জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুপুরের অনুভূতি নিয়ে হাজির সকালের তাপমাত্রা। ৪০°সে. এর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ধীরে ধীরে সেটা ৫০°সে. এর দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছিল। কোন জেলা প্রথম হতে পারে সেটা নিয়ে চলছিল নীরব লড়াই। ওদিকে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর আসছিল। রাজ্যের উদ্বিগ্ন চিকিৎসককুল বারবার সতর্কবাণী শুনিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে আনা হয়। ফাঁকা রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল হয় নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে অথবা কার্ফু জারি হয়েছে!
অনেক ছদ্ম পরিবেশ প্রেমীর আবির্ভাব ঘটে। সমাজ মাধ্যমে বৃক্ষচ্ছেদনের কুফল নিয়ে তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুরু হয়। বৃক্ষরোপণের প্রতিজ্ঞা নিয়েও শুরু হয় প্রতিযোগিতা। ঠিক কোনটি বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময় সেটি নিয়েও পরামর্শ দেওয়া শুরু হয়। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি জনিত কারণে তাপমাত্রা কমে গেলে আগের আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা অন্য একটা যুৎসই টপিকসের অপেক্ষায় থাকি।যদিও প্রকৃত পরিবেশ প্রেমীরা নীরবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে।
আসলে মনোমত ইস্যু পেলেই আমরা হুজুগে মেতে উঠি। ভেড়ার পালের মত গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিই। পরে উত্তেজনা কেটে গেলে সেটা নিয়ে ভাবিনা। ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য’ করার পরিবর্তে সেটা কীভাবে আরও দূষিত করে তোলা যায় তারজন্য নতুন ভাবনায় মেতে উঠি। গাছ কেটে এসি কিনলেও পরিবর্তে গাছ লাগাই না।
সরকারি হিসাবে এই দেশে ৮ ই জুন থেকে বর্ষাকাল শুরু হবে। খবরে প্রকাশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করে গেছে। পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে সারাদেশে নির্দিষ্ট সময়ে তার আবির্ভাব ঘটবে। বলা যেতেই পারে বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময় সমাগত। অথচ এখনো এই নিয়ে সরকারি পর্যায়ে প্রস্তুতি চোখে পড়ছেনা। পড়বেই বা কিকরে, দেশের প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রীরা এখন ভোট নিয়ে মত্ত। এইসব ছোটখাটো(!) বিষয় নিয়ে ওদের ভাবার সময় কোথায়? স্বাভাবিক সময়েও কখনো পরিবেশের উন্নতি নিয়ে সক্রিয়ভাবে চিন্তা ভাবনা করেছে বলে শোনা যায়না!
তবে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সেজেগুজে মঞ্চে উঠে ভাষণ দিতে ভুল হয়না। আসলে এখানে কর্পোরেট সেক্টরের দশ লক্ষ কোটি টাকা কর মকুব করতে অসুবিধা না হলেও পরিবেশের উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ করতে সমস্যা হয়। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষও বৃক্ষরোপণ করতে ভুলে গেলেও বৃক্ষচ্ছেদন করতে ভুল করেনা। এইভাবেই বছরের পর বছর চলে আসছে। আবার যখন উত্তপ্ত হবে পরিবেশ তখন নতুন করে হাহুতাশ শুরু হবে কিন্তু পরিস্থিতির বদল হবেনা।