হতে না হতেই মহালয়ার ভোরে রেডিওতে শোনা যাবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ কাহিনী, অন্যদিকে গঙ্গা নদীতে স্নান করার জন্য শুরু হবে ভিড়। যেখানে কাছাকাছি গঙ্গা নাই সেখানকার জনগণ নদী বা জলাশয়ে গিয়ে ভিড় করবে। এই স্নান অন্যান্য দিনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মহালয়ার পূণ্য দিনে তর্পণ করার মাধ্যমে পিতৃপুরুষদের আত্মাকে স্মরণ করা হয় ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এইদিন দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করার জন্য মর্ত্যে আগমন করেন, পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে ও দেবীপক্ষের শুরু হয়, চণ্ডীপাঠ’ করে দেবী দুর্গাকে বরণ করে দুর্গাপুজোর সূচনা করা হয়। দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে মহালয়া পালিত হয়।

‘মহালয়া’ শব্দটি সংস্কৃত ‘মহা’ ও ‘আলয়’ থেকে এসেছে – যার অর্থ ‘মহান আবাস’। মূলত ‘মহালয়’ বলতে প্রয়াত আত্মাদের সমাগমকে বোঝায়। তবে ‘মহালয়া’ নিছক একটি তিথি নয়, এটি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা ও অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীক। 

মার্কণ্ডেয় পুরাণের ‘দেবীমাহাত্ম্য’ অংশে ‘মহালয়া’র ধারণাটি পাওয়া যায়। ব্রহ্মার কাছ থেকে অজেয় বর পাওয়া সত্ত্বেও কীভাবে মা দুর্গা রাক্ষস রাজা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন সেই কাহিনীর বর্ণনা এখানে আছে।

সব কিছু ধ্বংস করতে করতে মহিষাসুর স্বর্গের দিকে অগ্রসর হন। তাকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়ে দেবতারা স্বর্গ ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ব্রহ্মা সহ অন্যান্য দেব স্মরণাপন্ন হন। তখন সমস্ত দেবতার দেহ থেকে এক ঐশ্বরিক আলো বেরিয়ে এসে দেবী দুর্গার সৃষ্টি হয়। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর সহ সকল দেবতা অস্ত্র দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলেন। শুরু হয় দুর্গা ও মহিষাসুরের মধ্যে ন’দিন ধরে ভয়ংকর যুদ্ধ। দশম দিনে মা দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। এই কারণেই নয় দিন ধরে নবরাত্রি পালিত হয়।

বিশ্বাস করা হয় মহালয়ার দিন পূর্বপুরুষরা তাদের জীবিত বংশধরদের সাথে দেখা করেন ও আশীর্বাদ করেন। এইদিনের আচার-অনুষ্ঠান বংশধরদের জন্য সুরক্ষা ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। জ্যোতিষীদের মতে, পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি এবং তাদের বংশধরদের সমৃদ্ধি প্রদানের জন্য মহালয়ার আচার পালন করা হয়।

মহালয়ার দিন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বাড়িতে ‘দুর্গা সপ্তশতী চণ্ডী’ বা ‘চণ্ডীপাঠ’ করে থাকেন। পুজো কমিটিগুলি ‘ঘট স্থাপন’ বা ‘কল স্থাপন’ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।

বিশ্বাস বা পুরাণ যাইহোক না কেন এইদিন ভোরবেলায় আকাশবাণী কলকাতা থেকে সম্প্রচারিত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি একটা আলাদা তাৎপর্য বহন করে আনে। এটি শোনার জন্য আজও প্রতিটি বাঙালি পরিবার প্রবল উৎসাহে রেডিওর সামনে বসে থাকে। যতদিন বাঙালি সমাজের অস্তিত্ব বজায় থাকবে শত পরিবর্তনের মধ্যেও এই অনুষ্ঠানটি তার স্বতন্ত্রতা বজায় রাখবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments