জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোটঃ- পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা বা লোকসভা – প্রতিটি ভোটের ইস্যু আলাদা। পঞ্চায়েত ভোট যেহেতু একেবারে প্রশাসনের নীচু তলার এবং সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগ আছে তাই এখানে সেইসব স্থানীয় এবং দৈনন্দিন সমস্যাগুলো বেশি গুরুত্ব পায় যেগুলো পঞ্চায়েতের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব। এইসব সমস্যার অন্যতম হলো রাস্তা।
চলাচলের পক্ষে ঠিক কতটা অনুপযুক্ত হলে সরকারি ভাবে তাকে বেহাল বলা যাবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটা মেরামতের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেবে – এই প্রশ্ন আজ পশ্চিম মঙ্গলকোটের চাণক অঞ্চলের রামনগর গ্রামের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একইসঙ্গে চাপা ক্ষোভে ফুটছে গ্রামের একাংশ।
চাণক অঞ্চলের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত টুইন গ্রাম রামনগর-মল্লিকপুর। প্রায় হাজার দু’য়েক মানুষ এই দুই গ্রামে বাস করে। গণপুর থেকে গ্রাম দু’টিতে যাওয়ার জন্য প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।
একটু বৃষ্টি হলে মনে হবে সরকারি উদ্যোগে মাছ চাষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মাছের ডিম ফোটানোর জন্য ছোট ছোট গর্ত করা হয়েছে। শুকনো থাকলে মনে হবে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বেরিয়ে থাকা ইঁট পাথরগুলো যেন সাইকেলের টায়ারগুলোকে খেতে আসছে। গ্রামের শ্মশানের কাছে রাস্তার উত্তরদিকের অনেকটা অংশ পুকুরের গর্ভে চলে গ্যাছে। একইভাবে দাস পাড়ার কাছে দক্ষিণদিকের পুকুর সংলগ্ন রাস্তার অংশটি ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে শুরু করেছে। বৃষ্টি হলে দাস পাড়র পুকুর সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয় রাস্তার দু’ধারের জমির মালিকরা অবৈধভাবে রাস্তা কেটে নেওয়ার জন্য রাস্তাটি ধীরে ধীরে প্রশস্ত আলে পরিণত হচ্ছে। এছাড়া বর্ষার সময় রাস্তার দু’ধারের ঘন বেনাগাছের জন্য সাপের আতঙ্ক তো আছেই।
এই রাস্তা ব্যবহার করে ওই দুই গ্রামের শতাধিক ছেলেমেয়ে গণপুর উচ্চ বিদ্যালয় যায়। দুটি গ্রামের বাসিন্দারা যায় গণপুরে অবস্হিত পঞ্চায়েত অফিসে, আপাতত বন্ধ থাকলেও আগে একশ দিনের কাজের টাকা তোলার জন্য জালপাড়ার গ্রামীণ ব্যাংকে যেত। অন্যদিকে দূরত্ব কম হওয়ার জন্য গণপুর, পালপাড়া সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এই রাস্তা ব্যবহার করে গুসকরায় বা বিভিন্ন হিমঘরে যায়।
অথচ দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি মেরামত করার বিষয়ে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কোনো অর্থবহ ভূমিকা না নেওয়ার জন্য ধীরে ধীরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। আসন্ন বর্ষাকালে এই বেহাল রাস্তা ধরে কিভাবে ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয় যাবে সেটা ভেবে চিন্তিত ওদের বাবা-মা।
গ্রামের বাসিন্দা পুষ্পা সরেন বললেন – আমাদের গ্রাম থেকে গণপুর যাওয়ার রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। বারবার বলা সত্ত্বেও কোনো কাজ হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত আমাদের পঞ্চায়েত ভোট বয়কট করার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পূজা, ফুলমণি, রূপালী, অঞ্জলিদের কণ্ঠে ঝরে পড়ে ক্ষোভ। তাদের বক্তব্য প্রধান, বিডিও সহ অন্যান্যরা এসে রাস্তার অবস্থা দেখে যাক কোন রাস্তা দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়।
রামনগরের বাসিন্দা ভুবন ঘোষ বললেন – সত্যিই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। সুতরাং ক্ষোভ হওয়া স্বাভাবিক। এলাকার জনগণের স্বার্থে দ্রুত রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সবচেয়ে আগে দরকার রাস্তাটি মেপে দখলীকৃত অংশ উদ্ধার করা। একই সুর শোনা গ্যালো অন্যান্যদের কণ্ঠে।
পঞ্চায়েতের অন্যতম সদস্য পতিতপাবন মণ্ডল বললেন – রাস্তাটির অবস্থা খারাপ এটা অস্বীকার করা যাবেনা। আমরাও চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত কিছু ব্যবস্থা করা যায়।