eaibanglai
Homeএই বাংলায়দখলদার হঠিয়ে কি বাণিজ্যিক বহুতল মামড়ায়?

দখলদার হঠিয়ে কি বাণিজ্যিক বহুতল মামড়ায়?

সুইটি চন্দ্র, দুর্গাপুর: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এবার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে এডিডিএ। মঙ্গলবার সেই মোতাবেক শহরের মামড়া বাজার ও তার সংলগ্ন এলাকায় দখলদার চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করবে রাজ্য সরকারি সংস্থাটি।

কাজ শুরুর আগে গতসপ্তাহে এলাকায় দু দফায় মাইকিংও শুরু করেছেন এডিডিএ’র নগর পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী আধিকারিকেরা। তবে, এবারের অভিযান সম্ভবত: শুধুমাত্র মামড়া বাজার থেকে ফুলঝোড় এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে সংস্থা। শহরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার বা তার লাগোয়া এলাকায় নতুন করে দখলদারি হাঁটানোর অভিযানে নামার সাহস এখনি আর দেখাতে চাইছেনা সংস্থা, বলে একটি সূত্র জানায়।

আসানসোল- দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা হঠাৎ সিটি সেন্টার থেকে এভাবে হাতে গুটিয়ে নিল কেন? সংস্থায়ই এক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের ইঙ্গিত, “ওখানে অভিযান শুরু করলে অনেক রাঘব বোয়ালের স্বার্থে ঘা লাগতে পারে। তাই বুঝে শুনেই মাপজোক করে কাজ করা হচ্ছে।” তার কথায়,”আমাদের এখানে সব কাজই হয় ঊদ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক। তাই সেরকম সিদ্ধান্ত হলে তখন এসব কাজ করা হতে পারে। বুঝতেই তো পারছেন সব কিছু!”

টানা ৪০ বছর ধরে বিক্রয় লাইসেন্স নিয়ে মামড়া বাজার এলাকায় নিজের নিজের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন কয়েক ডজন দোকানদার। সম্প্রতি তাদেরকে বেআইনি দখলদার মনে করছে এডিডিএ। সংস্থা নগরায়নের স্বার্থে তাদেরকে উচ্ছেদ করতে চায়। সেই মর্মেই কলকাতা হাইওকোর্ট সম্প্রতি একটি নির্দেশও দিয়েছে। যার বিরুদ্ধে নতুন করে মামড়া এলাকার ৪৮ জন ব্যবসায়ী, বাসিন্দা ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

তাদের দাবি,”ওরা আসলে গা জোওয়ারি করছেন। কারণ, ওদেরই এক কর্তার এখানে শ্বশুরবাড়ি। তাই তিনি এবারে মামারবাড়ির আবদার খাটাচ্ছেন মামড়া বাজারে। আমাদের মতো ছোট গরীবদের উচ্ছেদ করে আসলে বেনামে উনি নাকি এখানে একটি বড় শপিং মল করবেন। তাই ওনাদের এত তোড়জোড়।” কিন্তু, কে সেই কর্তা? সে প্রসঙ্গে এলাকার ব্যবসায়ী কমল রায়চৌধুরী, সুশান্ত দাসেরা বললেন, “একটু ধৈর্য ধরুন, সময় হলে সবই সামনে আসবে।” আরেক ব্যবসায়ী তরুণ ভৌমিক বলেন, “সরকারি পদে বসে উনি এখন সবই গিলে নেবেন। কিছুই ছাড়বেন না। তার জন্য আমাদের মত দিন আনা দিনখাই লোকেদের ওপর বুলডোজার চালাবেন আমাদের দিদির পেয়ারের ঐ ভাই। কি আর করা যাবে?”

তাহলে ঠিক কবে থেকে উচ্ছেদ শুরু করতে যাচ্ছে এডিডিএ? সংস্থার এক সহকারী কার্যনির্বাহী আধিকারিক উৎপল মুখার্জী সোমবার বলেন, “আমরা এখনই উচ্ছেদ শুরু করছি না। তার আগে কারা কারা অবৈধ দখলদার তাদেরকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে মঙ্গলবার থেকে।” তিনি আরো বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনে আমরা ওখানকার ব্যবসায়ী, বাসিন্দাদের কাছ থেকে তাদের কথা শোনার জন্য শুনানীর ব্যবস্থা করবো। ওনারা ওনাদের স্বপক্ষে যা বলার বলবেন।”এ বিষয়ে এবার গোড়া থেকে আটঘাট বেঁধে গুছিয়ে বাগিয়ে নামতে চাইছে এডিডিএ। তবে, শহরের ঘিঞ্জি স্টেশন বাজার, বেনাচিতি বাজার বা প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টারে উচ্ছেদ অভিযান নয় কেন? জানতে চাইলে এডিডি এর আধিকারিক বলেন, “ওসব ওপর মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। বলতে পারছিনা।”

এডিডিএর একটি সূত্র জানায়, মামড়া এলাকায় নগরায়নের কাজে জোর দিতে চাইছে এডিডিএ। সেখানে আন্তর্জাতিক মানের রাস্তা এবং বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তুলবে সংস্থা। ওই বাণিজ্যকেন্দ্রটির জন্য জমিই কি তবে কায়দা করে কোন নির্দিষ্ট বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছে এডিডিএ?

মামড়াবাজারই শুধু নয়। স্থানীয় দক্ষিণ পল্লী, দুর্গাপুর সবজি বাজার গত ৩০ বছর ধরে সরকারি জমির ওপরই বিনা বাধায় চলে আসছে শুধু মাত্র ট্রেড লাইসেন্সের ওপর ভর করে। সে কথা কলকাতা হাইকোর্টে মোকদ্দমাকারী ব্যাবসায়ী সমীর দাস ও তার সতীর্থরা একটি আবেদনে নিজেরাই কবুল করেছেন।
গত ১০ই মার্চ, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহাও মোকদ্দমার রায়ে স্পষ্টতই নির্দেশ দিয়েছেন, “এডিডিএ আইনের যথাযত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবসার জায়গা থেকেদখলদার উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।” বিচারপতি সিনহার নির্দেশে আরো উল্লেখ করা হয়, “অভিযোগ করা হয়েছে যে ওখানে দোকানঘর গুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োজনীয় বিধান মোতাবেক দোকানদারদেরকে উচ্ছেদের কোন নোটিশই দেওয়া হয়নি সরকারি ভাবে এবং এক্ষেত্রে এডিডিএ তাৎক্ষণিক ভাবে কোন পদক্ষেপ নিতে পারে।” এদিকে, সোমবারই এডিডিএর এক অন্যতম বরিষ্ঠ আধিকারিক বলেন, “আমরা কোন তড়িঘড়ি করতে চাইছিনা। আমরা এখন দখলদার চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করব। তারপর ১৯৬২ সালের উচ্ছেদ আইন মোতাবেক যা যা করার করবো।” বিচারপতি সিনহা তার দেওয়া নির্দেশে আরো উল্লেখ করেছেন, “একটি আবেদন জমা করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে গত ২১ ফেব্রুয়ারি এডিডিএর চেয়ারম্যান ও প্রধান কার্যনির্বাহী আধিকারিকের কাছে ব্যবসায়ীরা বিষয়টি নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও, সংস্থা তার কোন প্রতিক্রিয়াই দেয়নি।”

সোমবার এডিডিএ অবশ্য মামড়া এলাকায় নির্মীয়মান বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সটির আসল মালিক কে, বা তার নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছেন সে বিষয়েও কোন উচ্চবাচ্চই করতে চায়নি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments