eaibanglai
Homeএই বাংলায়মন্ত্রীর হাতধরে পদ্ম ফুটলো জেলার ঘাসফুলে

মন্ত্রীর হাতধরে পদ্ম ফুটলো জেলার ঘাসফুলে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- নামের অর্থ পদ্ম, কিন্তু, মন্ত্রী, সান্ত্রী নিয়ে পঙ্কজ জমিয়েই যোগ দিলেন ঘাসফুলের সবুজ দুনিয়ায়। রবিবারের বিকেলে।

রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, সদ্য নির্বাচিত সাংসদ কীর্তি আজাদ এদিন পঙ্কজকে তৃণমুল কংগ্রেসে স্বাগত জানিয়ে তার হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন। পঙ্কজ এদিন শহরের দুর্গাপুর হাউস থেকে মিছিল করে অরবিন্দ এভিনিউ’র জেলা টিএমসি অফিসে পৌঁছন। সাথে ছিলেন ১৮ জন সিপিএমের যুব ফেডারেশনের সদস্য ও ৫ জন সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য। হই হই করে টিএমসি সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ধ্বনি করতে করতে চড়া রোদ উপেক্ষা করে ঘর্মাক্ত মিছিল যখন দলীয় দপ্তরে পৌঁছয়,তখন সেপাড়ার অনেকই গায়ে চিমটি কেটে দেখেন – যা দেখছেন, তা সত্যি নাকি দিবাস্বপ্ন!

গোটা যোগদানের প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেন তৃণমুলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। মন্ত্রী অরূপ বলেন, “বিজেপি, সিপিএমের বহু মানুষ আমাদের দলে আসতে চাইছেন। দলনেত্রীর অনুমোদন মিললে, সকলকেই নেওয়া হবে, একে একে।” পঙ্কজদের বিরূদ্ধে এতকাল ক্রমাগত লড়াই করে দলের দুর্দিনে সংগ্রাম করা টিএমসি কর্মী, সমর্থকেরা সিপিএম নেতার এই যোগদানে কি বিরক্ত হবেন, অন্য রাস্তা দেখবেন – এই প্রশ্নের জবাবে অরূপ বলেন, “না। আমরা সবাই দলনেত্রীর নির্দেশে কাজ করি। ওটাই আমাদের কাছে বেদবাক্য। তাই, এরকম কিছু হবার কথা নয়।”

যোগ দিয়ে পঙ্কজ রায় সরকার বললেন, “সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে রুখতে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে আপসহীন লড়াই, তাকে এতদিন দুর থেকে শ্রদ্ধা করেছি, এবার সক্রিয় ভাবে তার সাথী হয়ে ময়দানে নামলাম। অনেক হিসাব নেওয়ার আছে। অনেক জবাব দেওয়ার আছে। নিজের জন্য কোনো প্রত্যাশা নিয়ে নয়, এখানে এলাম প্রকৃতই মানুষের জন্য, বিশেষতঃ প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করতে।” এদিন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী লক্ষীর ভান্ডার, স্বস্থসাথী প্রকল্পের যে বিরুদ্ধাচরণ তার পুরোনো দল করেছে,তাকে নস্যাৎ করে দাবি করেন, “অমর্ত্য সেনের মতো পণ্ডিত প্রান্তিক মানুষের অবস্থার উন্নয়নের যে দিশা দিচ্ছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের দিশাও সেরকমই। সিপিএম সেসব না বুঝে নিছক রাজনৈতিক স্বার্থে মানব কল্যাণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চায়। আমি বারে বারে তার বিরোধিতা করে ওদের কাছে খারাপ হয়েছি।”

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নিরুপম সেনের এক কথায় ইসিএলের পাকা চাকরি ছেড়ে সিপিএমের হোলটাইমার হয়েছিলেন পঙ্কজ। তার সেই শ্রেণী সংগ্রামের দলের বিরুদ্ধেই একরাশ ক্ষোভ উগরে তৃণমূলে যোগ দিলেন পঙ্কজ। তার আগেই, মুখরক্ষার জন্য পঙ্কজকে নিয়ম মাফিক বহিষ্কার করে সিপিএম। তবে, বহিষ্কারের আগেই পঙ্কজ অবশ্য নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে। রবিবার সকালেও তিনি দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ ইউনিয়নের পদ থেকেও ইস্তফা দেন।

দলের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্যের দায়িত্বের পাশাপাশি সিপিএমের আইটি সেলের দেখাশোনা করতেন পঙ্কজ। সেই সমাজমাধ্যমে গতকাল দলের বিরুদ্ধে কার্যতঃ যুদ্ধঘোষণা করেন পঙ্কজ। সেখানে তিনি লেখেন, ”নিস্তব্ধতা বলে এই ভূদেশে কিছু আছে না কি?” অন্য দিকে, রবিবার দীর্ঘ বৈঠকের পর জেলা সিপিএমের অন্যতম মুখ পঙ্কজকে তার দল বহিষ্কার করে। এ নিয়ে জেলা কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ”দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকারকে বহিষ্কার করা হল।” তাঁর দাবি, ”নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের যে ‘পলিসি’ তার বিরোধিতা করছেন উনি।” অর্থাৎ, দলের কর্মসূচির বিরোধিতা করছেন।

এদিকে, এদিন পঙ্কজের তোলা একটি খোঁচার প্রস্ন – ‘গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি সহ আরো কয়েকজন কেনো দিলীপ ঘোষের সাথে দেখা করেছিলেন?” সেই প্রশ্নকে ঘিরে সন্ধ্যায় ফের গরম হয় শিল্প শহরের রাজনীতির হাওয়া। সিপিএম এ নিয়ে মুখ না খুললেও, বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী চন্দ্রশেখর ব্যানার্জী পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, “উনিই এবার সিপিএমের ভোট টিএমসি তে নিয়ে গিয়ে এবার সরাসরিই ওদের দলে যোগ দিলেন।” তার আরো দাবি, “সবাই ভেবেছিল বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে, তাই গৌরাঙ্গ এক নন, অনেকেই লাইন লাগিয়েছিলেন।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments