সংবাদদাতা, আসানসোল:- উপনির্বাচনে জেতার পরে গত দুবছরে নিজের সংসদীয় এলাকার উন্নয়নে কি কি কাজ করেছেন ও তারজন্য কত টাকা পেয়েছেন, তার খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর প্রশংসা করলেন আসানসোলে সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আসানসোলের সার্কিট হাউসে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিলো। সেখানে তিনি বলেন, গত দুবছরে ( এপ্রিল ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৪) সাংসদ তহবিল থেকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের জন্য ১৩ কোটি ২২ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকার কাজ করতে পেরেছি। যার মধ্যে কিছু কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি কাজ চলছে। তবে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকে যখন যেভাবে আমি রোগীদের সাহায্যের জন্য সাহায্য চেয়েছি তা পেয়েছি। এটা আমার পরম সৌভাগ্য। দেশের অনেক সাংসদ হয়তো এই সুযোগ পাননি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আসানসোলের এক ক্যান্সার রোগীর জন্য সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আমি আলাদা করে সুপারিশ করেছিলাম। তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেই টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো দিয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রাইমিনিস্টার ন্যাশানাল রিলিফ ফান্ড বা প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিলের মাধ্যমে সাহায্য করতে গিয়ে দেখি আমার এই লোকসভা কেন্দ্রে মধ্যে বহু ক্যান্সার রোগী আছেন। যা, আমি ভাবিনি। এই কারণে আমার ইচ্ছে আছে আগামী দিনে আসানসোলে একটি মেডিকেল কলেজ ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরী করা। যেখানে ক্যান্সার রোগীদের বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। এই ত্রাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়ার জন্য আসানসোলের সাংসদের কাছে গত দুবছরে ১২২ জন আবেদন করেছিলেন। তারমধ্যে ৬৮ জনের আবেদন অনুমোদন পেয়েছে। সবমিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ৫১ জনকে ১ কোটি ১০ লক্ষ ৫০ হাজার ৯৭৭ টাকা পেয়েছেন।
সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা তার সাংসদ তহবিল থেকে যে কাজ আসানসোল লোকসভার ৭টি বিধানসভা এলাকার জন্য করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে আসানসোল উত্তরের জন্য।
রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটকের এই বিধান সভা ৫ কোটি ৪ লক্ষ, ৪৬ হাজার টাকা পেয়েছে। সবমিলিয়ে ৪১ টি কাজ হয়েছে আসানসোল উত্তর বিধান সভায়। এই বিধান সভার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ৭৮ লক্ষ টাকায় ১০০ কিলোওয়াটের সোলার এনার্জি ইন্সটলেশন।
সবচেয়ে কম দেওয়া হয়েছে রানিগঞ্জ বিধানসভায় ( বিধায়ক তৃনমুল কংগ্রেসের তাপস বন্দোপাধ্যায়) ৯১ লক্ষ ৮০ হাজার।
একইভাবে পান্ডবেশ্বর বিধানসভায় ( বিধায়ক পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) ১ কোটি ৭৫ লক্ষ।
কুলটিতে ( বিধায়ক বিজেপির ডাঃ অজয় পোদ্দার) ১ কোটি ৬২ লক্ষ ৯৬ হাজার।
বারাবনিতে(বিধায়ক আসানসোল পুরনিগমের মেয়র তৃণমূল কংগ্রেসের বিধান উপাধ্যায়) ১ কোটি ১৫ লক্ষ ৮০ হাজার।
জামুড়িয়ায় ( বিধায়ক তৃনমুল কংগ্রেসের হরেরাম সিং) ১ কোটি ৩০ লক্ষ ৪ হাজার।
আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার জন্য (বিধায়ক বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল) ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ২ হাজার টাকা।
এই প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, যেভাবে যখন যে বিধান সভা থেকে কাজের দাবি এসেছে, সেই দাবি মেনেই তহবিলের টাকা উন্নয়নের জন্য দেওয়া হয়েছে। সাংসদ তহবিলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২ কোটি ৬৪ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট বা শিক্ষার মানোন্নয়নে দেওয়া হয়েছে। এরপর ২ কোটি ৫৯ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা কমিউনিটি হল নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু, বিধায়ক হরেরাম সিং, আসানসোল পুরনিগমের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক।
এদিকে, আসানসোলের সাংসদের গত দুবছরের সাংসদ তহবিলের কাজের খতিয়ান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, সাংসদ টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই পক্ষপাতিত্ব করেছেন। যেখানে আসানসোল উত্তর বিধান সভা পেয়েছে ৫ কোটি টাকারও বেশি, সেখানে রানিগঞ্জ পেয়েছে ১ কোটিরও কম। কেন এমনটা হলো ? তা কি সাংসদ বলতে পারবেন ? তবে এই কথা আমরা বলতে পারি যে, আসানসোলের সাতটি বিধানসভার মানুষেরা সমানভাবে সাংসদ তহবিলের সুবিধা পাননি।