স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর:- সিপিএমের পাঁক ঠেলে বেলা গড়াতেই বেরিয়ে আসছেন পঙ্কজ রায় সরকার। তার মিছিল মিশে যাচ্ছে সোজা ঘাসফুলের ভরা সবুজ বাগানে। তাও আবার এমন দিনে, শহর যেদিন তার প্রিয় রং লাল হলুদ মোড়া – কি অদ্ভুত সুন্দর সমাপতন!
তবে, দলের এই মাঝারি ইন্দ্রপতনে সিপিএমের বেশির ভাগ নেতাই শনিবার রাত পর্যন্ত তাদের গোঁ বজায় রেখে তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছেন, “এসব প্রতিক্রিয়াশীল প্রচারকে বিশ্বাস করিনা। এটাও আসলে বিজেমুলের নতুন খেলা।” সিটুর ইস্পাতের জয়েন্ট সেক্রেটারি সৌরভ দত্ত শনিবার সন্ধ্যায় বললেন, “একজন প্রকৃত কমিউনিস্ট কখনও তৃণামূল কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেনা। তাই, পঙ্কজও যাচ্ছেনা। এসব উড়ো কথা।”
আসলে, সিপিএম বুঝে উঠতেই পারছেনা, চোরাবালির মতো কেমন করে ধ্বংসস্তূপের ‘গ্রাউন্ড জিরো’ থেকেও তাদের পায়ের তলা থেকে রোজ মাটি সরে যাচ্ছে!
রবিবার পঙ্কজের হাতে পতাকা তুলে দিতে তৃণমুল কংগ্রেসের তিন তিনজন মন্ত্রী, দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি তো বটেই, বাকি যারা ‘অবাক বিস্ময়ে’ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে যাওয়া লোকজন, তারাও ঊর্ধগগণে দুহাত তুলে দলের কাছে নিজেদের পয়েন্ট বাড়াতে হাজির। এক টিএমসি নেতা বলেন, “যেটুকু জেনেছি, উনি মেয়র হবেন, বা আই এন টি টি ইউ সি’ র জেলার সর্বোচ্চ পদে বসবেন, নয়তো বা ২০২৬’ র এমএলএ। আসলে, ওনাকে যোগ্য আসন দিতে নাকি ওপর মহলের আদেশ আছে।” এবিষয়ে তৃণমুলের জেলা সভাপতি নরেন চক্রবর্তী নিজের মুখে কিছু না বলে, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়েছেন।
শহরের দুর্গাপুর হাউস থেকে মিছিল করে অরবিন্দ এভিনিউ তে টিএমসি’র জেলা অফিসে গিয়ে অরূপের হাত থেকেই যে পঙ্কজ জোড়াফুলের পতাকা হাতে তুলে নেবেন – এটাও ছিল ওপরতলার হুকুম।
পঙ্কজ কি বললেন?
আসলে গত প্রায় ছ’মাস যাবৎ সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা নেতৃত্বই শুধু নয়, রাজ্য নেতৃত্বের ভারি ভারি শীর্ষ নেতাদের সাথে কিছু অস্বস্তিকর ইস্যুতে তার দূরত্ব ক্রমশই বাড়ছিল। যা শেষে তাকে লাল জামাটা খুলে ঘাসফুলের জ্যাকেট পরতে নাকি বাধ্য করলো। পঙ্কজ শুধু বললেন, “আমি সব কথাই বলবো রবিবারের পরে। আমার একটাই লক্ষ্য দুর্গাপুরের উন্নয়ন।”
আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার নতুন চেয়ারম্যান কবি দত্ত’র মাধ্যমে তার বন্ধু, সভাপতি নরেনের কৌশলী চালই শেষপর্যন্ত সিপিএমের জনপ্রিয় মুখ, জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পঙ্কজকে নতুন উদ্যমে শহরে, জেলায় ঘাসফুল চাষ করতে উৎসাহিত করেছে, বলে ওয়াকিবহল জানিয়েছে। এর জন্য দুর্গাপুরে অবস্থানকালে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও জেলার নেতাদের সাথে আলাদা করে বৈঠকও করেছিলেন, বলে জানা যায়।