জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোটঃ- খাকি পোশাকের আপাত কঠিন হৃদয়ের অন্তরালে যে একটা মানবিক হৃদয় লুকিয়ে আছে গত কয়েক বছর ধরে বারবার তার প্রমাণ দিয়ে চলেছে রাজ্যের বিভিন্ন থানার পুলিশ আধিকারিক তথা শান্তি রক্ষী বাহিনী। এলাকায় শান্তি রক্ষার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকের রক্তের চাহিদা মেটানোর জন্য কখনো রক্তদান শিবিরের আয়োজন, কখনো দুঃস্থদের হাতে বস্ত্র তুলে দেওয়া – এযেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। ব্যতিক্রম নয় মঙ্গলকোট থানাও।
একপাশে কালী মন্দির, অন্যপাশে পীর পাঞ্জাতন বাবার মাজার – দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চলেছেন মঙ্গলকোট থানার আইসি পিণ্টু মুখোপাধ্যায়, সর্বদাই পাশে পেয়েছেন এলাকার জনপ্রিয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীকে। সবমিলিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপূর্ব বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের পুরাতন মঙ্গলকোট থানা প্রাঙ্গনে। সবার প্রচেষ্টায় প্রকৃত শান্তি সেখানে বিরাজ করছে। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। তাকেই অন্য তাৎপর্য দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হলো প্রাক দীপাবলীকে।
উত্তুরের শীতল বাতাস ইঙ্গিত দিচ্ছে শীত আসন্ন। শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য এলাকার অনেক দুস্থ মানুষের কাছে পর্যাপ্ত শীতের পোশাক বা কম্বল নাই। দুঃশ্চিন্তায় তাদের চোখে ঘুম নাই। ঠিক তখনই তাদের পাশে এসে দাঁড়ালো মঙ্গলকোট থানার শান্তি রক্ষী বাহিনী। এর আগেও একাধিকবার এই ধরনের ভূমিকায় তাদের দেখা গেছে। প্রকৃত অর্থে তারা হয়ে উঠেছে সমাজ বন্ধু।
তাদের পক্ষ থেকে ১০ ই নভেম্বর থানা প্রাঙ্গনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেড় সহস্রাধিক দুস্থ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় শীতের কম্বল। শীতের প্রাক্কালে কম্বল পেয়ে মানুষগুলি খুব খুশি।
এর আগে থানার পক্ষ থেকে গলায় উত্তরীয় পরিয়ে ও হাতে মেমেণ্টো তুলে দিয়ে আইসি পিণ্টু মুখোপাধ্যায় অতিথিদের বরণ করে নেন। প্রদীপ প্রজ্বলিত করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার আমনদীপ। তাকে সহযোগিতা করেন মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্যরা।
পুলিশ সুপার, বিধায়ক সহ প্রতিটি বক্তা মঙ্গলকোট থানার এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আগামীতেও এই ভূমিকায় তাদের দেখতে চান। স্বাগত ভাষণ দেন আইসি পিণ্টু মুখোপাধ্যায়।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বললেন – পড়াশোনা ও পেশাগত কারণে যখন কলকাতায় থাকতাম তখন মঙ্গলকোটের বাসিন্দা হওয়ার জন্য ওখানকার মানুষ আমার দিকে অবজ্ঞার আঙুল তুলত। কারণ একসময় এখানকার বাসিন্দারা বোমের শব্দ শুনে ঘুমাতে যেত এবং ভোরের পাখির ডাকের পরিবর্তে বোমার শব্দ শুনে তাদের ঘুম ভাঙত। আইসি পিণ্টু মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আজ সেখানে শান্তি বিরাজ করছে। তারপরও মাঝে মাঝে বধূ নির্যাতনের খবর তাকে ব্যথিত করে। পুত্রবধূকে নিজের কন্যার মত দেখার জন্য প্রত্যেকের কাছে তিনি হাত জোড় করে আবেদন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার আমনদীপ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ধ্রুব দাস, এসডিপিও কৌশিক বসাক, স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার, বিডিও অনামিত্র সোম, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সান্ত্বনা গোস্বামী সহ পঞ্চায়েত সমিতির বিভিন্ন কর্মাধ্যক্ষ এবং মঙ্গলকোট থানার সমস্ত পুলিশ আধিকারিক ও সিভিক ভলাণ্টিয়াররা। অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন মঙ্গলকোট শান্তি রক্ষী বাহিনীর সভাপতি সিরাজ চৌধুরী।