সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- আজ পান্ডব নির্জলা একাদশী। আজকের দিনে একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য শুনতে হয়। কিন্তু কী এই পান্ডব নির্জলা একাদশী? আমাদের সনাতন ধর্মে রয়েছে মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করলেন, হে জনার্দন! এখন জ্যৈষ্ঠ শুক্ল পক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপা পূর্বক আমার কাছে বলুন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন বললেন এই একাদশীর কথা মহর্ষি ব্যাসদেব বর্ণনা করবেন। কারণ তিনি সর্ব শাস্ত্রের অর্থ এবং তত্ত্ব ভালোভাবে জানেন। রাজা যুধিষ্ঠির তখন ব্যাসদেবকে অনুরোধ করলেন জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর কথা বলতে।
শ্রী ব্যাসদেব তখন বললেন, সে মহারাজ! তুমি যে সকল ধর্ম কথা শুনেছ এই কলিযুগের মানুষের ক্ষেত্রে সেই সমস্ত ধর্ম পালন করা অত্যন্ত কঠিন কিন্তু সামান্য খরচে এবং অল্প কষ্টে যে ব্রত সম্পাদন করলে মহাফল লাভ হয় সেই ব্রতের কথায় আজ তোমাকে বলব। তুমি উভয় পক্ষের একাদশী দিনে ভোজন না করে উপবাস ব্রত করবে দ্বাদশীর দিনে স্নান করে শুচি হয়ে তারপর পুজো এবং নিত্যদিনের কাজ করবে। মনে রাখবে অশৌচের সময়ও একাদশী ব্রত ত্যাগ করা উচিত নয়। যে সকল ব্যক্তি স্বর্গে যেতে চান তাদের সারা জীবন একাদশী ব্রত পালন করা উচিত। অত্যন্ত পাপকর্ম করা কোন ব্যক্তিও যদি এই ব্রত পালন করেন তাহলে তিনি যমের যাতনা থেকে মুক্তি পান।
শ্রী ব্যাসদেব যখন এই সমস্ত কথা বলছিলেন তখন ভীমসেন অশ্বত্থ পাতার মতো ভয়ে কাঁপতে শুরু করলেন। তিনি তখন ব্যাসদেবকে বললেন, হে মহাবুদ্ধি পিতামহ! মাতা কুন্তী, দ্রৌপদী, ভ্রাতা যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকুল , সহদেব এরা প্রত্যেকেই একাদশীর দিন ভোজন করেন না। আমাকেও অন্ন গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু দু:সহ ক্ষুধাযন্ত্রণার জন্য আমি উপবাস করতে পারি না। ভীমসেনের এই কথা শুনে ব্যাসদেব বললেন- যদি স্বর্গাদি দিব্যধাম লাভে তোমার একান্ত ইচ্ছা থাকে, তবে উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করবে না। এই কথা শুনে ভীমসেন বললেন- আমার নিবেদন এই যে, উপবাস তো দূরের কথা, দিনে একবার ভোজন করে থাকাও আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ আমার উদরে ‘বৃক’ নামে অগ্নি রয়েছে। ভোজন না করলে কিছুতেই সে শান্ত হয় না। তাই প্রতিটি একাদশী পালন করতে আমি একেবারেই অপারগ। হে মহর্ষি! বছরে একটি মাত্র একাদশী পালন করে যাতে আমি দিব্যধাম লাভ করতে পারি এরকম কোন একাদশীর কথা আমাকে নিশ্চয় করে বলুন। তখন ব্যাসদেব জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর কথা বলতে শুরু করলেন।
ব্যাসদেব বললেন, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে জলপান পর্যন্ত না করে সম্পূর্ণ উপবাস থাকবে। তবে আচমন ইত্যাদিতে দোষ হবে না। ঐদিন অন্নাদি গ্রহণ করলে ব্রত ভঙ্গ হয়। একাদশীর দিন সূর্যোদয় থেকে দ্বাদশীর দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জলপান বর্জন করলে অনায়াসে বারোটি একাদশীর ফল লাভ করা সম্ভব হয়। বছরের অন্যান্য একাদশী পালনে অজান্তে যদি কখনও ব্রতভঙ্গ হয়ে যায়, তা হলে এই একটি মাত্র একাদশী পালনে সেই সব দোষ দূর হয়। দ্বাদশী দিনে ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান কার্য সমাপ্ত করে শ্রীহরির পূজা করবে ও সদাচারী ব্রাহ্মণদের বস্ত্রাদি দানসহ ভোজন করিয়ে নিজে খাবার গ্রহণ করবে। এইভাবে একাদশী ব্রত পালনে যে প্রকার পুণ্য সঞ্চিত হয়, এখন তা শ্রবণ কর। সারা বছরের সমস্ত একাদশীর ফলই এই একটি মাত্র ব্রত উপবাসে লাভ করা যায়।
এরপর ব্যাসদেব বললেন, হে ভীমসেন! তোমাকে বহু কথা বলার আর প্রয়োজন কী? তুমি উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করবে না। যদি তাতে অসমর্থ হও তবে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীতে অবশ্যই নির্জলা উপবাস করবে। এই একাদশী ব্রত ধনধান্য ও পুন্যদায়িনী। যমদূতগণ এই ব্রত পালনকারীকে মৃত্যুর পরও স্পর্শ করতে পারে না। পক্ষান্তরে বিষ্ণুদূতগণ তাঁকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যান শ্রীভীমসেন ওই দিন থেকে নির্জলা একাদশী পালন করতে শুরু করেন তাই এই একাদশী ‘পান্ডবা নির্জলা একাদশী বা ভীমসেনী একাদশী’ নামে প্রচার লাভ করে।
এই নির্জলা একাদশীতে পবিত্র তীর্থে স্নান, দান, জপ, কীর্তন ইত্যাদি যা কিছু মানুষ করে তা অক্ষয় হয় এবং যে ব্যক্তি ভক্তিভরে এই একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করেন তিনি মৃত্যুর পর বৈকুন্ঠধামে গমন করেন। হরি বোল। হরে কৃষ্ণ। কৃষ্ণায় বাসুদেবায় নম।




