জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, মঙ্গলকোট, পশ্চিম বর্ধমান-: একদিকে চলছে আলোর রোশনাই, পেশাদার ও স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুজো মণ্ডপে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত হাজার হাজার ভক্তদের ভিড়, বসেছে মেলা। অন্যদিকে, কার্যত লোকচক্ষুর অন্তরালে, মঙ্গলকোটের গণপুর গ্রামের দশাদীঘি আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দারা গত দেড় শতাধিক বছর ধরে নিজেদের মত করে মেতে উঠেছে রটন্তী কালী পুজোয়। স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ থাকলেও বাহ্যিক আড়ম্বর নাই।
গণপুর ‘আদিবাসী তাড়ামা ক্লাব’ এর উদ্যোগে ২৮ শে জানুয়ারি একদিনের জন্য আয়োজিত এই পুজোর জন্য সকাল থেকেই আদিবাসীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে অন্য আনন্দ। সকাল থেকেই পুজো মণ্ডপের সামনে গ্রামবাসীদের ভিড়। হাত জোড় করে বসে আছেন মহিলারা। যদিও এখানে রটন্তী কালীর মূর্তি নাই। অন্যদিকে পুরোহিত মঙ্গল মাড্ডি আদিবাসী সমাজের রীতি মেনে করে চলেছেন রটন্তী মায়ের পুজো।
অন্যদিকে আদিবাসী পাড়ার কিশোরী কন্যা কবিতা, বর্ষা, শর্মিলি, অঞ্জলি, দুর্গা প্রমুখরা সঙ্গীতের তালে তালে মেতে ওঠে আদিবাসী নৃত্যে। সেটি দেখার জন্য ভীড় হয় যথেষ্ট।
একদিকে চলছে রান্না। বড় বড় ডেকচিতে ফুটছে খেচুড়ি। ওখানেও চরম ব্যস্ততা। একটু পরেই নিজেদের পাড়া সহ আশেপাশের বিভিন্ন আদিবাসী পাড়া থেকে প্রায় আড়াই সহস্রাধিক মানুষ পাশাপাশি বসে গণভোজনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। সেটা এক অসাধারণ দৃশ্য।
পুজোর আয়োজনে সমগ্র গ্রামবাসীর ভূমিকা থাকলেও সক্রিয় ভূমিকা নেয় লখু মাড্ডি, সোম মাড্ডি, ননী মুর্মু, কার্তিক সোরেন, সনু সোরেন, তাপস কর্মকার প্রমুখ।
সক্রিয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লখু মাড্ডি বললেন, শুনেছি দেড়-দু’শো বছর আগে এই পুজো শুরু হয়। আর্থিক কারণে তখন শুধু ধূপ, প্রদীপ দিয়ে পুজো হতো। গত ত্রিশ-বত্রিশ বছর ধরে আমরা বর্তমান প্রজন্ম গোটা পাড়া থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে পুজো করে থাকি। তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজ্যের মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী যদি আমাদের দিকে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে আমরা আরও একটু ভাল করে পুজোর আয়োজন করতে পারি।
মুখ্যমন্ত্রী কি তাদের আবেদনের মর্যাদা রাখবেন?