সংবাদদাতা, বর্ধমান:- বুধবার সন্ধ্যায় বর্ধমান শহরের পারবীরহাটা এলাকায় বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের প্রচার মিছিলকে কোনো অনুমতি না থাকায় পুলিশ আটকানোর চেষ্টা করলে বাধে ধুন্ধুমার। আর এরপর বৃহস্পতিবার সকালে বড়নীলপুর বটতলা মোড়ে চা চক্রের অনুষ্ঠানে বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিত তা-এর সঙ্গে কথোপকথনে পুলিশকে বেলাগাম ও কদর্য ভাষায় আক্রমণ করলেন দিলীপবাবু। পুলিশের পারমিশন না দেওয়া নিয়ে দিলীপবাবু বলেন, “ওরা আগে থেকেই বারণ করে দিচ্ছে। রোজ এসব ছেড়ে দিয়ে থানা, বিডিও, ডিএম ঘেরাও করব আর কিছু করবো না। শেষের দিকে ওর দম বন্ধ করে দেবো, শালাদেরকে ঘর থেকে বেরোতে দেবো না। কেমন চামচাগিরি করে দেখবো।”
এই সময় এক বিজেপি কর্মী দিলীপবাবুকে বলেন,” আইসি বলেছেন থানার পারমিশন নেই।” এরপরেই ক্ষীপ্ত দিলীপ ঘোষ বলেন, “ওর বাপের জমিদারি নাকি, জুতিয়ে লম্বা করব ওকে,আই সি হয়েছে। শালা কাপড় খুলে দেবো চৌরাস্তায় নিয়ে এসে। দিলীপ ঘোষ পাঁচ বছর এখানে থাকবে, ঘর থেকে বের হতে দেবো না ওকে।” অভিজিত তাকে তিনি বলেন, “লোক পাঠাও, তুমি নিজে যাও, পারমিশন দেবেন কিনা জিজ্ঞাসা করো। আর বলো দিলীপ দা করবে কিন্তু, পারলে আটকান। চমকিয়ে কথা বলো। পুলিশ কি ভদ্রলোক নাকি, ছোটলোকদের সাথে যেভাবে কথা বলতে হয় পুলিশের সাথে সেভাবে কথা বলবে। সব কটা তোলাবাজ, যত দাগি, পুলিশ সবচেয়ে বড় ক্রিমিনাল আজ পশ্চিমবাংলায়। তাদের যদি ভালো কথা বলো হবে না। নিজেরা কোনদিন নিয়ম মানে না, আমি কেন নিয়ম মানবো। দরকার পড়লে তুমি আজ থানায় যাও বা ফোন করো। দিলীপ দা বলেছে আজ যা প্রোগ্রাম আছে দিলীপ দা সব প্রোগ্রাম করবে,ক্যানসেল করবে না। আপনারা কি করবেন আপনারা ঠিক করুন, এই ভাষায় কথা বলতে শিখুন। আর আমি করবো পারলে আমাকে আটকান। কিছু দাগী আসামি আছে টিএমসির যাদের নামে ক্রিমিনাল কেস আছে,তাদের অ্যারেস্ট করছে না, আমাদের লোকেদের আটকাচ্ছে। আমি ডিএম এসপি দুজনাকেই মেইল করেছি, এটা করুন নাহলে সব ছেড়ে দিয়ে আমি আন্দোলন করবো আর কোন কাজ করতে দেবো না, সমস্ত রাস্তা ব্লক করে দেবো। বাড়িতে লিফলেট দিচ্ছে আর আই সি এসে জিজ্ঞেস করছে, পারমিশন নিয়েছেন? শালার বাপের জমিদার, তার পারমিশন নিতে হবে লোকের বাড়িতে গেলে। আমি বাজারে বেরিয়ে দোকানদারের সঙ্গে কথা বলবো তার পারমিশন নিতে হবে? শালা কোথায় লেখা আছে। পঞ্চায়েত লড়তে পারবে না, আমি দিলীপ ঘোষ এমপি হয়েছি, এমএলএ হয়েছি। আমাকে আইন শেখাচ্ছে নাকি? আমিও আইন শেখাতে জানি।”
বিজেপির এক কর্মীর মেরে হাত ভাঙা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পুলিশ বলছে হাত ভাঙ্গাটা দেখাবে না,তুমি যে তিন জনের নাম দিয়েছো দুজনের নাম উইথড্র করে নাও একজনের নাম বলো। এই কথা শুনেই দিলীপ ঘোষ বলেন, “আইসি কত বড়ো চামচা হয়েছে দেখছি কি করে সারা জীবন চাকরি করে। আইসিকে রাস্তায় আটকাবো লোক দিয়ে, রাস্তায় বেরোলেই ওকে আটকাবো, গাড়ি থেকে বের করে ওর কাপড় খুলবো। দিলীপ ঘোষকে ও চেনে না এখনো। বাপের জন্মে দেখেনি তো? ভাবছে এই চামচা বেলচা, বালি চোরগুলো নেতা হয়ে গেছে। ওকেই টার্গেট করব এখন। ওকে বলে দেবেন যেন রাস্তায় না বেরোয়, দিলীপ ঘোষ তোর প্যান্ট খুলে নেবে, চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে। পারলে কমপ্লেন করুন ইলেকশন কমিশনে গিয়ে। ও ভাবছে এক মাস দেড় মাস পরে দিলীপ ঘোষ চলে যাবে তো। দিলীপ ঘোষ পাঁচ বছর থাকবে। রাস্তায় জুতোপেটা করবো, আর করেওছি, মুখে বলে না। আমি ভদ্র আছি বলে ভাববে যা ইচ্ছে তাই করে নেবে। মমতা আসুক আর অভিষেকই আসুক ওরা চলে যাবে। কিন্তু দিলীপ ঘোষ বর্ধমানেই থাকবে যাবে। তোর কোন মা বাবা বাঁচায় আমি দেখে নেবো। আর এই আইসিকে আমি অন রেকর্ড বলছি, তোর প্যান্ট যদি না খুলেছি আমার নাম দিলীপ ঘোষ নয়।”
লেখার অযোগ্য ভাষায় আক্রমণ করে দিলীপবাবু বলেন, “একবার রাস্তায় দেখিয়ে দেবেন তো যে ঐ লোকটা আইসি। ও কি করে চাকরি করে? ওর রাস্তায় বেরনো না আমি বন্ধ করে দিই। কালতো ট্রেলার হয়েছে। দেখুন না থানা থেকে পুলিশকে বের হতে দেবো না আমি। সারাদিন লোকজন নিয়ে বসে থাকবো ওখানে,আমার প্রচার হয়ে গেছে আর দরকার নেই। এস আই ও নাকি খুব বড় হিরো এখানকার, তাকেও দেখব আমি কতদিন চাকরি করে,সে আমাদের ক্লাস নিচ্ছে আর বালিওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। এস আই, সি আই সবকে আমি দেখবো,সুব্রত দেওয়ান খুব বড় হিরো, দেখছি কত খেয়েছিস কাটমানির রক্ত সব বেরোবে।”
এরপর জেলা সভাপতিকে বলেন, “কমপ্লেনগুলো করো,সব নাম দিয়ে করো,সবার নামে কমপ্লেন করো ইলেকশন কমিশনকে,দরকার পরে পুলিশ অফিসারের নামে। একটাও যেন তোলাবাজি করতে না পারে। যা আছে সব কমপ্লেন করো। কোনো কমপ্লেন আজ অবধি হয়নি ইলেকশন কমিশনের কাছে। সব করব, পুলিশ, এসআই সবার নাম দিয়ে ইলেকশন কমিশনে কমপ্লেন করবো।”