eaibanglai
Homeএই বাংলায়মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর 'নো এন্ট্রি' দুর্গাপুর ইস্পাত লিংক রোডে

মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর ‘নো এন্ট্রি’ দুর্গাপুর ইস্পাত লিংক রোডে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় যাতে শ্রমিকরা সরাসরি কম সময়ের মধ্যে ইস্পাত নগরী থেকে কাজে ইস্পাত কারখানাতে যোগ দিতে পারেন, সেই জন্য কয়েক দশক আগে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও ইস্পাত নগরীর মধ্যে একটি লিংক রোড নামক রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিদিন কয়েক হাজার ইস্পাত কর্মী দুই চাকা, চার চাকা নিয়ে ওই রাস্তার ওপর দিয়ে কারখানা ও তাদের বাসভবনে যাওয়া-আসা করেন। স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারাও এই লিংক রোডটি তাদের যাওয়া আসার জন্য ব্যবহার করে থাকেন স্বাচ্ছন্দে।

কিন্তু দৈনন্দিন পথ দুর্ঘটনায় খবরের শিরোনামে এসেছে এই রাস্তা। অভিযোগ প্রকাশো দিনের আলোতেই ভারী যানবাহন যেমন ডাম্পার, ট্রাক্টর, ট্রাক সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক পণ্যবাহী গাড়ি ওই রাস্তা ধরেই দুর্গাপুর ইসপাত নগরীর পেছন দিকে অবস্থিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে যাওয়া-আসা করে। স্বভাবতই ওই রাস্তার ওপরে পুলিশ গাড়ি নিয়ে নজরদারি চালানো হতো বহু আগে থেকেই। কয়েকদিন আগে থেকে ওই রাস্তার ওপর পাকাপাকি ভাবে একটি পুলিশ নাকা চেকপোস্ট তৈরি করা হয়েছিল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে। কিন্তু সোমবার মারমুখী জনতার কবলে পড়তে হলো সেই পুলিশ নাকা চেকিং ক্যাম্পটিকে। অভিযোগ পুলিশ কর্মীদের একাংশ নাকি ভারী যানবাহন রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে তোলা আদায় করছিলেন।

সোমবার এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় ইস্পাত কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় লিংক রোড এলাকা। সোমবার দুপুর দুটো নাগাদ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা থেকে ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পথে লিংক রোডের ওপর একটি ট্রাক্টরের চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু হয় সঞ্জয় চক্রবর্তী (৫২) নামের এক ইস্পাত কর্মীর। বাড়ি ফেরত উপস্থিত ইস্পাত কর্মীরা তৎক্ষণাৎ গুরুতর জখম অবস্থায় সঞ্জয় বাবুকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা মেন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী তার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এই দুর্ঘটনার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আশেপাশের এলাকার বাসিন্দা সহ ইস্পাত কর্মীদের একাংশ লিংক রোডের ওপর পুলিশকর্মীরা যে চেক পোস্টটি তৈরি করেছিলেন সেটি ভাঙচুর চালান। উত্তেজিত জনতা থেকে কোনরকম ছুটে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা পান পুলিশ কর্মীদের একাংশ। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দুর্গাপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে ও পরিস্থিতি আয়ত্তে আনেন। দুর্গাপুর ইস্পাত কর্মীদের একাংশ সরাসরি পুলিশের কর্মীদের তোলাবাজি কে এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেন।

অন্যদিকে স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগের সুরে বলেন, “দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার কর্মীদের জন্য নির্মিত এই রাস্তায় প্রথম চলাচল করার অধিকার আছে ইস্পাত কর্মীদের নিশ্চয়ই। কিন্তু প্রত্যেকদিন কাজে যোগ দেওয়ার সময় এবং কাজ থেকে ছুটি হয়ে বাড়ি ফেরার সময় ওই লিংক রোডটি কার্যত উদ্যশাসে ছুটে আসা গাড়ির মিছিল মনে হয়।” স্থানীয় বাসিন্দারা আরো অভিযোগ করেন, “ডিউটি যাওয়ার সময় সংখ্যায় অধিক থাকায় কর্মীরা বহুবার ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটিয়েও সহজেই এলাকা ছেড়ে বিনা বাধায় চলে যেতে সক্ষম হন।

সোমবার ইস্পাত কর্মী সঞ্জয় চক্রবর্তী মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসলো ইস্পাত কর্তৃপক্ষ। একটি সূত্র মারফত জানা গেছে এবার থেকে ভোর পাঁচটা থেকে রাত্রি এগারোটা অবধি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা মেন গেট থেকে কনিষ্ক মোড় অবধি লিংক রোডে ‘নো এন্ট্রি’ থাকবে। কোনরকম বাণিজ্যিক ভারী যানবাহনকে ওই ‘নো এন্ট্রির’ সময় চলাচল করতে দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে। দিন কয়েকের মধ্যেই ইস্পাত কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে লিংক রোড এর ওপরে যে অস্থায়ী পুলিশ চেক পোস্টটি করা হয়েছিল তা সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সোমবার ইস্পাত কর্মী সঞ্জয় চক্রবর্তী এর মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে ইস্পাত কর্তৃপক্ষের একটি জরুরী বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই এই ‘নো এন্ট্রির’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিনের এই জরুরি বৈঠক থেকে এও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে যে মৃত ইস্পাত কর্মী সঞ্জয় চক্রবর্তীর পরিবারের একজনকে অবিলম্বে চাকরি দেওয়া হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments