সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- জয়দেবের রচিত গীতগোবিন্দ জগতের নাথ জগন্নাথের এতই প্রিয় যে যেখানেই গীতগোবিন্দ পাঠ করা হয় সেখানেই জগন্নাথ চলে যান সেই রস আস্বাদন করতে। এই ঘটনারই একটি সত্য কাহিনী আজকে বলবো। পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে কিছু দূরে মাঠের ধারে, মালিনীর বাসা। মালিনীর মেয়ে প্রতিদিন গীতগোবিন্দ পাঠ করে। সেই গীতগোবিন্দ শুনবেন বলে জগতের নাথ মালিনীর পেছন পেছন সেখানে গিয়ে হাজির হন। মালিনীর বাড়ি যাওয়ার পুরো পথে কাঁটা, নুড়ি ছড়ানো, প্রভুর কোমল চরণকমল তাই ক্ষতবিক্ষত হয়। তবু সমস্ত কষ্টকে উপেক্ষা করে তিনি চলে যান গীতগোবিন্দ শুনতে। পরদিন পাণ্ডারা মন্দিরের দরজা খুলে দেখেন প্রভুর চরণে রক্ত, প্রভুর কাপড়ে কাঁটা গাছের পাতা।
এই সংবাদ যখন রাজার কানে পৌঁছালো রাজা তখন উন্মাদের মতো মন্দিরে এসে অশ্রুস্বজল চোখে বললেন, প্রভু তুমি তো জগতের নাথ। কি এমন দুর্লভ বস্তু যার উদ্দেশ্যে তোমাকে এই যন্ত্রনা উপেক্ষা করে নিজে সেখানে যেতে হয়েছে তোমার এই ভৃত্য থাকতে? আহা…. মরি মরি প্রভু। তোমার শ্রীচরণে কতই না বেদনা বলে মাথা ঠুকতে লাগলেন। তখন দৈববাণী হল,“আমি বার্তাকুর ক্ষেতে গিয়েছিলাম। মালীর দুহিতা সেখানে গীতগোবিন্দ পাঠ করছিল আমি তাই শুনতে গিয়েছিলাম। আমি বড়ই তৃপ্তি পেয়েছি। শ্রীগীতগোবিন্দ যেখানেই পাঠ হবে আমি সেখানেই যাব।”
এই কথা শুনে রাজা আদেশ দিলেন কোন অপরিচ্ছন্ন স্থানে যদি গীত গোবিন্দ পাঠ করা হয় তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। তারপর রাজা জগন্নাথের মন্দিরে গীতগোবিন্দ পাঠের স্থায়ী ব্যবস্থা করেদিলেন। সেই থেকে আজও ত্রি-সন্ধ্যা জগন্নাথ মন্দিরে গীতগোবিন্দ পাঠ হয়। জয় জগন্নাথ।