সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- জয়দেবের গীতগোবিন্দ জগন্নাথের অতীব প্রিয়, এই গীতগোবিন্দ রচনার আগেই স্বয়ং জগন্নাথ তা পড়ে ফেলেছিলেন এবং তিনি লীলা করে জয়দেবকে দিয়ে সেই বই গঙ্গায় ফেলিয়েছিলেন আবার তিনিই সেই বই গঙ্গা পক্ষ থেকে তুলে দিয়ে জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দের মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠা করেন। হ্যাঁ বন্ধুরা পুরীর মহারাজা এবং গীতগোবিন্দের মধ্যে তুলনা আসলে জগন্নাথ গীতগোবিন্দ হাতে তুলে নেন এবং রাজার রচিত বই ফেলে দেন। জগন্নাথের গীতগোবিন্দ প্রীতির সেই কাহিনী আজকে বলবো।
জয়দেব গীতগোবিন্দের রচনা শেষ করবার পর তিনি সেই গ্রন্থ জগন্নাথকে উৎসর্গ করবেন বলে শিষ্য পরাশরকে নিয়ে শ্রীক্ষেত্র পুরীর দিকে রওনা দিলেন। যেতে যেতে তার রচিত পদ‘রতিসুখসারে গতমভিসারে’….এই শ্লোকটি দু-এক চরণ আবৃত্তি করতেই দেখলেন জঙ্গলের মধ্যে এক রাখাল সুর করে পদটি গাইতে গাইতে চলে গেলেন,এটি দেখে জয়দেব মনে মনে ভাবতে লাগলেন, আমার বহুকালের সযত্নে গ্রথিত গীতগোবিন্দম জগন্নাথের চরণে উৎসর্গ করার আগেই উচ্ছিষ্ট হয়ে গেল। কি করে আর জগন্নাথকে উৎসর্গ করবো? এই ভেবে মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে গ্রন্থখানি তিনি নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। সেই সময় জগন্নাথের দৈববাণী হলো,“জয়দেব তোমার গীতগোবিন্দ মৌলিক। তোমার রচিত গীত গোবিন্দ আগেই গ্রহন করেছিলাম শ্লোক লেখার সময়। গীত গোবিন্দ আমার বড়ই প্রিয় তাই রাখাল বেশে আমিই সেই গীত আস্বাদন করছিলাম।” ভগবানের এই দৈববাণী শুনে পদকর্তা জয়দেব কাতর কণ্ঠে উন্মাদের মতো কাঁদতে কাঁদতে বললেন, প্রভু গো আমি যে বড়ই অজ্ঞান, তোমার লীলা বোঝার সাধ্য যে আমার নেই। এই বলে মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়লেন। ভক্তের কাতর কান্না দেখে তরঙ্গায়িত নদীগর্ভ থেকে মকর বাহিনী মা গঙ্গা গীতগোবিন্দ খানি জয়দেবের হাতে ফিরিয়ে দিলেন- এই ঘটনার পর শ্রীক্ষেত্রে গীতগোবিন্দের প্রচার হয়ে গেলো, সকলেই গীতগোবিন্দের প্রশংসা করতে লাগলো,এইসব দেখে রাজার মনে হিংসা সৃষ্টি হলো। তিনি বললেন গীতগোবিন্দের নাম করে জয়দেব নিজের প্রতিষ্ঠা করেছে তাই এই গ্রন্থ জগন্নাথ স্বীকার করবেন না, এই গ্রন্থের মাহাত্ম্য কত খানি তা পরীক্ষা করবার জন্য জগন্নাথের এক হাতে নিজের রচিত গ্রন্থ আর এক হাতে গীতগোবিন্দ রেখে দিলেন রাজা, তখন রাজার গ্রন্থটি জগন্নাথের হাত থেকে পরে গেল আর গীতগোবিন্দ গ্রন্থটি জগন্নাথ বুকের কাছে ধরে থাকলেন।