জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মেমারিঃ- যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, সেটা প্রচলিত অথবা সঙ্গীত বা নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে পারে, শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের আকর্ষণ হলো বার্ষিক অনুষ্ঠান। ভিন্ন ভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক মিলনে এই অনুষ্ঠান কার্যত পরিণত হয় মিলন অনুষ্ঠানে। একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবাই মিলে একঘেয়েমিকতার মধ্যে একটু আনন্দ উপভোগ করাও হয়। মেমারির
সুপরিচিত ‘আনন্দধারা’ নৃত্য প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক অনুষ্ঠানেও তার কোনো ব্যতিক্রম দেখা গেলনা।
হল ভর্তি অভিভাবক এবং শহরের নৃত্যপ্রেমী মানুষের উপস্থিতিতে গত ১ লা জুন সন্ধ্যায় ‘কৃষ্টি’ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার বাৎসরিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
বিভিন্ন ভঙ্গিমার নৃত্যের মাধ্যমে কিংবদন্তি নৃত্য শিল্পী উদয়শঙ্কর ও অমলাশঙ্করের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হয়। এরপর একে একে বিভিন্ন ঘরানার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক নৃত্য প্রদর্শন উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। প্রায় তিন ঘণ্টা ব্যাপী অনুষ্ঠানটি কখনোই দর্শকদের কাছে বিরক্তিকর হয়ে ওঠেনি।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল নৃত্যনাট্য ‘মেঘ বৃষ্টি’। সন্দীপন-সায়নির হাত ধরে ছোট মেঘ-বৃষ্টি যখন বড় মেঘ-বৃষ্টি হয়ে সৈকত-শিল্পীর কাছে পৌঁছায় – ছবির মত দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ওঠে দর্শকরা। যোগ্য সঙ্গত দিয়ে গেছে ঋতু, নন্দিনী, জয়দেব, সমাত্রী, সৌমি, শ্রেয়া, সঞ্চিতা, শেহনাজ, তনুশ্রী, ঈশানি, সঞ্চারীরা। সবার মিলিত চেষ্টায় অনুষ্ঠান অন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়। খুশিতে ভরে ওঠে দর্শকদের মন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নৃত্যবিশারদ অরুণিমা মুখার্জ্জী, বিষ্ণুপ্রিয়া বিশ্বাস, বিধান রায়চৌধুরী, সাহিত্যিক অশোক কুমার মুখার্জ্জী, মেমারি পুরসভার উপ-পৌরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্ত সহ শহরের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও নৃত্যপ্রেমী মানুষ।
প্রসঙ্গত বিভিন্ন কারণে সংস্কৃতির পীঠস্থান বাংলার বুক থেকে সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক সহ বিভিন্ন সুস্থ সংস্কৃতি যখন বিদায় নিচ্ছে তখন তেরো বছর আগে মেমারি শহর ও সংলগ্ন ছেলেমেয়েদের নৃত্যের প্রতি আকর্ষিত করার লক্ষ্যে শহরের সংস্কৃতি প্রেমী সৈকত চোঙদার ‘আনন্দধারা’ নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। পাশে পেয়ে যান সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষদের।
এত সুন্দর একটি স্বর্ণালী সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য ‘আনন্দধারা’ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুপ্রিয় বাবু বললেন – এক সময় সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র হিসাবে মেমারির একটা আলাদা ঐতিহ্য ছিল। বিভিন্ন সংস্থার হাত ধরে সেই ঐতিহ্য আবার ফিরে আসছে। আমাদের মত প্রবীণরা ফিরে পাচ্ছে বাল্যকালের স্মৃতি। স্মৃতিচারণে মত্ত হয়ে উঠলেন তিনি। শিশুসুলভ খুশিতে ভরে ওঠে তার মন।
‘আনন্দধারা’র কর্ণধার সৈকত বাবু বললেন- অনিবার্য কারণে মাঝে মাঝে বাৎসরিক অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলেও দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মেমারির বুকে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা করে চলেছি নৃত্যের মাধ্যমে। যেভাবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আশাকরি আগামীদিনে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হিসাবে মেমারি সমগ্র রাজ্যের কাছে এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।